বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২১ পূর্বাহ্ন
স্পোর্টস ডেক্স:
১ মে বাকি বিশ্ব পালন করুক। ২ আর ৩ মে দিন দুটি ফুটবল রেখে দিক তার জন্য। এই দুটি দিনই যেন ফুটবলের আসল ‘মে দিবস’। মেহনতি ফুটবলারদের বিপ্লবের দিন!
আগের দিন বিশ্বের সবচেয়ে ধনাঢ্য ফুটবলের আসর ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে লেস্টার সিটি। আর কাল ফুটবলের আরেক মহারাজা নিজ দুর্গেই পতিত হলো আরেক সাধারণ শ্রমজীবীদের হাতে। বড় বড় কামান নেই, নেই দোনলা বন্দুক। হাতুড়ি আর কাস্তে দিয়েই তারা পতন ঘটাল আরেক বাস্তিল দুর্গের। অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় বায়ার্ন মিউনিখকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে চলে গেল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ।
বায়ার্ন নিজেদের দুর্ভাগা ভাবতে পারে। পারে কি, ভাবছেই। ভিদাল তো বলেই বসলেন, বিশ্বের সেরা দলটা কুৎসিত অ্যাটলেটিকোর কাছে হেরেছে। কার্ল হেইঞ্জ রুমেনিগে আরও কড়া ভাষায় বললেন, ‘আমরা প্রতারণার শিকার।’
প্রায় প্রতি মিনিটেই একটা করে আক্রমণ শানানো, প্রতিপক্ষের গোলে ৩৩টা আক্রমণ, এর মধ্যে স্রেফ গোলমুখেই শট ১১ টা; তারপরও হেঁট মাথায় বিদায়।
বায়ার্ন ২-১ গোলে ম্যাচটি জিতলেও দুই লেগ মিলিয়ে ২-২ গোলের সমতায় প্রতিপক্ষের মাঠে এক গোল করার সুবাদেই এগিয়ে গেল অ্যাটলেটিকো।
৫৩ মিনিটে প্রতি আক্রমণ থেকে আঁতোয়া গ্রিজমানের করা গোলটাই তাই গড়ে দিল সব ব্যবধান। ৩১ মিনিটে জাবি আলোনসোর দুর্দান্ত ছক কষা ফ্রি কিক থেকে প্রথমে গোল করে এগিয়ে গিয়েছিল বায়ার্ন। প্রথম লেগে নিজেদের মাঠে অ্যাটলেটিকোর ১-০ গোলে জিতে এগিয়ে থাকার সুবিধাটা ওখানেই শেষ। কিন্তু প্রথম লেগে বায়ার্ন আসল কাজটাই করতে পারেনি, প্রতিপক্ষের মাঠে একটা গোল।
হিরে-জহরতের চেয়েও দামি সেই অ্যাওয়ে গোল।
সেটাই করে ফেললেন গ্রিজমান। ম্যাচে ১-১ সমতা, দুই লেগ মিলিয়ে ২-১ গোলে এগিয়ে অ্যাটলেটিকো। বায়ার্ন ২-২ করে ফেললেও অ্যাটলেটিকো এগিয়ে থাকবে অ্যাওয়ে গোলে। বায়ার্নের সামনে হিসাবটা তখন এমন—করতে হবে কমপক্ষে দুটি গোল।
৭৪ মিনিটে রবার্ট লেভানডফস্কির দুর্দান্ত হেডে বায়ার্ন ২-২ করেও ফেলল। কিন্তু বাকি ১৬ মিনিট, যোগ করা সময়ের পাঁচ মিনিটেও আর পেল না গোলের দেখা।
এরই মধ্যে আবার দুটি পেনাল্টি–নাটকও হয়েছে। আলোনসোর গোলটার কিছুক্ষণের মধ্যেই পেনাল্টি পেয়ে গিয়েছিল বায়ার্ন। বায়ার্নের আক্রমণের ধারা আর ওই সময়ের পেনাল্টি মনে হচ্ছিল, খেলা প্রথমার্ধেই শেষ। কিন্তু ওব্লাক ঠেকিয়ে দিলেন টমাস মুলারের পেনাল্টি! টিকে থাকল অ্যাটলেটিকো। ওদিকে পরের পেনাল্টির নাটকটা হুবহু একই রকম হলো, কিন্তু এবার সেটা বায়ার্নের মঞ্চে। অ্যাটলেটিকো ১-১ করে ফেলার কিছুক্ষণের মধ্যেই পেয়ে গিয়েছিল পেনাল্টি। গোলটা করলেই খেলা শেষ! বায়ার্নকে তখন ম্যাচটা জিততে হতো ৪-২ গোলে। পেনাল্টিতে গোল হলেই বায়ার্নকে বাকি সময়ে করতে হবে তিন গোল! ফার্নান্দো তোরেস মুলারের কপি-পেস্ট পেনাল্টিই যেন নিলেন। আর ম্যানুয়েল নয়্যারও ওব্লাকের কপি-পেস্ট সেভ করে ফেললেন। বেঁচে থাকল বায়ার্নের আশা।
কিন্তু তাতে লাভ হলো না। ফুটবল যে ঠিকই করে রেখেছে, রাজাদের পতন হবে, উত্থান হবে প্রজাদের। বার্সেলোনার পর এবার এ সময়ের ফুটবলের আরেক পরাশক্তি বায়ার্নকেও দর্শক বানিয়ে দিল অতি সাধারণদের নিয়ে গড়া এই দলটা।
কালকের ম্যাচ দেখে হয়তো আপনার মনে হতে পারে, এ বড় অন্যায়। খেলল বায়ার্ন, আর ফাইনালে কিনা গেল অ্যাটলেটিকো! কিন্তু বায়ার্নের মতো দলগুলো যখন শুধু নিজেদের শক্তি বাড়ানো নয়, হুমকি হয়ে ওঠা প্রতিপক্ষের ডানা ছেঁটে শক্তি কমিয়ে দেওয়ার কৌশলও নিয়েছে টাকার জোরে, তখন মনে হয় অ্যাটলেটিকো-লেস্টারদের মতো দলগুলো এই রাজা-বাদশাদের একটা কড়া পাল্টা জবাবই দিল। বায়ার্নের একচ্ছত্র আধিপত্য ভাঙতে শুরু করেছির যে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড, একে একে তাদের দলের সব ভালো খেলোয়াড়কেই যেন নিজেদের দলে ভেড়াচ্ছে বায়ার্ন। সর্বশেষ হাত বাড়িয়েছে ডর্টমুন্ডের অধিনায়কের দিকেও!
টাকার ছড়াছড়ি, নামীদামি ক্লাবের ফুটবলারদের কপালে চোখ তুলে দেওয়া বেতন যখন ফুটবলে একটা ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে ফেলছে, সেই সময় ভার্ডি-মাহরেজ-গডিন-কোকেরাই তো আসল বিপ্লবের ডাক দিয়েছেন। তাঁরা হয়তো তারকা নন, শিল্পীত ছোঁয়া নেই, কিন্তু তাঁদের কাজটাও তো মহান শিল্পকর্ম তৈরি নয়; কাস্তে-হাতুড়ি দিয়ে রাজ-রাজড়াদের দুর্গ ভাঙা!
সব সময় শিল্পের জয়ও তাই হতে নেই, শ্রমের জয়ও তাই চাই!
সূত্র-প্রথম আলো
মন্তব্য করুন