সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৫২ পূর্বাহ্ন

দেশের উন্নয়ন কিভাবে করতে হবে আমরা জানি; বিএনপি-জামায়ত ধ্বংস করতে জানে-প্রধানমন্ত্রী

দেশের উন্নয়ন কিভাবে করতে হবে আমরা জানি; বিএনপি-জামায়ত ধ্বংস করতে জানে-প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন বিজ্ঞাপন

ছবি-রেল লাইন ও রেল স্টেশন উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি সংগ্রহীত।

 

 

ওয়াহিদ রুবেল,

বিএনপি-জামায়াত উন্নয়ন দেখেনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এদেশ আমাদের। দেশের উন্নয়ন কিভাবে করতে হবে, তা আমরা জানি। বাহির থেকে কেউ এসে ‘খবরদারি’ করলে মেনে নিবো না। আমরা (আওয়ামী লীগ) সৃষ্টি করতে জানি, তারা (বিএনপি-জামায়াত) ধ্বংস করতে জানে। আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারে, সব ছারখার করে। তারা উৎপাদনের চেয়ে আমদানিতে বিশ্বাসী ছিল বলেই দু’যুগেরও বেশি সময় দানাদার শষ্য শুধু আমদানিই করতে হয়েছে। এখন আমরা চাহিদার নিজেরাই উৎপাদন বেশি করি।

শনিবার (১১ নভেম্বর) দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ ও কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশন উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে এসব কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের চোখ-মনের চিকিৎসা করাতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১৫ বছরে দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে। অথচ তারা (বিএনপি-জামায়ত) দেশের উন্নয়ন দেখতে পায়না। তাদের চোখ অন্ধ। তাদের নেতাদের চোখের চিকিৎসা করাতে হবে। চোখের চিকিৎসায় আধুনিক চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। মাত্র ১০ টাকায় সেখানে চিকিৎসা নেওয়া যায়। তাদের অনুরোধ করবো, সেখানে গিয়ে চিকিৎসা নিন। অবশ্য এটি তাদের চোখের দোষ নয়, এটা মনের অন্ধকার। তাদের ব্যাপারে সবাইকে সাবধান থাকতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী এদেশের মানুষের স্বপ্ন ছিল কক্সবাজারের সাথে সরাসরি রেল সংযোগ। কিন্তু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর কোন সরকার রেল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার প্রথমবার ক্ষমতায় এসে পৃথক রেলমন্ত্রণালয় গঠন করে সারা দেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতি করতে চেষ্টা চালায়। আজকে রেলের সঙ্গে কক্সবাজার সংযুক্ত হলো। দোহাজারী-কক্সবাজার ১০২ কিলোমিটার রেললাইনের উদ্বোধন করতে পেরে সত্যি আমি খুবই আনন্দিত। কথা দিয়েছিলাম, সে কথা রাখলাম। আজকের দিনটি বাংলাদেশ তথা কক্সবাজারের জন্য গর্বের দিন।
তিনি বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম বালুকাময় সমুদ্র সৈকত পৃথিবীর কোথাও নেই। রেল চলাচল শুরু হলে দেশের উত্তর-দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের জনগণ স্বল্প সময়ে, অল্প খরচে কক্সবাজার আসতে পারবে। খুলনা থেকে মংলা পর্যন্ত ব্রডগেজ রেললাইন আবার চালু করছি। সমগ্র বাংলাদেশ থেকে যেন কক্সবাজার আসা-যাওয়া করা যায়, সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। রেলেও ওয়াইফাই কানেকশন দিয়ে দেবো। রেলে সেবার মান বাড়বে। ভবিষ্যতে যেন সুন্দরবন থেকেও ট্রেনে আসা যায় তারও উদ্যোগ নেয়া হবে।

ছবি-রেলের টিকিট ক্রয় করছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, গেল সোয়া এক যুগে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করেছি। বড় বড় বাজেট দিয়ে আমাদের সক্ষমতা দেখিয়েছি এবং বাস্তবায়নও করেছি। তবে করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গেছে। আমদানি ব্যয় বেড়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আছে। এজন্য সবাইকে বলবো, যতটুকু জমি আছে সেখানে কিছু না কিছু চাষাবাদ করে নিজের খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করুন। তাহলে আমাদের স্বনির্ভরতা ধরে রাখা সম্ভব।

