বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২৫ পূর্বাহ্ন

মেরিন ড্রাইভ প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ ক্ষতিপূরণ প্রদানে এলএ অফিসের নয়-ছয়

মেরিন ড্রাইভ প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ ক্ষতিপূরণ প্রদানে এলএ অফিসের নয়-ছয়

অনলাইন বিজ্ঞাপন

সায়ীদ আলমগীর 

অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এক সময় এখানকার জমি বিক্রি হতো পানিরদরে। শত কিলোমিটারের মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রকল্প সেসব ফেলনা জমিকে ‘স্বর্ণমূল্য’ এনে দিয়েছে। তাই এখন জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সমাজপতি ও সরকারি আমলা সবার নজর এখানকার জমির উপর। এলাকার উপর দিয়ে নির্মানাধীন মেরিন ড্রাইভ সড়ক নগদে ‘লাভ’ এনে দিয়েছে ইনানী, মনখালী ও বাহারছরা সমুদ্র উপকূলের জমি মালিকদের। সড়কের জন্য অধিগ্রহণ করা ১৬৯ একর জমির বিপরীতে দেয়া হচ্ছে ২৬৪ কোটি টাকা সরকারি ক্ষতিপূরণ। ইতোমধ্যেই প্রায় ৩২ কোটি টাকা হস্তান্তর করা হয়েছে বলে এল.এ অফিস সূত্র জানিয়েছে।

এ বিশাল অংকের ক্ষতিপূরণের টাকা মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে জেলা প্রাশাসনের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ এলাকার জমির মালিকদের। একারণে সড়কের জন্য অধিগ্রহণ হওয়া জমির মালিকানা দাবিদারের সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। আর এর সুযোগে জমির বিপরীতে দেয়া টাকা নিয়ে চলছে নয়-ছয় কার্যক্রম। পাওনা টাকা পরিশোধের বিপরীতে আগাম আদায় করা হচ্ছে নির্ধারিত কমিশন। কমিশনে এদিক-সেদিক হলে রাতা-রাতি পাল্টে যাচ্ছে জমির মালিক। এভাবে বেড়ে গেছে প্রতারণা ও জালিয়াতি। অনেক ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না আদালতের নিষেধাজ্ঞাও। তারা মহেশখালীর কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের ক্ষতিপূরণ প্রদানের নানা কেলেংকারির পর এবার মেরিন ড্রাইভ প্রকল্পেও একই ভাবে অনিয়মের আশ্রয় নিচ্ছেন। এমন সব ভূরি ভূরি অভিযোগ কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের ভূমি হুকুম দখল কর্মকর্তার কার্যলয়ের বিরুদ্ধে।

imagesউখিয়ার জালিয়াপালং ইনানী মনখালী এলাকার ভূক্তভোগী মুজিবুল হক জানান, নির্মিতব্য মেরিন ড্রাইভ সড়কে অধিগ্রহণের তালিকায় পড়েছে তাদের মালিকানাধীন জমির প্রায় ৩৪ শতক। ক্ষতিপূরণ পেতে তাদের নামে জেলা প্রশাসন এলএ মামলা সৃষ্টি করে। কিন্তু জমির মূল্যমান বেড়ে যাওয়া ও নগদ খতিপূরণ পাওয়ার লোভে এলাকার অপর একটি পক্ষ খতিয়ানভূক্ত সেসব জমির মালিকানার দাবিদার হয়ে যোগাযোগ করে জেলা প্রশাসকের ভূমি হুকুম দখল (এলএ) শাখায়। ইতোমধ্যে তাদের দাবির পক্ষে নির্ধারিত দাগের অংশ কেটে দ্রুত সৃজন করে একটি নতুন খতিয়ানও । এরই প্রেক্ষিতে তারাও আবেদন করে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার। তাদের খতিয়ানের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপত্তি দাখিল করে তাদের ক্ষতিপূরণ দাবির কার্যক্রম স্থগিত রাখতে গত ৪ জানুয়ারি ভুমি অধিগ্রহণ কর্মকতা বরাবরে আবেদন দেন।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, সে আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের রাজস্ব আদালত সংশ্লিষ্ট দাগের জমির ক্ষতিপূরণ প্রদান কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন এবং আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি এ আপত্তির শুনানীর দিন ধার্য্য করা আছে। কিন্তু রাজস্ব আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে সে দাগের কিছু অংশের ক্ষতিপূরণের চেক ইতোমধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে, জেলা প্রশাসনের ভূমি হুকুম দখল(এলএ)কর্মকর্তা এম এম মাহমুদুর রহমান বলেন, অভিযোগকারির দাগ নাম্বার এক হলেও খতিয়ান ভিন্ন তাই অপর খতিয়ানের একই নাম্বারের কিছু অংশে ক্ষতিপূরণের টাকা হস্তান্তর করা হয়েছে। খতিয়ান ভূয়া হলে তা প্রমাণ সাপেক্ষে টাকা ফেরত আনা হবে।

