মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ০৩:১৯ অপরাহ্ন
ছবি-আটক আরসা নেতাসহ গ্রেফতার-৫
ওয়াহিদুর রহমান রুবেল।।
রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহ হত্যা ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাঞ্চল্যকর সেভেন মার্ডারের পরিকল্পনাকারী সশস্ত্র রোহিঙ্গা সংগঠন আরসার শীর্ষ নেতা মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে মৌলভী অলি আকিজসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। একই সঙ্গে তাদের কাছ থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়।
সোমবার (১০ জুন) দুপুরে কক্সবাজারের র্যাব-১৫ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাহিনীটির অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন। আটক আকিজের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, অপহরণসহ ২১টির বেশি মামলা রয়েছে।
এর আগে রোববার রাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৪ এ বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন র্যাবের এ কর্মকর্তা।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, উখিয়ার ক্যাম্প-৫, ব্লক-সি, কুতুপালংয়ের মৃত আবুল বাশার ওরফে মৌলভী নাছেরের ছেলে মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে মৌলভী অলি আকিজ (৫০), ক্যাম্প-৬, ব্লক-ডি এর মৌলভী আনোয়ারের ছেলে মো. ফয়সাল ওরফে মাস্টার ফয়সেল (২৮), ক্যাম্প-২০ এক্সটেনশন, এস/৪, বি/৫ এর মৃত মৌলভী রহমত উল্লাহর ছেলে হাফেজ ফয়জুর রহমান (২৪), ক্যাম্প-৮/ই, ব্লক-বি/ ৪৪, বালুখালী এর মৃত করিম উল্লার ছেলে মো. সালাম ওরফে মাস্টার সালাম (২০), ক্যাম্প-২২, উনচিপ্রাং এর আনু মিয়ার ছেলে মো. জুবায়ের (২৪)।
র্যাব-১৫ অধিনায়ক সাজ্জাদ হোসেন জানান, আরসার শীর্ষ নেতা মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে মৌলভী অলি আকিজ দীর্ঘদিন পাশ্ববর্তী দেশে আত্মগোপনে থেকে আরসার শীর্ষ কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি এবং সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ওস্তাদ খালেদের নির্দেশনাক্রমে ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারের নতুন পরিকল্পনা নিয়ে কিছুদিন আগে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। এই তথ্যের সূত্র ধরে মৌলভী অলি আকিজসহ তার সহযোগীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালিয়ে ক্যাম্প-৪ এর একটি পরিত্যাক্ত ঘরে গোপন বৈঠক থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ১টি দেশিয় তৈরী এলজি, ১টি ওয়ানশুটার গান, ১০ রাউন্ড কার্তুজ, ০২ কেজি বিস্ফোরক দ্রব্য, ৩টি বাটন মোবাইল ফোন এবং নগদ ২ হাজার ৫০০ জব্দ করা হয়।
সাজ্জাদ হোসেন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার মো. শহিদুল ইসলাম প্রকাশ মৌলভী অলি আকিজ জানায়, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করায় ওস্তাদ খালেদের নির্দেশে রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মহিবুল্লাহকে নির্মমভাবে হত্যার মূল পরিকল্পনা করেন তিনিসহ অন্যান্যরা। তাছাড়া চাঞ্চল্যকর সেভেন মার্ডারেও সরাসরি অংশগ্রহণের কথা স্বীকার করেন তিনি। ২০২২ সালে গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাবের মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানের সময় আরসা সন্ত্রাসীদের হামলায় গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা খুনের ঘটনায়ও নিজের সম্পৃক্তার কথা স্বীকার করেন। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজারের উখিয়া থানায় ১৩টি হত্যা, ১টি অস্ত্র, ২টি অপহরণ, ২টি এসল্ট, ১টি ডাকাতি এবং বিস্ফোরক আইনে ১টি মামলাসহ বিভিন্ন অপরাধে ২১টি মামলা রয়েছে। তার সঙ্গে গ্রেফতার সকলেই ক্যাম্পে আরসা সংগঠনের হয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার থেকে শুরু করে নানা অপরাধ করে থাকে।
পরে তাদের উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাবের এই কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, র্যাবের অভিযানে এ পর্যন্ত আরসার লজিস্টিক শাখার প্রধান, গান গ্রুপের প্রধান, প্রধান সমন্বয়ক, অর্থ শাখার প্রধান এবং আরসা প্রধান নেতা আতাউল্লাহর দেহরক্ষী মৌলভী অলি আকিজসহ ১১২ জন আরসা সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাদের নিকট থেকে ৫১ দশমিক ৭১ কেজি বিস্ফোরক, ৫টি গ্রেনেড, ৩টি রাইফেল গ্রেনেড, ১০টি দেশীয় তৈরী হ্যান্ড গ্রেনেড, ১৩টি বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র, ৫৪টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ১৬৮ রাউন্ড গুলি/কার্তুজ, ৬৭ রাউন্ড খালি খোসা, ৪টি আইডি ও ৪৮টি ককটেল উদ্ধার করা হয় বলে জানায় র্যাব-১৫।
মন্তব্য করুন