১৭ সেপ্টেম্বর আরব নিউজে প্রকাশিত মিগদাদের কার্টুন
ছেলেটির নাম আহমেদ মোহাম্মদ। সে ইঞ্জিনিয়ারিং ভালোবাসে। দুই চোখ ভরে স্বপ্ন দেখে অনেক বড় হওয়ার। তাই তো বাসায় বসে নিজের উদ্ভাবনী দক্ষতায় বানিয়ে ফেলল ‘কুল ক্লক’ নামের ঘড়ি। পরের দিন ক্লাসে বন্ধুদের চমকে দেবে এ প্রত্যাশায় ক্লাসে নিয়ে এলো ঘড়িটি। প্রিয় একজন শিক্ষককে ঘড়িটি দেখানোর পর তিনি ঘড়িটির প্রশংসা করলেন; কিন্তু অজানা আশঙ্কায় ঘড়িটি লুকিয়ে রাখতে বললেন। কেন যেন তার আশঙ্কাটিই সত্যি হয়ে গেল। অন্য একজন শিক্ষক ঘড়িটি দেখে ফেলার পর বোমা মনে করে স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানাল। স্কুল কর্তৃপক্ষ ছেলেটিকে পুলিশে ধরিয়ে দিল।
পুলিশ এসে ছেলেটির কোমল দুটি হাতে হাতকড়া পরিয়ে আটক করে নিয়ে গেল। ছেলেটির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হলো। যদিও পরে বিপজ্জনক কিছু না পেয়ে ভুল স্বীকার করে ছেলেটির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে, স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তকে সঠিক ছিল বলে দাবি করেছে।
এদিকে স্বয়ং বারাক ওবামা ছেলেটিকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ফেসবুকের কর্ণধার মার্ক জুকারবার্গ তাকে ফেসবুকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। হিলারি ক্লিনটনও তাকে উৎসাহ জুগিয়েছেন।
যে যুক্তরাষ্ট্র নিত্যনতুন প্রযুক্তির আবিষ্কারের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে, সে দেশে এরকম ঘটনা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তৈরি করেছে। সে দেশে সংখ্যালঘু মুসলমানদের সঙ্গে বৈরী আচরণের রেকর্ড থাকায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, ছেলেটি মুসলমান হওয়ার কারণেই কি এ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে?
আমেরিকা নিকট অতীতে নামের শেষে ‘খান’ শব্দটি থাকায় বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খানকে বিমানবন্দরে হেনস্তা করেছিল। যার প্রতিবাদে ‘মাই নেম ইজ খান’ চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছিল। যে সিনেমার ‘মি. প্রেসিডেন্ট, মাই নেম ইজ খান আই অ্যাম নট আ টেরোরিস্ট’- এ সংলাপটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। বাংলাদেশের বিখ্যাত মানবতাবাদী দার্শনিক ড. আমিনুল ইসলামকে আমেরিকার এয়ারপোর্টে নামের শেষে ‘ইসলাম’ থাকায় জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত ইসলাম প্রচারক ড. জাকির নায়েককেও বেশ কয়েকবার আমেরিকার এয়ারপোর্টে হেনস্তার স্বীকার হতে হয়েছে।
আমেরিকার মতো উন্নত একটি দেশ কেন এ ধরনের আচরণ বারবার করছে? ইসলামকে শান্তির ধর্ম হিসেবে স্বীকার করে ২০১০ সালে মিসরের কায়রোতে ঐতিহাসিক ভাষণসহ রমজানে হোয়াইট হাউসে ইফতার পার্টিতে বারাক ওবামার বক্তব্য মুসলমানদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছিল। তাই এরকম ঘটনাগুলো মুসলমানদের জন্য অস্বস্তিকর। মুসলমানরা আশা করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শান্তির ধর্ম ইসলামকে যথার্থভাবে মূল্যায়ন করে ইসলামকে আমেরিকার সামনের দিকে এগিয়ে চলার মাধ্যম হিসেবেই গ্রহণ করবে, ভীতি হিসেবে নয়।
মন্তব্য করুন