বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২৬ পূর্বাহ্ন

জার্মানিকে পেয়ে ব্রাজিলের দুঃখ ভোলার সুযোগ

জার্মানিকে পেয়ে ব্রাজিলের দুঃখ ভোলার সুযোগ

অনলাইন বিজ্ঞাপন

স্পোর্টস ডেক্স:

১৯৫০ বিশ্বকাপ ফাইনালে উরুগুয়ের কাছে হারের দুঃখটা ব্রাজিলিয়ানদের জাতীয় এবং চিরকালীন। এরপর পাঁচটি বিশ্বকাপ শিরোপায়ও ‘মারাকানাজো’ ভুলে যায়নি ব্রাজিল। যেমন ভোলার নয় আরেক বিষাদকাব্য ‘মিনেইরাজো’; ২০১৪ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ১-৭ গোলের হার। শনিবার সেই জার্মানিকে হারিয়ে অলিম্পিকে প্রথমবার সোনা জয়ের আনন্দে কি দুই বছর আগের দুঃখ ধুয়ে যাবে আটলান্টিকের জলে? সে সম্ভাবনাও নেই। তবে পুনর্জন্মের আলো তো জ্বলবে। ফুটবলের দেশে ফুটবলের ‘মৃত্যু’ কি মানায়! সব কিছুতেই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা প্রতিপক্ষ। হন্ডুরাসের বিপক্ষে দলের ষষ্ঠ এবং নিজের দ্বিতীয় গোলটি করার পর নেইমার কেন বাস্কেটবলে স্কোর করার ভঙ্গিটা দেখালেন? মিক্সড জোন দিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে হনহনিয়ে বেরিয়ে যাওয়া নেইমারের কাছ থেকে কারণটা আর জানা হয়নি। তবে অনুমান করা যায় পুরুষদের বাস্কেটবলের রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ব্রাজিলকে ছিটকে দেওয়ার পর চূড়ান্ত বিদ্রূপ করে আর্জেন্টাইনরা। অদৃশ্য স্কোর করে নেইমার কি সে জ্বালাটা ফিরিয়ে দিলেন? হতে পারে। মারাকানা থেকে হুড়মুড়িয়ে বেরোতে থাকা তরুণদের উল্লাসে আর্জেন্টিনাকে নিয়ে হেড়ে গলার গানও শোনা গেল। পর্তুগিজ ভাষার কারণে বোঝার উপায় নেই। অগত্যা অনুমানই ভরসা; ব্রাজিল ফাইনালে আর্জেন্টিনা কোথাও নেই। আলবিসেলেস্তেদের বিদায়ও হয়েছে হন্ডুরাসের সঙ্গে ড্র করে, যাদের একটু আগেই ৬-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে উঠেছে ব্রাজিল। ১৪তম সেকেন্ডেই নেইমারের গোল, যা অলিম্পিকের দ্রুততমও। পুরো ম্যাচেই দুর্দান্ত খেলেছেন তিনি, খেলিয়েছেনও দলকে। তাঁকে ঘিরেই ব্রাজিলের স্বপ্ন। নেইমারও যেন সেই স্বপ্নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলেছেন। পুরো দলটাকে মাঠে তিনি যেভাবে পরিচালনা করছেন, অনুপ্রাণিত করছেন—সেটিই ব্রাজিলের পুনরুত্থানের প্রধানতম জীবনীশক্তি, হয়তো একমাত্রও। এ মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটিতে নাম লেখানো গ্যাব্রিয়েল জেসুসও দুই গোল করেছেন, তবে ম্যাচের ব্যবধান নেইমারই। ফাইনালেও ব্রাজিল কোচ রোজারিও মিকেলের ট্রাম্পকার্ড তিনি, ‘নেইমার একটা দানব। ওর ফুটবলটা ঐশ্বরিক এবং তার প্রতিভা আমাদের সবাইকে মুগ্ধ করে। খেলার বাইরেও ওর প্রভাবটা দলের উন্নতিতে ভূমিকার রাখছে। এত বড় তারকা, কিন্তু দলের সঙ্গে মিশে গেছে। নেইমারকে কেন্দ্র করে নতুন একটা প্রজন্ম উঠে আসছে। জানিয়ে দিচ্ছি যে আমরা মরে যাইনি।’ অথচ এই নেইমারকেই গ্রুপের প্রথম দুই ম্যাচে কত না কথা শুনতে হয়েছিল! মার্তাকে পুরুষদের দলে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি তুলে চরম হেনস্তাও করেছিল দর্শক। সেই তিনিই আবার ‘নয়নের মণি’। পোড় খাওয়া মিকেল অবশ্য জানেন, ‘সেদিন আপনারাই সমালোচনা করেছিলেন। জানি ফাইনালের ফল পক্ষে না গেলে আবারও সেই সময়টা ফিরিয়ে আনবেন!’ পরিস্থিতিও কিন্তু সেরকমই। অলিম্পিক পদকের গুরুত্ব সবাই বোঝেন। তবে এবার ফুটবলের সোনার পদক নিয়ে কোনো দেশে এমন হাহাকার ওঠেনি। কোপা আমেরিকার বদলে তাই অলিম্পিকে নেইমারকে খেলাচ্ছে ব্রাজিল, যদিও অলিম্পিক ফুটবলের সবচেয়ে বেশি পদকও পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদেরই। সমান পাঁচটি পদক আছে হাঙ্গেরি এবং ‘সাবেক’ দুই রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুগোস্লাভিয়ার। অবশ্য এবার পদকের নিশ্চয়তা মিলে গেছে, তাতে এককভাবে শীর্ষে উঠে যাচ্ছে ব্রাজিল। কিন্তু আগের পাঁচটির তিনটি রুপা আর দুটি ব্রোঞ্জে কি সোনার অপ্রাপ্তি ঘোচে? এখানেও আবার সেই জার্মানি-বাধা! এর আগে একবারই অলিম্পিক ফুটবলে জার্মানির মুখোমুখি হয়েছিল ব্রাজিল। ১৯৫২ অলিম্পিকের কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির কাছে ৪-২ গোলে হেরে পদকের লড়াই থেকে ছিটকে পড়েছিল ব্রাজিল। এবার সোনার স্বপ্নও কি…? জার্মান কোচ হোর্স্ট হুবেশ অবশ্য অতীত টেনে কোনো হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন না স্বাগতিকদের, ‘অলিম্পিক ফাইনালে মারাকানায় ব্রাজিলের মুখোমুখি হওয়ার চেয়ে দারুণ ব্যাপার আর কী হতে পারে? আমার তো অসাধারণ লাগছে। এ জন্য দলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’ বড় উপলক্ষকে শিষ্যদের উপভোগের পরামর্শই দিয়েছেন তিনি, ‘ফাইনালে ওঠার আনন্দটা উপভোগ করতে হবে, আমরা সেটাই করব।’ তবে তাঁর লক্ষ্য একটাই, ‘আমরা আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলব, বরাবর আমরা যেমনটা খেলি আর কি। দেখা যাক, সাফল্য মুঠোয় ধরা দেয় কি না।’ একটু আগেই নাইজেরিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে মারাকানার ফাইনাল নিশ্চিত করা জার্মান ফুটবলার ম্যাথিয়ার গিনটার নিজের পালায় পরোক্ষে ব্রাজিলের ওপর প্রত্যাশার বোঝা দ্বিগুণ করে দিয়েছেন, ‘ব্রাজিল খুবই শক্তিশালী দল। ফাইনালে তাই ওরাই ফেভারিট।’ প্রত্যাশার এ চাপ বইতে পারবে ব্রাজিল? অলিম্পিকে গত কিছুদিনের অভিজ্ঞতা বরং আশঙ্কার মেঘ ছড়িয়ে দিয়েছে চারপাশে। পুরুষদের বাস্কেটবলে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে অন্তিম মুহূর্তে ৬ পয়েন্ট এগিয়ে থেকেও হেরেছে ব্রাজিল। মেয়েদের ভলিবলে চীনের বিপক্ষে প্রথম সেট জিতেও পদকের লড়াইয়েই নামতে পারেনি স্বাগতিকরা। গ্রুপ পর্বে ৫-১ ব্যবধানে জেতা দলের বিপক্ষে হেরে পুরো দেশকে কাঁদিয়েছে মার্তার দল। প্রবল প্রত্যাশা এবং প্রচণ্ড আবেগই যেন বারবার ধাক্কা দিচ্ছে ব্রাজিলকে। বলার অপেক্ষা রাখে না মারাকানা, জার্মানি এবং অলিম্পিক ফুটবলে প্রথম সোনা জয়ের সম্ভাবনা মিলিয়ে আরেকবার আবেগের সমুদ্রে ডুব দেবে ব্রাজিল। এর গভীরতা কিংবা আয়তন পাশের আটলান্টিকের চেয়েও বেশি যেন! সূত্র-কালেরকণ্ঠ


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
Desing & Developed BY MONTAKIM