সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:২৬ পূর্বাহ্ন

কোরবানিতে কত সওয়াব!

কোরবানিতে কত সওয়াব!

অনলাইন বিজ্ঞাপন

ড. মাওলানা ইমতিয়াজ আহমদ

জিলহজের ১০ তারিখে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হচ্ছে কোরবানি। এ কোরবানির মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করে। এটা নতুন কোনো ইবাদত নয়। প্রত্যেক জাতির জন্যই এ ইবাদতের প্রচলন ছিল। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি।’ (সূরা হজ : ৩৪)। আল্লাহর পেয়ারা নবী ইবরাহিম (আ.) কে প্রিয় সন্তান কোরবানি দিতে বলা হলে তিনি বিনাবাক্য ব্যয়ে কোরবানির জন্য প্রস্তুত হয়ে যান। সব সংশয় দ্বিধা ও লৌকিকতা ঝেড়ে ফেলে আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়নে আমাদেরও তেমনি নিবেদিত হওয়া উচিত। তাহলে আল্লাহর নৈকট্য হাসিলসহ বহু সওয়াবের অধিকারী হওয়া যাবে।
কোরবানিতে প্রচুর সওয়াব রয়েছে। যেমন-
* কোরবানির পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে সওয়াব রয়েছে। জায়েদ বিন আরকাম (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কেরাম (রা.) কে কোরবানির সওয়াবের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, কোরবানির পশুর প্রতিটি লোমের বিনিময়ে সওয়াব রয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) এর মনে প্রশ্ন জাগল, ভেড়া-দুম্বার তো প্রচুর পশম, তার বিনিময়েও কি সওয়াব পাওয়া যাবে? তারা কৌতূহল নিয়ে আরজ করলেন, ভেড়া ও দুম্বার পশমের বেলায়ও কি এ সওয়াব রয়েছে? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘ভেড়া-দুম্বার প্রতিটি পশমেও সওয়াব রয়েছে।’ (ইবনে মাজা : ৩১২৭)।
অল্প সময়ে প্রচুর পরিমাণ সওয়াব অর্জনের এ এক সুবর্ণ সুযোগ। একটা পশুর শরীরে কী পরিমাণ লোম বা পশম থাকে! সারা দিন ধরে গুনলেও তা গণনা করে শেষ করা যাবে না।
* কোরবানির পশুর শিং, খুরসহ সব অঙ্গের বিনিময়েও সওয়াব রয়েছে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ঈদুল আজহার দিন মানুষের কোনো আমল আল্লাহ তায়ালার কাছে কোরবানির রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে অধিক পছন্দনীয় নয়। আর নিঃসন্দেহে কেয়ামতের দিন কোরবানির পশুর শিং, লোম এবং খুরসহ উপস্থিত হবে।’ (ইবনে মাজা : ৩১২৭)। আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) অপর এক বর্ণনায় বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জবাইয়ের সময় নিজ পশু কেবলামুখী করবে, কেয়ামতের দিন ওই পশুর রক্ত, মলমূত্র ও পশম তার আমলনামায় ওজন করা হবে।’ (বায়হাকি : ৯/২৮৫)।
হাদিসে পশুর এমন সব অঙ্গ-পত্যঙ্গের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলোকে তুচ্ছ মনে করে ফেলে দেয়া হয়। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী এসব অংশেরও সওয়াব প্রদান করা হবে। তুচ্ছ বস্তুরই যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে পশুর মূল অংশ অর্থ গোশতের বিনিময়ে কী পরিমাণ সওয়াব প্রদান করা হবে!
* কোরবানি দ্বারা শুধু সওয়াব অর্জন নয়, বরং সব গোনাহও মাফ হয়ে যাবে। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) ফাতেমা (রা.) কে তার কোরবানির কাছে উপস্থিত হতে বললেন। এরপর তিনি বললেন, এ কোরবানির প্রথম রক্তবিন্দু প্রবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ তোমার গোনাহগুলো মাফ করে দেবেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ, এটা কি শুধু আহলে বাইতের জন্য, নাকি সব মুসলমানের জন্য? উত্তরে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘এ ফজিলত সব মুসলমানের জন্য।’ (তারগিব ওয়াত তারহিব : ২/১৫৪)।
* কোরবানি অতি দ্রুত কবুল হবে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহ তায়ালার দরবারে কবুল হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা প্রফুল্লচিত্তে আন্তরিকতার সঙ্গে কোরবানি করো।’ (ইবনে মাজা : ৩১২৭)।
কোরবানির জন্য শোয়ানো পশুর গলা ও মাটির দূরত্ব খুবই সামান্য। আর গলায় ছুরি চালানোর পর ফিনকি দিয়ে প্রথম যে রক্তের ধারা বেরিয়ে আসে তা বেশ গতিসম্পন্ন হয়। এতদসত্ত্বেও নিয়ত যদি স্বচ্ছ ও পরিশুদ্ধ হয়, এ রক্ত অতি নিকটবর্তী মাটি স্পর্শ করার আগেই আল্লাহর দরবারে কোরবানি পৌঁছে যায় এবং তা কবুল হয়। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘আল্লাহর কাছে (কোরবানির পশুর) গোশত ও রক্ত পৌঁছে না, কিন্তু তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া পৌঁছে।’ (সূরা হজ : ৩৭)।
কোরবানি এমন এক ইবাদত যার মাধ্যমে বান্দা প্রচুর সওয়াবের অধিকারী হয়। তাই সামর্থ্য থাকলে নফল হলেও প্রফুল্লচিত্তে কোরবানি করা উচিত।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
Desing & Developed BY MONTAKIM