বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০২ পূর্বাহ্ন
আলোকিত কক্সবাজার ডেক্স:
কখনো ডুববে না বলে গ্যারান্টি দেওয়া টাইটানিক জাহাজটিকে প্রথম যাত্রাতেই ডুবিয়ে দিয়েছে বরফের একটি চাঁই, সেখানে বরফের গোটা একটি দেশ যে ইউরোর স্বাগতিকদের স্বপ্নকে ডুবিয়ে দেবে না, সে নিশ্চয়তা কোথায়! ফ্রান্স আর আইসল্যান্ডের ফুটবল ঐতিহ্য, সাফল্য আর কাঠামোয় ততটাই মিল যতটা দুই দেশের আবহাওয়ায়। প্রতি বছর যত লোক ফ্রান্সে বেড়াতে আসে, তার চেয়ে কম জনসংখ্যা আইসল্যান্ডের। এত বৈপরীত্য হলেও আইসল্যান্ডের ফুটবল দলকে সমীহ না করে উপায় কী ফরাসিদের। পর্তুগালকে রুখে দিয়ে, ইংল্যান্ডকে হারিয়ে যারা কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে এসেছে, তারা মোটেও সাদামাটা ফরাসি সৌরভ নিতে আসা পর্যটক নয়। আবার স্বাগতিক হয়ে তাদের হারাতে না পারলে লজ্জায় মাথা কাটা যাওয়ার ভয়ও যে আছে ফ্রান্সের! আজ রবিবার বাংলাদেশ সময় রাত একটায় শুরু হবে খেলা। অতীত ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, এর আগের ১১ খেলায় কখনোই ফ্রান্সকে হারাতে পারেনি আইসল্যান্ড। কোয়ার্টার ফাইনালে নিজের দেশে এমন এক প্রতিপক্ষকে পেতে তো বরাতজোর লাগে। তবে ‘লে ব্লু’দের কোচ দিদিয়ের দেশম বাস্তবতা মেনেই হাওয়ায় গা ভাসিয়ে দিচ্ছেন না, বরং খুঁজে বের করছেন আইসল্যান্ডের শক্তি ও দুর্বলতা, ‘সবাই জানে, আইসল্যান্ড পাকেচক্রে এখানে চলে আসেনি। তারা যোগ্য বলেই এখানে এসেছে। তারা ৩৫-৪০ গজ দূর থেকে ফ্রি-কিকের মতো লম্বা থ্রো করছে, আমরা তাদের এই অস্ত্রটা ভোঁতা করার একটা উপায় বের করেছি। যদিও শুধুই লম্বা থ্রো দিয়ে তাদের শক্তিকে খাটো করে দেখাটা ঠিক হবে না, মাঠের খেলাতেও তারা রীতিমতো কাচের মেঝেতেও খেলার যোগ্যতা রাখে। আইসল্যান্ড যোগ্য দল হিসেবেই ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে।’ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে একটা সময় একই সঙ্গে টটেনহামে খেলতেন আইসল্যান্ডের জিলফি সিগুর্ডসন ও ফ্রান্সের গোলরক্ষক উগো লরি। আইসল্যান্ড দলের সেরা খেলোয়াড় সমপর্কে তাঁর যে বাড়তি প্রস্তুতি থাকবে সেটাও বলে দিলেন লরি, ‘জিলফি সত্যিই খুব ভালো মানুষ। সে খুব উঁচু মানের খেলোয়াড়, আইসল্যান্ডের বলে কেউ তাকে খুব একটা গুনতিতে ধরে না। সোয়ানসির হয়ে গত মৌসুমের পরের অর্ধেকটা তার খুব ভালো গেছে। বল পায়ে দ্রুত, সেট পিসেও দারুণ।’ সব মিলিয়ে এই ইউরোতে আইসল্যান্ডের দারুণ পারফরম্যান্সে মুগ্ধ লরিও, ‘আইসল্যান্ড যেটা করেছে সেটা অসাধারণ।’ টুইটারে গ্ল্যাডিয়েটর তারকা রাসেল ক্রো সমর্থন করছেন আইসল্যান্ডকে। এটা দেখে ফ্রান্স দলে তাঁর ভক্তদের খানিকটা মনই খারাপ! স্থানীয় একটি পত্রিকার খবর, যেকোনো বড় ম্যাচের আগেই নাকি গ্ল্যাডিয়েটর ছবিটা দেখে নেন আন্দ্রে পিয়েরে গিগন্যাক। ‘ম্যাক্সিমাস ওরেলিয়াস’ আইসল্যান্ডের পক্ষে চলে যাওয়াতে তো খানিকটা উভয় সংকটই হয়ে গেল তাঁর জন্য! প্রথমবারের মতো বড় কোনো আসরে খেলতে এসেই কোয়ার্টার ফাইনালে। স্বাগতিকদের হারিয়ে শেষ চারে আইসল্যান্ড যদি পৌঁছেই যায়, তাহলে যে ফুটবলের অন্যতম বড় অঘটন হিসেবেই তা ঢুকে যাবে ইতিহাসের পাতায় সেটা বলাই যায়। দৃঢ়চেতা আইসল্যান্ডারদের শক্তি তাদের দলীয় সংহতি, সাহস আর কিছু না হারাবার মানসিকতা। যেটা স্পষ্ট হল্ডারসন, গানারসনদের কথায়। অন্যদিকে স্টেডিয়ামে ৭০ হাজার ফরাসি সমর্থকের সঙ্গে গোটা দেশের হৃদয়ের উষ্ণতাকে সঙ্গী করেই মাঠে নামবে ফরাসিরা। তাদের সম্মিলিত শক্তিতে গলবে কি আইসল্যান্ডের বরফজমাট রক্ষণ? নাকি স্বাগতিকদের বুক ভেঙে লেখা হবে তুষার-দেশের রূপকথার নতুন অধ্যায়?
সূত্র-কালেরকণ্ঠ
মন্তব্য করুন