শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৫৩ পূর্বাহ্ন
আলোকিত কক্সবাজার ডেক্স:
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষণা করা কমিটিতে ‘পদবঞ্চিত’ কর্মীদের বিক্ষোভ-অবরোধে ক্যাম্পাস অচল হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া বিক্ষোভকারীরা শাটল ট্রেন ভাঙচুর এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। এতে পুলিশসহ আহত হয়েছে পাঁচজন। গতকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ও ডেমু ট্রেন বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ দেখায় ছাত্রলীগের ক্ষুব্ধ কর্মীরা। তাদের বিক্ষোভ ও অবরোধের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষা হয়নি। ক্লাস স্থগিত করতেও বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও আন্দোলনকারীদের তলব করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। গত সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় ছাত্রলীগের ২০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সংসদ। এর পর পরই পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশা অনুযায়ী পদ না পাওয়া নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে এক ঘণ্টা তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। পরের দিন মঙ্গলবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটকে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয়। প্রতক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানায়, গতকাল চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে ছেড়ে আসা সকাল সাড়ে ৭টার ট্রেনটি ঝাউতলা স্টেশনে পৌঁছলে সেটি আটকে দেয় ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ কর্মীরা। এ সময় শাটল ট্রেনের চালককে ধরে নিয়ে যায় তারা। পরে পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে। এরপর ট্রেনটি ষোলশহর স্টেশনের অদূরে বন গবেষণাগার এলাকায় পৌঁছলে আবারও ট্রেন অবরোধের চেষ্টা করে অন্দোলনকারীরা। একপর্যায়ে তারা ট্রেন থামাতে ইট-পাথর নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে ট্রেনে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ এসে অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। কিন্তু অবরোধকারীরা না হটায় ট্রেনটি ষোলশহর স্টেশনে ফিরে যায়। ওই সময় বিক্ষোভকারীদের হামলায় ষোলশহর পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক (এসআই) জাকির হোসেন আহত হন। তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। অবরোধকারীদের মারমুখী অবস্থানের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে কোনো শাটল ট্রেন বা অন্য কোনো পরিবহন চলাচল করতে পারেনি। ষোলশহর পুলিশ ফাঁড়িতে দায়িত্বরত উপপরিদর্শক (এসআই) মো. হারুন পুলিশের ফাঁকা গুলি ছোড়ার কথা অস্বীকার করে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শাটল ট্রেন থামাতে ছাত্রলীগের কিছু কর্মী ইট-পাথর নিক্ষেপ করলে এসআই জাকির হোসেন আহত হন।’ ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, সকালে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী শাটল ট্রেনের চালককে ধরে নিয়ে যায়। তাঁকে উদ্ধারের পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাদের আন্দোলনের মুখে সকাল থেকে কোনো ট্রেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে যেতে পারেনি। অবরোধের কারণে লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা হয়নি। এ ছাড়া আরো কয়েকটি বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আবু তাহের ও সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সরোয়ার পারভেজ কালের কণ্ঠকে বলেন, কোন কোন বিভাগে পরীক্ষা হয়নি সে তালিকা এখনো তাঁরা হাতে পাননি। জানা যায়, পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশা অনুযায়ী পদ না পাওয়ায় আন্দোলনরত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং সিটি মেয়র নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। কমিটিতে প্রত্যাশা অনুযায়ী পদ না পাওয়া মেয়র নাছির সমর্থক মো. মামুন বলেন, ‘ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে অক্ষম ও অযোগ্যদের কমিটিতে আনা হয়েছে। এটি পুরোটাই বিতর্কিত একটি কমিটি। কমিটি সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।’ মহিউদ্দিন চৌধুরীর সমর্থক পদবঞ্চিত নুরুজ্জামান বলেন, ‘ত্যাগীদের মূল্যায়ন না করে টিপু-সুজন কমিটি দিয়েছে, এটি আমরা মানি না। যত দিন সংশোধন করে কমিটি না দেবে তত দিন এই অবরোধ চলবে।’ উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আলমগীর টিপু, সাধারণ সম্পাদক এইচ এম ফজলে রাব্বী সুজন ও আন্দোলনকারীদের তলব করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন তলবের বিষয়টি নিশ্চিত করে কালের কণ্ঠকে বলেন, ত্যাগী যাঁরা আছেন তাঁদের কমিটিতে রাখার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আলমগীর টিপু কেন্দ্রে তলবের বিষয়টি স্বীকার করেননি। তিনি বলেছেন, ‘এই আন্দোলন অযৌক্তিক। সংগঠন অনেক বড়। আর কমিটি হচ্ছে ছোট। সেখানে সবাইকে রাখা সম্ভব হয় না।’ সূত্র-কালেরকণ্ঠ
মন্তব্য করুন