শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০১:২৫ পূর্বাহ্ন

মৌসুমে লবণ উৎপাদনে রেকর্ড

মৌসুমে লবণ উৎপাদনে রেকর্ড

অনলাইন বিজ্ঞাপন

 

 

ওয়াহিদুর রহমান রুবেল।।

তিব্র দাবদাহে মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই কক্সবাজারে রেকর্ড পরিমাণ ২২ লাখ ৩৪ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন করেছে প্রান্তিক চাষিরা। বৃষ্টিপাতহীন সপ্তাহ পার করতে পারলে লক্ষ্যমাত্র ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে এবারে লবণ উৎপাদন গত ৬৪ বছরের ইতিহাসকে পেছনে ফেলেছে। ফলে বাহির থেকে আমাদানির প্রয়োজন হবে না। আর চাষিরা বলছেন লবণের নায্যমূল্য পেলে ভবিষ্যতে চাষে আগ্রহী হবে তারা। লবণের রেকর্ড উৎপাদনের কথা স্বীকার করেছেন বাংলাদেশ লবণ শিল্প উন্নয়ন কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কক্সবাজার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলার টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, পেকুয়া, মহেশখালী, ঈদগাঁও, চকরিয়া, কুতুবদিয়া ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ৬৮ হাজার ৩০০ একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। ৬ মে পর্যন্ত উৎপাদন মৌসুমে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ লাখ ২৮ হাজার টন। এরই মধ্যে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ ২২ লাখ ৩৪ হাজার টন। যা অতীতের সব ইতিহাসকে পেছনে ফেলেছে। অথচ গেল বছর ৬৬৪২৪ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছিল ২২লাখ ৩৩ টন। চলতি লবণ মৌসুমে লবণ চাষির সংখ্যা ৩৯ হাজার ৪৬৭ জন, যা গত বছর ছিল ৩৭ হাজার ২৩১ জন। ফলে গেল বছরের তুলনায় এ বছর লবণ চাষির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ২ হাজার ২৩৬ জন।

অনুকূল আবহাওয়া ও লবণের নায্যমূল থাকায় এবারে লবণ চাষ বেশি হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। চাষিদের নিরাপত্তা, লবণ আমদানি বন্ধ এবং নায্যমূল্য পেলে ভবিষ্যতে আরও বেশি লবণ চাষ হতে পারে বলেও জানান তারা।

মহেশখালী কালারমার ছড়ার উত্তর নলবিলার লবণচাষী আব্দু রহিম বলেন, একদিকে যেমন বৃষ্টি নেই তেমনি অন্যদিকে তীব্র রোদের ফলে লবণ উৎপাদন বেশি হয়েছে। এতে আমরা অনেক খুশি।

বড় মহেশখালীর বড় দিয়ার লবণ চাষী নজরুল ইসলাম বলেন, জমির ইজরা, পলিথিন ও শ্রমিকের মূল্য চড়া হলেও লবণ উৎপাদন বেশি হওয়ায় লোকসানে হাত থেকে বাঁচা যাবে। মৌসুমের শুরুতে লবণের দাম ভাল থাকলেও উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম নিম্নগামী বলে জানান তিনি।

কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডি ইউনিয়নের চাষি গিয়াস উদ্দিন ও খুরুশকুলের চাষি ইদ্রিস মিয়া বলেন, মৌসুম শেষ হতে আরও সপ্তাহ মতো সময় রয়েছে। আশা করছি এ সময়ে আরও লবণ উৎপাদন করতে পারবো। ভাল দামের আশায় অনেক কৃষক মাঠেই লবন মজুদ করছে বলে জানান তারা।

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, টানা দাবদাহ পরিস্থিতিতে টেকনাফে লবণের বাম্পার উৎপাদন হচ্ছে। তবে মৌসুমের শুরুতে যে দাম ছিল এখন কমে তা প্রতি মণ লবণ ৩০০ টাকা হয়েছে। এতে চাষিরা কিছুটা হতাশ বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ লবণ চাষী পরিষদের আহ্বায়ক সাজেদুল করিম জানান, এ বছর চাষীরা রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদন করেছে। তাই লবণ আমদানিরও প্রয়োজন পড়বে না। আশা করছি চাষিরাও নায্যমূল্য পাবে।

বিসিক লবণ উন্নয়ন প্রকল্পের মাঠ পরিদর্শক মো. ইদ্রিস আলী বলেন, ৬৪ বছরের মধ্যে এবার রেকর্ড লবণ উৎপাদন যেমন হয়েছে, ঠিক তেমনি দৈনিক গড়ে লবণ উৎপাদনও হচ্ছে রেকর্ড পরিমাণ। আগে যেখানে দৈনিক গড়ে সর্বোচ্চ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন লবণ হয়েছে, সেখানে এই রেকর্ড ছাড়িয়ে দৈনিক গড়ে ৩৯ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হচ্ছে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কক্সবাজার লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয়ের উপ-েমহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, চলতি সৌমুমে আমাদের লবন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র ছিল ২৫ লাখ ২৮ হাজার টন। এরই মধ্যে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত লবন উৎপাদন হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ ২২ লাখ ৩৪ হাজার টন। যা অতীতের সব ইতিহাসকে টপকিয়েছে। আবহাওয়া ঠিকঠাক থাকলে কিংবা বৃষ্টিপাত না হলে মৌসুমের শেষ সময় পর্যন্ত আরও প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ টন লবণ উৎপাদন হতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি।

তিনি বলেন, গেল মৌসুমে লবণের দাম ভাল থাকায় চাষিরা এ মৌসুমে আরও বেশি জমিতে চাষাবাদ করেছে। গেল বছর ৬৬ হাজার ৪২৪ একর জমিতে লবন উৎপাদন হয়েছিল ২২লাখ ৩৩ টন। কিন্তু চলতি মৌসুমে চাষের জমি বৃদ্ধি পেয়ে ৬৮ হাজার ৩০০ একর হয়েছে। ইতিমধ্যে লবন উৎপাদন রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। অফিসিয়ালি লবন উৎপাদন মৌসুম ৬ মে পর্যন্ত হলেও বৃষ্টিপাত না হলে সিজন আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
Desing & Developed BY MONTAKIM