কিন্তু উক্ত মামলার আইনকৌশলী নুরুল হক বলেন, একটি দাগ বিভিন্ন খতিয়ানে নথিভূক্ত হতে পারে। যেহেতু সে দাগের জমির মালিকানা নিয়ে আপত্তি উঠেছে এবং একটি মামলায় সে দাগের জমির বিষয়ে সকল কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে সেহেতু খতিয়ান ভিন্ন হলেও ঐ দাগের জমির মালিকানা সাব্যস্থ না হওয়া পর্যন্ত আদালতকে সম্মান জানানো এলএ অফিসের উচিত ছিল।

images(2)অপরদিকে, একই এলাকার মোহাম্মদ ইসলামগং ও এহছান উল্লাহর মাঝে দশমিক ৫৬ শতক জমির সৃষ্ট মালিকানা বিরোধ নিয়ে সিনিয়র সহকারি জজ আদালতে ১৩/২০১৬ নাম্বার মামলা চলমান রয়েছে। এ মামলায় এলএ কর্মকর্তাকেও বিবাদী করা হয়েছে। চলমান মামলা নিস্পত্তি না হওয়ার আগেই মালিকদাবিদার এহছান উল্লাহগংদের মাঝে জেলা প্রশাসনের এলএ মামলা ৬/২০১৪-১৫ এর ক্ষতিপূরণ হস্তান্তর করা হয়েছে। এলএ অফিস প্রদেয় চেক এর কার্যকারিতা স্থগিত করতে মোহাম্মদ ইসলামগং জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করলে ভূমি হুকুম দখল কর্মকর্তা টাকা উত্তোলন রদ করতে ব্যবস্থা নিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে এলএ কর্মকর্তা এম এম মাহমুদুর রহমান বলেন, মামলা সম্পর্কে অবগত না থাকায় ভূলে ক্ষতিপূরণের চেক হস্তান্তর করা হয়েছে। অভিযোগ পেয়ে টাকা উত্তোলন স্থগিত করা হযেছে।
কিন্তু সূত্র বলছে ভিন্ন কথা। এলএ অফিসের অধিগ্রহণ সংশ্লিষ্ট সার্ভেয়ার, কাননগো ও অন্যরা এসব আপত্তি উঠা জমির ক্ষতিপূরণ পরিশোধে নির্দিষ্ট কমিশনের বিপরীতে কারো না কারো পক্ষালম্বন করে নয়-ছয় করছেন।

শুধু এ দুটি নয়, এরকম আরো অসংখ্য অভিযোগকারি প্রতিনিয়ত জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার কার্যালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং তথ্য সেবা কার্যালয়ে ভির করছেন।

ইনানী এলাকার ভূক্তভোগী ওয়াহিদুর রহমান বলেন, কাগজপত্র সব ঠিক থাকার পরও টাকা তুলতে তার পরিবারকে এলএ অফিসে লাখে ১৫ হাজার টাকা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। এলএ অফিস সংশ্লিষ্টদের দাবির টাকা আগাম না দিয়ে কেউ ক্ষতিপূরণের চেক হস্তগত করতে পারে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এখানেই শেষ নয়, কমিশনের অংকের উপর নির্ভর করে রাতা-রাতি জমির মালিকও বদর হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে মূল টাকার অর্ধেক পর্যন্ত নিয়ে নেয়া হয়। যেসব মামলায় এমনটি পাওয়া যায় সেসব মামলার পরিসমাপ্তির দায়ভার এলএ অফিসের সংশ্লিষ্টরা নিয়ে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে মালিকানা পরিবর্তনে সার্ভেয়ার ও কাননগোর হাত থাকে বলে ভূক্তভোগীদের অভিমত। কারণ তারাই জমির হের-ফের ভাল বুঝেন।

তবে এসব অভিযোগ সঠিক নয় বলে উল্লেখ করেছেন এলএও এম এম মাহমুদুর রহমান।

মাতারবাড়ির কয়লা বিদ্যুৎ পরিকল্পের ক্ষতিপূরণ প্রদানে অনিয়মের পর মেরিন ড্রাইভ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদানে নয়-ছয়ের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেনকে সন্ধ্যায় ফোন করা হয়। তিনি ফোন রিসিভ না করায় মুঠোফোনে একটি ক্ষুদ্র বার্তা পাঠানো হয়। এর জবাব না দেয়া তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
Desing & Developed BY MONTAKIM