শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:০৮ পূর্বাহ্ন
ছবি-কলাতলী মেরিন ড্রাইভ ভাঙ্গার মুখ এলাকায় ভবন নির্মাণের দৃশ্য।
ওয়াহিদুর রহমান রুবেল।।
উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে কক্সবাজারে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় (ইসিএ) নির্মিত হচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা। এতে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) ও জেলা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবশেবাদীরা। অভিযোগ উঠেছে নির্মিতব্য ভবন মালিকদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে নিরব ভূমিকা পালন করছে জেলা প্রশাসন ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। যদিও এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তারা।
সূত্র মতে, কক্সবাজার সৈকত এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করে ১৯৯৯ সালের ১৯ এপ্রিল এ-সংক্রান্ত গেজেটও প্রকাশ করে সরকার। এ নির্দেশনা মতে, ১২০ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকত, সৈকতের ঝাউ গাছসমৃদ্ধ ৩০০ মিটারে যেকোন স্থাপনা নির্মাণ ও উন্নয়ন নিষিদ্ধ ও ৫০০ মিটার সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করা হয়। যদিও সরকার পরিবর্তনের পর কলাতলীতে খাস জমিকে প্লট করে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে লীজ দেয় তৎকালিন সরকার। চুক্তি মতে কাজ শেষ করতে না পারায় সরকার ২০১০ সালে ৫৯টি প্লট বাতির করেন। ২০১৮ সালে আপিল বিভাগ এ সংক্রান্ত চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি করেন। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) করা এক রীটের বিপরীতে ‘ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান ফর কক্সবাজার টাউন এন্ড সি আপ টু টেকনাফ’ মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী জোয়ার ভাটার মধ্যবর্তী লাইন থেকে পৌরসভার প্রথম ৩০০ মিটার ‘নো ডেভেলপমেন্ট জোন’ উল্লেখ করে এ এলাকায় কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না বলে নির্দেশনা দেয় উচ্চ আদালত। এর সাথে যুক্ত হয় কউকের মাস্টারপ্লান। এ প্লান বাস্তবায়নে কউক সৈকতের ৩০০ মিটারে কোন স্থাপণা নির্মাণ থেকে বিরত থাকতে প্রচারণা চালানো হয়। উচ্চ আদালতের আদেশ থাকার পরও সম্প্রতি কলাতলীর তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস এর পশ্চিম পার্শ্বে জনৈক এমদাদ হোসেন, কলাতলী ভাঙ্গার মুখ এলাকায় সৈকতের মাত্র কয়েক মিটার দুরুত্বের মধ্যে জনৈক আলী আকবরের নেতৃত্বে একটি ভূমিদস্যু গ্রুপ, তার পার্শ্বেই ডাক্তার মিজানুর রহমান এবং লিমনসহ আরও একটি সিন্ডিকেট ভবন নির্মাণের কাজ করছে। অথচ মিজান জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে জেলও খেটেছেন। চারপাশে দেয়াল তোলে ডজন ডজন শ্রমিক দিয়ে চালানো হচ্ছে ভবন নির্মাণের কাজ। বাঁধাহীন স্থাপনার কাজ হচ্ছে দেখে আশপাশের একাধিক প্লটে মাটি ভরাটের কাজ চলে। এতে ইসিএ রক্ষায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মুখথুবড়ে পড়ছে।
ছবি-কলাতলী হোটেল ওশান প্যারাডাইস এর পশ্চিম পার্শ্বে ভবন নির্মাণের চলমান কাজ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজারের সভাপতি সাংবাদিক এইচ এম এরশাদ বলেন, রহস্যজনক কারণে উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না হওয়া দু:খজনক। যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে ইসিএ এলাকায় সব ধরনের অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করা না হয় তবে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে।
তবে জেলা প্রশাসনের দাবি অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মাসুদ রানা বলেন, অভিযান চালিয়ে কলাতলী জোনের এমদাদ হোসেনের নির্মানাধীন ভবনসহ একাধিক প্লটের চলমান কাজ বন্ধ করে স্থাপনাসমূহ আগামী তিনদিনের মধ্যে নিজস্ব উদ্যোগে সরিয়ে নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়।
কিন্তু নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ পালন তো দুরের কথা উল্টো দ্বিগুণ শ্রমকি দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ভূমি মালিকরা। ভবনের কাজ করা শ্রমিকরা জানিয়েছে রবিবার অফিস খোলার আগেই একতলার ঢালাই সম্পন্ন করতে প্লট মালিকের নির্দেশনা রয়েছে।
ভবন নির্মাণ বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে এলিগেন্স ডেভেলপমেন্ট প্রপার্টিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এমদাদ উল্লাহ বলেন, আমার জায়গা আদালতের নিষেধাজ্ঞায় পড়েনি।সংশ্লিষ্টদের অনুমতি সাপেক্ষে কাজ চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। কাজ এগিয়ে নিতে গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতাও চেয়েছেন তিনি।
ছবি-আদালতের আদেশ অমান্য করে নির্মিত ভবন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, বেআইনী সহযোগিতা দেয়ার প্রশ্নই আসে না। ইতিমধ্যে ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এরপরও কেউ যদি নির্মাণ করে থাকে তবে বিষয়টি খবর নিয়ে জানাতে হবে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) চেয়ারম্যান কমডোর (অব.) মোহাম্মদ নুরুল আবছারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। ক্ষদে বার্তা পাঠানো হলেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে, কউক সচিব মো. আবুল হাসেম বলেন, চেয়ারম্যান স্যারের নির্দেশনায় আমরা জেলা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে গত সপ্তাহে নির্মানাধীন স্থাপণায় অভিযান চালিয়ে তা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আবারো কাজ চলে থাকলে প্রসিডিউর মতে নোটিশ পাঠানো হবে। পরে আবারো উচ্ছেদ অভিযান চালাবো।
ইসিএ এলাকায় ভবন নির্মাণ নিয়ে বেলা’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আমি বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছি। দেশে এসেই বিষয়টি আবারও উচ্চ আদালতের নজরে আনা হবে।
মন্তব্য করুন