আলোকিত কক্সবাজার ডেক্স:

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের মানুষের চালচিত্র ও প্রকৃতি স্বচক্ষে দেখলেন ফরাসী ও জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। গতকাল সোমবার দিনব্যাপী সফরকারে দেখলেন বাংলাদেশ ও এর জনগণ কিভাবে জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সংগ্রাম করে মানুষ দুর্যোগ মোকাবেলার কৌশল সম্পর্কেও অবহিত হন।
পরে সাংবাদিকদের সফররত দুই মন্ত্রী বলেন, প্যারিসে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে বড় চ্যালেঞ্জ হল জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল যোগাড় করা। ২০২০ সালের পর থেকে এই তহবিল প্রয়োজন হবে। কিন্তু ওই তহবিলের কোন উত্স এখনো নিশ্চিত নয়। প্যারিস সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে একটি আইনগত কাঠামো চুক্তি করার কথা। ক্ষতি প্রশমন করে খাপ খাইয়ে নেয়াই বড় কথা। বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো এজন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে।
ফরাসী পররাষ্ট্রমন্ত্রী লঁরা ফাবিউস বলেন, ফ্রান্স ও জার্মানী ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের পাশে থাকবে। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অংশীদারিত্বমূলক। জলবায়ু পরিবর্তনের মূলকারণ অনুসন্ধান করে কার্যক্রম গ্রহণ আজ সবচেয়ে জরুরি। ২০০৯ সালে কোপেনহেগেন সম্মেলনে ব্যর্থতার কারণ এখনো বিদ্যমান। ১৯৬টি দেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা বুঝে অগ্রসর হওয়া জরুরি।
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক ওয়াল্টার স্টেইন মায়ার বলেন, কেবল বাংলাদেশের মতো পটুয়াখালী বা সাভার এলাকার কৃষক ও হতদরিদ্র মানুষ নয়, সারা বিশ্বের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে টেকসই কার্যক্রমের আওতায় আনা জরুরি। কারণ এসব মানুষের কোন দায় নেই। যেসব বড় দেশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তাদের এখন তা পূরণের সময়। বাংলাদেশ জলবায়ু ইস্যুতে একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত, অন্যদিকে বিশ্ব সভায় জোড়ালো অবস্থান নিচ্ছে। এটা প্রশংসনীয়।
জার্মানির বার্লিন থেকে বিশেষ বিমানযোগে জার্মান ও ফরাসী পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল সকালে ঢাকা এসে পৌঁছেন। ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের এই সফরে তারা বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত্ করেন। দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক ও মধ্যাহ্ন ভোজ করেন। সকালে বিমান বন্দর থেকে তারা সাভারের নিকটবর্তী বংশী নদীতে নৌ ভ্রমণে যান। প্রায় এক ঘণ্টার এই নৌ ভ্রমণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী সফররত দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষের অবস্থা দেখান। নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি ও কমার কারণে ফসলের ক্ষতি, গাছপালা নষ্ট ও পরিবেশের প্রভাব সম্পর্কে সরাসরি অবহিত হন তারা। ফরাসী এনজিও ফ্রেন্ডশীপ এর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক রুনা খান জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে দুই মন্ত্রীকে ব্রিফ করেন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো একসঙ্গে এসে জার্মান ও ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল বিকালে রাজধানীর বারিধারা কূটনৈতিক এলাকায় যৌথ দূতাবাস ভবনের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন। ফ্রান্স ও জার্মানি বিভিন্ন দেশে একসঙ্গে ‘ফ্রাঙ্কো-জার্মান’ দূতাবাস স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশে প্রথম যৌথ দূতাবাস নির্মিত হচ্ছে। সম্পূর্ণ পরিবেশ সম্মত, দূষণ ও বর্জ্যমুক্ত এই যৌথ দূতাবাস ভবন ‘মডেল’ হিসাবে কাজ করবে বলে জানান দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তারা নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করে বলেন, এটি ঐতিহাসিক ঘটনা। বাংলাদেশকেই আমরা ইতিহাস সৃষ্টির জন্য বেছে নিয়েছি। বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অঙ্গীকার প্রশংসনীয়। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জসহ অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ফ্রান্স ও জার্মানি একসঙ্গে বাংলাদেশকে নিয়ে কাজ করবে। ফ্রাঙ্কো-জার্মান এক্ষেত্রে একটি প্রতীক হিসাবে কাজ করবে। বাংলাদেশকে অর্থায়ন, প্রকল্প সহায়তা, প্রযুক্তি ও বিশেষজ্ঞ জ্ঞান দিয়ে আমরা সহযোগিতা করবো।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী যৌথ দূতাবাস উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বলেন, আমরা পরম বন্ধু দেশ ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঐতিহাসিক সফর করলেন বাংলাদেশে। এটি একটি অসাধারণ ঘটনা। দুই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের চমত্কার সম্পর্ক বিদ্যমান। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় দুই দেশ অকুণ্ঠ সমর্থন দেবে। আমাদের উন্নয়নেও দুই দেশ বড় অংশীদার। শান্তি, সৌভ্রাতৃত্ব ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাবে।
পটুয়াখালী সফর বাতিল
ফরাসী ও জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পূর্বনির্ধারিত পটুয়াখালী সফর বাতিল হয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার জন্য তারা হেলিকপ্টারযোগে পটুয়াখালী যেতে পারেননি। পটুয়াখালীর লেবুখালি ও শিয়ালী এলাকায় জার্মান সহায়তায় নির্মিত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র উদ্বোধন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করার কথা ছিল।
মন্তব্য করুন