মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪৫ অপরাহ্ন
রামু প্রতিনিধি
শিক্ষকের নির্দেশে পরদিন মাথার চুল কেটে বিদ্যালয়ে এসেছিলেন মেধাবী ছাত্র হুমায়ন রশিদ। কিন্তু শিক্ষকের অভিযোগ চুল কাটা যথাযথ হয়নি। তাই পাঠদান করতে এসে ওই ছাত্রকে বেঞ্চে মাথা রাখার নির্দেশ দেন শিক্ষক মোস্তফা কামাল। তারপর ছাত্রে পিঠে চলে ১২/১৩ টি কিল। মাথা তুলে মুখের দুই পাশে দেয়া হয় আরো কিল ঘুষি। শেষে চলে স্টীলের স্কেল দিয়ে মাথায় আঘাত। এসময় ক্ষমা প্রার্থনা আর অনুনয় বিনয় করেও শিক্ষকের নির্যাতনের রোষানল থেকে বাঁচতে পারেনি হুমায়ন রশিদ।
গত রবিবার (২০ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজারের রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ হাকিম রকিমা উচ্চ বিদ্যালয়ে বর্বরোচিত এ ঘটনাটি ঘটে। নির্যাতনের শিকার হুমায়ন রশিদ সাংবাদিকদের কাছে নির্যাতনের এসব কথা তুলে ধরেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত ছাত্রের পিতা আবদুল হাকিম গতকাল মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
নির্যাতনের শিকার মেধাবি ছাত্র হুমায়ন রশিদ নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। তার রোল নং ৬। সে বিগত জেএসসি পরীক্ষায় সে এ প্লাস অর্জন করেছিলো। এছাড়া সম্প্রতি ঘোষিত এসএসসি পরীক্ষায় এ বিদ্যালয় থেকে তার বড় বোন জান্নাতুল বকেয়া এ প্লাস অর্জন করেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দেয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, রবিবার ৬ষ্ঠ ঘন্টায় পাঠদান করতে যান বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোস্তফা কামাল। এসময় ভালোভাবে চুল না কাটার অজুহাতে শ্রেণিকক্ষে প্রায় ৭০ জন ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতিতে শিক্ষক মোস্তফা কামাল ছাত্র হুমায়ন রশিদকে বেঞ্চে ফেলে কিল, ঘুষি সহ নানাভাবে মারধর শুরু করে। এতে তার পিঠ, মুখমন্ডল, চোখে রক্তজমাট হয়ে অসহনীয় জখম হয়েছে।
নির্যাতনের শিকার হুমায়ন রশিদ কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের পশ্চিম কাউয়ারখোপ এলাকার আবদুল হাকিমের ছেলে। তার বাবা জানিয়েছেন, বর্তমানে আহত ছেলের চিকিৎসা চলছে। এরই মধ্যে বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সদস্য এবং এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিরা আমার ছেলে দেখে গেছেন। কিন্তু নির্যাতনকারি সেই শিক্ষক কোন খবর নেয়নি। তাই নিরুপায় হয়ে তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল গফুর জানিয়েছেন, ছাত্র হুমায়ন রশিদকে অমানুষিকভাবে মারধর করা হয়েছে। কোন চোর-ডাকাতকেও মানুষ এভাবে মারধর করে না। এরপরও স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা করা হয়েছিলো। কিন্তু নির্যাতনকারি শিক্ষক মোস্তফা কামাল কোন সাড়া দেয়নি। তিনি আরো জানান, মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে সহকারি প্রধান শিক্ষককে মারধরের চেষ্টা, প্রাইভেট না পড়লে শিক্ষার্থীদের খাতায় নম্বর কম দেয়া সহ নানা অনিয়ম ও অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে।
কাউয়ারখোপ হাকিম রকিমা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কিশোর বড়–য়া জানিয়েছেন, তিনি ছুটিতে রয়েছেন। ছাত্রকে নির্যাতনের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। একজন শিক্ষকের কাছে এমন আচরণ দুঃখজনক। এ ব্যাপারে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে বেঠক করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক মোস্তফা কামাল জানান, চুল কেটে না আসায় তাকে কয়েকটা চড়-থাপ্পড় দিয়েছিলাম। এনিয়ে কিছু ব্যক্তি অতিরঞ্জিত কথাবার্তা বলে যাচ্ছে।
মন্তব্য করুন