আলোকিত কক্সবাজার ডেক্স:
কক্সবাজারের তিন উপজেলা টেকনাফ, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার ১৯ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আগামী ২২ মার্চ। এর দুই দিন আগে (২০ মার্চ) অনুষ্ঠিত হবে চকরিয়া এবং মহেশখালী পৌরসভার নির্বাচন। দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম দলীয় মনোনয়নে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এ নির্বাচন নিয়ে যেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা আছে তেমনি দেখা দিয়েছে হতাশা ও বিক্ষোভ।
আওয়ামী লীগের ঘোষিত প্রার্থী তালিকায় বিএনপি নেতা, ইয়াবা ব্যবসায়ী, জঙ্গি নেতা ও রাজাকার পরিবারের সন্তানসহ বিতর্কিত অনেকের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করেই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ নেতাকর্মীদের। আর এ কারণে অর্ধেকেরও বেশি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা এসেছে তৃণমূল থেকে। ইতিমধ্যে টেকনাফ, চকরিয়া এবং মহেশখালীতে প্রার্থী বদলের দাবিতে কলা গাছ রোপন করে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। অনেক স্থানে প্রধান সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানায় অনেকে।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানান, মহেশখালী পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান মেয়র ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি মকছুদ মিয়া। তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে তিনি মহেশখালীর যুদ্ধাপরাধ মামলার ২২ নং আসামী মোহাম্মদের পুত্র। তাকে নমিনেশন দেয়ায় একাত্তরে নির্যাতিত সংখ্যালঘু পরিবারের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডকে ইতোমধ্যে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে তাকে মনোনয়ন দেওয়ায় মহেশখালীর প্রথম মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা সরওয়ার আজম নাগরিক কমিটির ব্যানারে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের রেজুলেশনের ভিত্তিতে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু ও সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরীর নাম জেলা কমিটির কাছে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু জেলা থেকে কেন্দ্রে প্রেরিত তালিকায় এই দুই জনের নাম বাদ দিয়ে অন্য ৫ জনের নাম পাঠানো হয়। এ নিয়েও চকরিয়া জুড়ে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। তাদের দাবি কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ তৃণমূল নেতাকর্মীদের সিদ্ধান্তকে অবজ্ঞা করেছে।
পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু বলেন, রাজনীতিতে অশুভ শক্তির আস্ফালন বেশিদিন স্থায়ী হয়না। তৃণমুল নেতাকর্মীরা তাদের পছন্দের প্রার্থী পায়নি বলে বিক্ষোভ করেছে।
কেন্দ্র থেকে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়া হয়। এদিকে আওয়ামী লীগের গতবারের হেভিওয়েট প্রার্থী চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও কক্সবাজার ট্রাক মিনিট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি ফজলুল করিম সাঈদী নাগরিক কমিটির প্রার্থী হিসাবে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন। দলীয় মনোনয়ন নিতে অনেক চেষ্টা-তদবির করেও ব্যর্থ হয়ে অবশেষে ১৭ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে নাগরিক কমিটির ব্যানারে নিজের প্রার্থীতা ঘোষণা দেন সাঈদী।
মহেশখালী কালারমারছড়া ইউনিয়নে তৃণমূলের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন শহীদ পরিবারের সন্তান তারেক বিন ওসমান শরীফ। কিন্তু তাকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তার পিতা ওসমান চেয়ারম্যান হত্যা মামলার আসামী সেলিম চৌধুরীকে। মনোনয়ন না পেয়ে নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারেক বিন ওসমান শরীফ। বৃহস্পতিবার তার সর্মথকরা ইউনিয়নে মিজ্জির পাড়া থেকে চালিয়াতলি পর্যন্ত দীর্ঘ আট কিলোমিটার সড়কের দু’পাশে কয়েক হাজার কলাগাছ রোপন করে ক্ষোভ ঝেড়েছে।
জানতে চাওয়া হলে তারেক বিন ওসমান শরীফ জানান, মহেশখালী কতুবদিয়ার সাংসদ বিএনপি পরিবারের সদস্য। তাই তিনি বিএনপির রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত উপেক্ষা করেছেন। এ ব্যাপারে তারা প্রধানমন্ত্রী বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন।
একইভাবে কুতুবদিয়া উপজেলার দক্ষিণ ধুরুং ইউনিয়নে বিএনপি থেকে নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও কক্সবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আলাউদ্দিন আল আজাদের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়। পরে তীব্র সমালোচনার মুখে আরিফ মোশারফকে প্রার্থী ঘোষণা দেয়া হয়।
সাবরাং ইউনিয়নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী নূর হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। পরে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা সোনা আলীকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে নূর হোসেনের কর্মী সমর্থকরা কলাগাছ রোপন করে প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিক্ষুব্ধ সমর্থকরা সড়ক অবরোধ করে সোনা আলীকে বাদ দিয়ে নূর হোসেনকে প্রার্থী ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। নূর হোসেনকে নাগরিক কমিটির প্রার্থী করা হবে বলেও প্রতিবাদী নেতাকর্মীরা জানান।
হ্নীলা ইউপিতে বর্তমান চেয়ারম্যান এইচকে আনোয়ারকে প্রার্থী ঘোষণা করা হলে অপর প্রার্থী মাহবুব মোর্শেদের সমর্থকরা সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
সাবেক সাংসদ মো.আলী’র পুত্র রাশেদ আলী জানান, এলাকার জনগণ আমাকে প্রার্থী হিসেবে চায় বলে প্রার্থী হয়েছি। আমি আওয়ামীলীগের কোন সংগঠনের সাথে জড়িত না। তাই বহিষ্কার হওয়ার ভয় করি না।
এ ব্যাপারে মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, অধিকাংশ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের যোগ্য প্রার্থী রয়েছে। সে কারণে একক প্রার্থী মনোনয়ন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না হওয়ায় একাধিক প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সবদিক বিবেচনা করে যাকে যোগ্য মনে করেছে তাকেই মনোনয়ন দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমাদের করার কিছুই ছিলোনা।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা জানান, কেন্দ্র থেকে যে নির্দেশনা আছে সে মোতাবেক আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রার্থীদের তালিকা ঢাকায় প্রেরণ করেছি। নমিনেশন বোর্ড তাদের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত করেছে।
সূত্র-বিবার্তা
মন্তব্য করুন