বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫৫ পূর্বাহ্ন

বিশ্বব্যাংকের কোটি টাকার ‘হাইজ হোল্ড টয়লেট’ প্রকল্প; বুঝিয়ে দেওয়ার আগেই ব্যবহার অনুপযোগী

বিশ্বব্যাংকের কোটি টাকার ‘হাইজ হোল্ড টয়লেট’ প্রকল্প; বুঝিয়ে দেওয়ার আগেই ব্যবহার অনুপযোগী

অনলাইন বিজ্ঞাপন

ছবি-নিম্নমানের রং এবং পিভিসি দরজা।

 

বিশেষ প্রতিবেদক:

নিম্নমানের রং এবং পিভিসি দরজা ব্যবহারের কারণে কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়ার আগেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে উঠছে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কক্সবাজারের চকরিয়ায় নির্মিত ‘হাইজ হোল্ড টয়লেট’। একই সাথে বিনামূল্যের এসব টয়লেট স্থাপনে উপকারভোগীদের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে কোটি টাকা। অভিযোগ উঠেছে তদারকি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগসাজসে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রি ও এসব টাকা আদায় করেছে ঠিকাদরি প্রতিষ্টান ও জনপ্রতিনিধিরা। তবে ক্ষতির ভয়ে মুখ খুলে কেউ কথা বলার সাহস পাচ্ছেনা। এ অবস্থায় দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নিম্নমানের রং ও দরজা ব্যবহারের সত্যতা নিশ্চিত করেন। টাকা আদায়ের বিষয়টিও মৌখিকভাবে অভিযোগ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

জানা যায়, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশর পর বিশ্বব্যাংক ইমার্জেন্সি মাল্টিসেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসফন্স (ইএমসিআরপি) এর ” হাউস হোল্ড টয়লেট” প্রকল্পটি হাতে নেয় সরকার। ১২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নে ২২০০ টি পরিবারে এসব টয়লেট নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। ‘আঁখি এন্টারপ্রাইজ’নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে “হাউস হোল্ড টয়লেট” কাজের ওয়ার্ক অর্ডার পায়। এরআগে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে উপকারভোগীর তালিকা তৈরি করে দাতা প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক। এ তালিকার উপযুক্ততা যাচাই করতে ‘সুশীলন’ নামে একটি এনজিওকে দায়িত্ব দেয় প্রতিষ্ঠানটি। একই সাথে নির্মাণ কাজের তদারকি করার জন্য ‘আইডাব্লিউএম’ নামে আরও একটি প্রতিষ্টানকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

অভিযোগ উঠেছে, তালিকা তৈরির সময় উপকারভোগীদের কাছ থেকে ২-৫ হাজার টাকা আদায় করেছে জনপ্রতিনিধিরা। পরে টয়লেট নির্মাণে সংশ্লিষ্টদের যোগসাজসে নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও নিম্নমানের রং এবং পিভিসি দরজা ব্যবহার করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া উপকারভোগী প্রতিটি পরিবারের কাছ থেকে অফিস খরচ নামে আদায় করা হয়েছে ৩-৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। সে হিসেবে ‘হাইজ হোল্ড টয়লেট’ প্রকল্পে উপকারভোগীদের কাছ থেকে কোটি টাকারও বেশি আদায় করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অথচ বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এসব টয়লেট সম্পূর্ণ ফ্রি।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ল্যাট্রিন নির্মাণে মাটির নিচে দেড় ফুট বেইজ করার নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি। টয়লেটের ভেতরে হোয়াইট ওয়াস ও বাইরে ওয়েদার কোড রং এবং দরজায় ভালমানের পিভিসি দরজা ব্যবহার বাধ্যতামূলক। অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি এক্ষেত্রে নিম্নমানের রং এবং দরজা ব্যবহার করেছে। ফলে কাজ বুঝিয়ে দেয়ার আগেই নষ্ট হয়েছে রং এবং দরজা। অভিযোগ সামনে আসার পর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তদন্তে নেমে অভিযোগের সত্যতাও পেয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কিছু উপকারভোগী জানিয়েছেন, তালিকায় স্থান পেতে জনপ্রতিনিধিদের টাকা দিতে হয়েছে। এরপরে কাজ করতে আসা লোকজনকে দুইবেলা খাবার, নগদ টাকা এবং কাজ শেষে বকশিসও দিতে হয়েছে।

চকরিয়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আল আমিন বিশ্বাস বলেন, এ প্রকল্পের কাজ তদারকির জন্য বিশ্বব্যাংকের নিয়োগ করা আইডাব্লিউএম (ইনস্টিটিউশন অব ওয়াটার মডেলিং) নামে একটি কন্সালটেন্ট ফার্ম রয়েছে। তারাই কাজের নিয়ম-অনিয়ম সবই তদারকি করে। এছাড়া জনপ্রতিনিধিদের দেয়া তালিকা সুশীলন নামে আর একটি এনজিও সংস্থা যাচাইবাছাই করে আমাদের দিয়েছে। এখানে আমাদের কোন কিছুই করার নেই। এসব টয়লেট সম্পূর্ণ ফ্রি, তাই এখানে উপকারভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার কোন সুযোগ নেই। তবে কিছু মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া যাবে।

টয়লেটে রং এবং দরজা নিম্নমানের ব্যবহারের বিষয়টি স্বীকার করে এ প্রকৌশলী আরও বলেন, নির্মাণ শেষ হওয়া টয়লেটের প্রায় ৪৫ শতাংশ ল্যাট্রিন এর রং এবং দরজা ইতিমধ্যে নষ্ট হয়েছে। এসবের তালিকাও করা হচ্ছে। রং এবং দরজা ঠিক করে দেয়ার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের তদারকি প্রতিষ্টান আইডাব্লিউএম এর ইঞ্জিনিয়ার তোজাম্মেল হককে ফোন করা হলে তিনি হাসপাতালে রয়েছেন জানিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও উত্তর দেননি।

অনিয়ম ও টাকা আদায়ের বিষয়ে জানতে আঁখি এন্টারপ্রাইজ এর পরিচালক শফিউল আজম এর ব্যবহৃত নাম্বারে ফোন করা হয়। ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া যায়নি। পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।

তবে সাজ্জাদ হোসেন নামে এক যুবক আঁখি এন্টারপ্রাইজের কাজগুলো নিজে বাস্তবায়ন করছেন দাবি করে প্রতিবেদককে ফোন দিয়ে বলেন, কাজের সিডিউলে ডিস্টেম্বার রং ধরা হয়েছিল। আমরাও সে মতে রং করেছি। এখন ওয়েদার কোড ধরা হয়েছে তাই নতুন করে ওয়েদার কোড রং দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে দরজা নষ্ট হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, সেগুলোর জন্য টাকা বরাদ্দা দিলে আমরা ঠিক করে দিবো। ইতিমধ্যে বন্যায় তাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।

তার দাবি, কোন উপকারভোগী যদি মিস্ত্রিদের খাবার ও বকশিস দেন তাতে আমাদের কি করণীয় আছে ?

জানতে চাইলে কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী মো: মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নিম্নমানের রং এবং পিভিসি দরজা ব্যবহারের যে অভিযোগ উঠেছে তার কিছুটা সত্যতাও পাওয়া গেছে। তাই রং এবং দরজা ঠিক করে দেয়ার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্টানকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অন্যথায় বিল আটকে দেয়া হবে।##


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
Desing & Developed BY MONTAKIM