চকরিয়া প্রতিনিধি:;
আগামী শুক্রবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। চলতি বছরের ভয়াবহ একাধিক বন্যার সময় রমজানের ঈদ হলেও চকরিয়ার অধিকাংশ মানুষ বঞ্চিত হয়েছিল ঈদ আনন্দ থেকে। তবে বর্ষণ ও বন্যা শেষে একেবারে গোরদোড়ায় চলে আসা এবারের ঈদুল আজহাকে ভালভাবে বরণ করতে বেশ প্রস্তুতি এবং তোড়জোড়ের কমতি নেই চকরিয়ার এসব মানুষদের মাঝে। তাই অনেকে ভিড় জমাচ্ছেন পৌরশহর চিরিঙ্গা বিপনী
বিতানগুলোতে। শেষমুহূর্তেও বিপনী বিতানগুলোতে অতিমাত্রায় না হলেও বেশ জমে উঠেছে ঈদবাজার। চকরিয়া পৌরশহরের বাণিজ্যিক কেন্দ্র চিরিঙ্গায় অন্তত ৩০টি বিপনী বিতান রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে সকাল থেকে ভোররাত পর্যন্ত এসব বিপনী বিতানে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে নারী-পুরুষদের। বিশেষ করে উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীরাও ভিড় করছে বেশি।
চকরিয়া পৌর শহরের একাধিক বিপনী বিতান ঘুরে দেখা গেছে, বিপনী বিতানগুলোর বেশির ভাগ শাড়ির দোকানে নারী ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এবারের ঈদে নারীদের প্রথম পছন্দ নামিদামি ব্রান্ডের শাড়ি ও শেলোয়ার কামিজ। ক্রেতা সমাগমকে উপলক্ষ্যে বিপনী বিতানগুলোও বেশ সাজানো হয়েছিল আগে থেকে। মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে শহরের বিপনী বিতানগুলোর সব দোকানে তোলা হয়েছে নিত্য-নতুন ডিজাইন ও মডেলের কাপড়ের সমারোহ।
সরজমিন দেখা গেছে, চিরিঙ্গা-সোসাইটির বাণিজ্যিক শহরের নিউ মার্কেট, ওয়েস্টার্ণ প্লাজা, আনোয়ার শপিং কমপ্লেক্স, চকরিয়া শপিং কমপ্লেক্স, সুপার মার্কেট, নিউ সুপার মার্কেট, চিরিংগা সমবায় মার্কেট, আবদুল মতলব শপিং সেন্টার, চকরিয়া সিটি সেন্টার, রূপালী শপিং কমপ্লেক্স, রওশন মার্কেট ও বাবু মিয়া বাজার হকার্স মার্কেটে রয়েছে প্রায় তিন হাজার দোকান। এসব দোকানে শোভা পাচ্ছে মেয়েদের পছন্দের পোশাক শেলোয়ার কামিজ কিরণমালা, আনার কলি, লেহেঙ্গা, পাগলু, শিলা, ছাম্মাকছালো, ঝিলিক, ফুলকলি, আনারকলি, শিপন, স্কাট টপস, থ্রি পিস, জিন্স প্যান্ট, জামদানি শাড়ি, বেনারশি, কাতান, সিল্ক, জর্জেট জয়পুরি, ছেলেদের নবাবী পাঞ্জাবি, শেরওয়ানি, ফতুয়া, টি-শার্ট, প্যান্ট এবং ছোটদের জন্য রয়েছে বাহারি ডিজাইনের তৈরি পোশাক। প্রত্যেক দোকানে ক্রেতাদের ভিড় উপচে পড়ছে।
ওয়েস্টার্ণ প্লাজা মার্কেটের হৃদয় ফ্যাশনের সত্ত্বাধিকারী জাহেদুল ইসলাম দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন, চলতি বছরের রমজানে ঈদবাজার বলতে গেলে তেমন জমেনি। কেননা রমজানের ঈদের আগে একাধিক ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে চকরিয়ার অধিকাংশ মানুষ নিঃস্ব হয়েছে। এতে ঈদ আনন্দ তাদের মাঝে দেখা যায়নি। এর ফলে বিপনী বিতানগুলোতেও প্রভাব পড়ে রমজানের ঈদবাজারে। তবে অন্য উৎসব ঈদুল আজহায় বিকিকিন বেশ ভাল জমে উঠেছে গত কয়েকদিন ধরে। দিন-রাত সমানে সব বয়সী নারী-পুরুষের আগমণে বেশ জমে উঠেছে ঈদবাজার। বেচাবিক্রিও মোটামুটি ভাল হচ্ছে। ক্রেতারাও বিভিন্ন পণ্যের দাম নাগালের মধ্যে পাচ্ছে। এতে ঈদবাজারমুখি নারী-পুরুষেরাও স্বাচ্ছন্দে কেনাকাটা সারতে পারছে।
সুপার মার্কেটের কাপড়ের বড় দোকান সৌদিয়া ক্লথ ষ্টোর। এই স্টোরের সত্ত্বাধিকারী মো. মুজিবুল হক বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কাপড়ের দাম একটু বেশি হলেও গুনগত মান ভাল হওয়ায় ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দে ক্রয় করছেন। তার দোকানে নারী ক্রেতাদের চাহিদা থাকে বরাবরেই বেশি।
চকরিয়া হাজেরা শপিং সেন্টারের অন্যতম গার্মেন্টস পণ্যের দোকান চমক ফ্যাশনের মালিক মোহাম্মদ আলী জানান, ঈদ উপলক্ষে দোকানে ভালমানের শাড়ি, থ্রিপীস, কসমেটিক ও শিশুদের কাপড়সহ বিভিন্ন পোশাকের সমাহার নিয়ে এসেছেন। বেশির ভাগ পণ্যের দামও অনেকটা ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই রয়েছে।
এদিকে ঈদ বাজারের নিরাপত্তায় দিনরাত সমানে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন পুলিশ, আনসার ছাড়াও সাদা পোশাকের গোয়েন্দা পুলিশ। পাশাপাশি ঈদবাজার মুখি নারী-পুরুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘কুইক রেসপন্স টিম’ ও নারী পুলিশ সদস্যদের বোরকা পরিয়ে ‘বোরকা বাহিনী’ নামানো হয়েছে বিপনী বিতানগুলোতে। এই দুই টিমের সদস্যরাও নিরবচ্ছিন্ন দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।
চকরিয়া থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন, পবিত্র কোরবানীর ঈদবাজারে আগত নারী-পুরুষ যাতে নির্বিঘেœ কেনাকাটা সেরে বাড়ি ফিরতে পারে সেজন্য পুলিশ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নিয়েছে। এতে এখনো পর্যন্ত ঈদবাজারে কোন অপরাধমূলক ঘটনা সংঘটিত হয়নি।
ওসি জানান, ঈদবাজারের নিরাপত্তায় পুলিশী টহল জোরদারের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পুলিশ সদস্যদের মাঠে নামানো হয়েছে। বোরকা পড়ে ছদ্মবেশে অপরাধী ধরতে মাঠে রয়েছে মহিলা কনষ্টেবলরা।
মন্তব্য করুন