বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫৬ পূর্বাহ্ন
আলোকিত শিক্ষা ডেক্স:
শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষ, আবাসন, অবকাঠামো সংকট প্রকট হয়ে উঠছে কক্সবাজার সরকারি কলেজে। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকার পাশাপাশি কলেজে প্রয়োজনীয় বিষয় চালু না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া নতুন ছাত্রীনিবাস এখনো চালু না হওয়ায় আবাসন সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
১৯৬২ সালে শহরতলির লিংকরোড এলাকায় ১৭ দশমিক ৭৪ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত কলেজটিতে বর্তমানে তিন বিভাগে একাদশ শ্রেণির পাশাপাশি বাংলা, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, হিসাব বিজ্ঞান, গণিত, ব্যবস্থাপনা, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, ইংরেজি, সাধারণ ইতিহাস ও ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও বাংলা, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়ার সুযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের।
কিন্তু গণিত, ব্যবস্থাপনা, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স না থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী জেলার বাইরে গিয়ে স্নাতকোত্তর পড়ার সুযোগ পান না। এসব ব্যাপারে বার বার যোগাযোগ করেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না বলে কলেজ কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছেন।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষকের পদ আছে ৬৬টি। বিপরীতে কলেজে বর্তমানে কর্মরত আছেন ৫৪ জন শিক্ষক। এর মধ্যে প্রশাসনিক দু’টি পদ রয়েছে। সহযোগী অধ্যাপকের ১৪ পদের ১টি, সহকারী অধ্যাপকের ১৪টি পদের স্থলে কর্মরত রয়েছেন ১৫ জন, প্রভাষকের ৩০টি পদের সাতটি পদ দীর্ঘদিন ধরেই শূন্য রয়েছে। একই সঙ্গে প্রদর্শকের চারটি এবং শরীরচর্চার একজন শিক্ষকের পদ থাকলেও তাও শূন্য রয়েছে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রস্তাব পাঠানোর পরও শিক্ষক সংকটের সমস্যা সমাধান হচ্ছে না উল্লেখ করে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, অনেক শিক্ষক আবাসন সংকটের কথা বলে আসতে চায় না।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণে বৃহত্তর চট্টগ্রামের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাণী বিদ্যা, রসায়ন ও পদার্থবিদ্যা বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) পড়ার সুযোগ নেই। ফলে কয়েক লাখ শিক্ষার্থী এসব বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করতে পারছে না।
বিষটি মাথায় নিয়ে কক্সবাজার কলেজে প্রাণীবিদ্যা, রসায়ন ও পদার্থবিদ্যা (স্নাতক) সম্মান বিষয়ে কোর্স চালুর চেষ্টা করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগে অধিভুক্তি ফি জমা দেয়ার নির্দেশনা পেয়ে ২০১৫ সালের ২৭ জুলাই চালানমূলে তিন বিষয়ের জন্য ৩৬ হাজার টাকা জমা দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি। যদিও কলেজে এসব বিভাগে পর্যাপ্ত শিক্ষক রয়েছে।
সরেজমিনে কলেজ পরিদর্শন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৩ সালে শুরু হওয়া ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত কলেজের সীমানাপ্রাচীর ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বর্ধিত বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের কক্ষ সংকট দূর করতে নতুন বিজ্ঞান ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি সম্পন্ন হওয়ার পথে রয়েছে পাঁচতলার নতুন একাডেমিক ভবন।
এছাড়া ১শ’ ছাত্রীর আবাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সম্পন্ন হওয়ার পথে রয়েছে আধুানিক ডিজাইনের চারতলা বিশিষ্ট নতুন ছাত্রী হোস্টেল।
শিক্ষার্থীদের দাবি, বর্তমানে কলেজে অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও শিক্ষক, ক্লাসরুম ও ছাত্রীনিবাস সংকট নিরসন করা অতি জরুরি। পাশাপাশি যেসব বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স চালু হয়নি সেসব বিষয়ে দ্রুত স্নাতকোত্তর কোর্স চালু করা প্রয়োজন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ফজলুল করিম চৌধুরী বলেন, এখানে আমি আসার পর বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ছাত্রীদের জন্য আরেকটি ছাত্রীনিবাস নির্মাণ, পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগসহ সব বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু এবং শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য যানবাহন সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছি। ইতিমধ্যে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি এবং ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক কোর্স চালুর অনুমতি পেয়েছি।
অধ্যক্ষ আরো বলেন, স্ব-স্ব ক্ষেত্রে আমাদের সমস্যা অনেক। এসব সমস্যা একসঙ্গে সমাধান করা সম্ভব বলে আশা করি না। তবে ক্রমেই সংকট উত্তরণ হবে। সবার সহযোগিতায় কলেজটি চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপ নেবে। সূত্র-জাগোনিউজ
মন্তব্য করুন