বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১৭ পূর্বাহ্ন

ভূমিদস্যু ফরিদের দম্ভোক্তি; জেলা প্রশাসক ও এসিল্যান্ডকে ঘুষ দিয়েই দখল করেছি

ভূমিদস্যু ফরিদের দম্ভোক্তি; জেলা প্রশাসক ও এসিল্যান্ডকে ঘুষ দিয়েই দখল করেছি

অনলাইন বিজ্ঞাপন

ছবি-বাঁকখালীর নতুন ব্রীজের পূর্বপার্শ্বে পোনা মার্কেট নামক স্থানে কোটি টাকা মূল্যের খাস জমি দখল করে ফরিদের ভাড়াঘর।
ওয়াহিদুর রহমান রুবেল।।ঘুষ দিলেই প্রতিবন্ধকতা ছাড়া কক্সবাজারে দখল করা যায় সরকারি খাস জমি। ফলে প্রতিযোগিতা দিয়েই চলে পর্যটন নগরীর সরকারি জমি দখল। শুধু খাস জমি দখল নয়, প্রতিনিয়ত দখল হচ্ছে পাহাড়, নালা, নদী। সংশ্লিষ্টরা বলছে কক্সবাজারে ৭০ শতাংশ সরকারি খাস জমিই বেদখলে। এতে একদিকে যেমন নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতকি পরিবেশ ও প্রতিবেশ তেমনি অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি।

অভিযোগ উঠেছে, ঘুষ লেনদেনের কারণে প্রকাশ্যে জবরদখলের ঘটনা ঘটলেও তা উদ্ধারে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না জেলা প্রশাসন। যদিও ঘুষ বাণিজ্যের বিষয় অস্বীকার করে বরাবরের মতো দখলদারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান জেলা প্রশাসন।

জানা যায়, পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে মহাপরিকল্পনার আওতায় এনে সরকার উন্নয়নমূলক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ফলে কক্সবাজারে জমির মুল্য বেড়েছে কয়েকগুণ। এ সুযোগে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সরকারি জমি, পাহাড় এবং নদী দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করে যাচ্ছে ভূমিদস্যুরা। বিভিন্ন সময় পরিবেশবাদী সংগঠনের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষায় নোটিশ দেয়া হলে কিছুটা নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। তবে পরে আর কোন কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়না। সম্প্রতি কক্সবাজার শহরের পেশকার পাড়া এলাকার ফরিদুল ইসলামসহ কয়েকজন ব্যক্তির নেতৃত্বে বাঁকখালীর নতুন ব্রীজের পূর্বপার্শ্বে পোনা মার্কেট নামক স্থানে সরকারি কয়েক কোটি টাকা মূল্যের খাস জমি দখল করে ভাড়া ঘর নির্মাণ করেছেন। দখলের তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে ফরিদ সাংবাদিকদের বলেন, আমি জেলা প্রশাসক ও এসিল্যান্ডকে ঘুষ দিয়েই ঘর নির্মাণের কাজ করছি। আমার বিরুদ্ধে যত লেখালেখি করো কোন কাজ হবেনা। কারণ তাদের সাথে আমার লেনদেন হয়েছে। আপনারাও (সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে) নিয়ে যান। তিনি আরও বলেন, একবার এসিল্যান্ড আমার নির্মাণাধীন ঘর উচ্ছেদ করতে এসেছিল। নগদ টাকা পেয়ে নিরবে চলে গেছে। এরপর থেকে জেলা প্রশাসনের ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি প্রকাশ্যে সামনে আসে।

দখলকৃত জমিতে গৃহ নির্মাণ ও দখল অব্যাহত রাখতে শহরের চিহ্নিত অপরাধী ও সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে প্রতিনিয়ত আড্ডা জমান ফরিদুল ইসলাম। গেল ৮ জুন দখলকৃত জমিতে চিহ্নিত অপরাধী ও সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে পিকনিকের আয়োজন করেন তিনি। এসময় ঘটনাস্থলে কক্সবাজারে ডজনখানিক গণমাধ্যমকর্মী উপস্থিত হলে জেলা প্রশাসককে ঘুষ দেয়ার কথাটি আবারও সাংবাদিকদের জানান ফরিদ। অথচ চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নির্দেশনা দেন জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসকের পক্ষে ডেপুটি কালেক্টর (রেভিনিউ) মনজুর আলমের স্বাক্ষরে এ চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ঘটনাস্থলে গিয়েও সরকারি জমি দখলমুক্ত করেনি সহকারী কমিশনার।

স্থানীয় বাসিন্দা এডভোকেট আব্দুল খালেক বলেন, উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে ভূমিদস্যু ফরিদুল আলম খাস জমি এবং এলজিইডি নির্মিত কালর্ভাট সংলগ্ন পানি চলাচলের নালা দখল করে গৃহ নির্মাণের ফলে আমার মালিকানাধীন পতিত জমিতে জলবদ্ধতা দেখা দেয়। বর্ষা মৌসুমে কি হবে আল্লাহ জানে। সরকারি খাস জমি রক্ষা এবং উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করতে গেল ১ এপ্রিল জেলা প্রশাসককে আবেদন করি। আমার আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সদর এসিল্যান্ড ঘনাস্থল উপস্থিত হয়েও সরকারি জমি উদ্ধার করেননি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ভূমিদস্যু ফরিদ নাকি জেলা প্রশাসক ও এসিল্যান্ডকে বিপুল টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেছে। তাই তার দখলকৃত খাস জমি কেউ উচ্ছেদ করতে আসবেনা।

জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামী ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ফরিদ নামে যে ব্যক্তির কথা বলা হচ্ছে তাকে সরকারি খাস জমি ছেড়ে নিজ উদ্যোগে সরে যেতে বলেছিলাম। যদি দখল না ছেড়ে স্থাপনা করে থাকে তবে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: শাহিন ইমরান বলেন, আমাকে নিয়ে কে কি বললো আমি জানি না। যদি সরকারি জমি কেউ দখল করে থাকে তবে উচ্ছেদ করা হবে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
Desing & Developed BY MONTAKIM