উপস্থিত সুধীজনের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়নে আমরা যে কাজগুলো করেছি, সবগুলো ব্যবহারে যত্মবান হতে হবে। আধুনিক রেলস্টেশন করে দিয়েছি। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এসে যেন দেখে, বাংলাদেশে উন্নত ও সুন্দর রেলস্টেশন আছে। রেল গাড়িগুলো যেন পরিষ্কার থাকে, যত্রতত্র ময়লা না হয়। নিজেদের সম্পদ মনে করে ব্যবহার করবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা এদেশের সবকিছু নষ্ট করে ধ্বংস স্তুপে পরিণত করেছিল। ধ্বংস স্তুুপের উপর দাড়িয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ গড়ার কাজ শুরু করেন। তিনি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধ, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, কৃষক শ্রমিক সাথে নিয়ে দেশ গড়ার কাজে মানোযোগ দেন। কিন্তু তার আগেই আমরা জাতির পিতাকে হারিয়ে ফেলি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে যারা ক্ষমতায় আসেন তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করতে চেষ্টা করেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের লাঞ্চিত করেছে, দেশকে জঙ্গীবাদের আস্তানায় পরিণত করতে চেয়েছিল। দূর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানোর পর দেশ আজ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চলেছি। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ রুদ্ধ করতে পারবেনা।

ছবি-পতাকা নেড়ে রেল চলাচলের উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বক্তব্য শেষে ১১ নভেম্বর বেলা একটায় কক্সবাজারবাসীর দীর্ঘপ্রতীক্ষিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্প উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। সাথে প্রকল্পের অধীন নির্মিত দেশের একমাত্র আইকনিক রেলস্টেশনেরও উদ্বোধন করেন তিনি।

শনিবার সকাল পৌণে ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা থেকে কক্সবাজার এসে পৌঁছান। বেলা সাড়ে ১১টার তিনি পৌঁছান আইকনিক রেলস্টেশনে। সেখানে রাখাইন শিল্পীরা নাচ-গানের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করে নেন। এরপর সাড়ে চার হাজার সুধীজনের উপস্থিতিতে শুরু হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবির। এরপর ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে আইকনিক রেলস্টেশন ও দোহাজারী কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।

দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেওয়া শুরু করে টানা ৩৩ মিনিট বক্তব্য শেষে আইকনিক রেলস্টেশন ও দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।

ছবি-মাতারবাড়ির কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প।

 

আমাদের রামু প্রতিনিধি নীতিশ বড়ুয়া জানান, আইকনিক রেলস্টেশন ও রেলপথ প্রকল্প উদ্বোধনের পর কক্সবাজার রেল ষ্টেশন থেকে টিকেট কেটে বেলা ১টা ৪০ মিনিটে ট্রেনে চড়ে ২২ কিলোমিটার দূরের রামু স্টেশনের উদ্দেশে রওনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বেলা ২টায় তাকে বহন করা ট্রেনটি রামু জংশনে এসে পৌঁছায়। সেখানে জংশনে উপস্থিত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাথে কুশল বিনিময় করে গাড়ি যোগে রামু সেনানিবাসরে (দশ পদাতিক ডিভিশন) উদ্দেশ্য যাত্রা করেন তিনি। রামু রেলষ্টেশন থেকে সেনানিবাস গেইট পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে স্থানীয় সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমলের অনুসারী সাধারণ মানুষ প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনে নামাজ ও দুপুরের খাবার খেয়ে বিশ্রামের পর বিকাল সাড়ে তিনটায় হেলিকপ্টার যোগে সাগরদ্বীপ মহেশখালীর মাতারবাড়ী যান প্রধানমন্ত্রী।

আমাদের মহেশখালী প্রতিনিধি রকিয়ত উল্লাহ জানান, চারটায় মাতারবাড়ি পৌঁছে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেল উদ্বোধন ও প্রথম টার্মিনালের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সরকার প্রধান। পরে মাতারবাড়ি টাউনশিপ মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে প্রায় আধাঘন্টা ভাষন দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বাবা দেশ স্বাধীন করে দিয়ে বিপদগামীদের হাতে হত্যার শিকার হয়েছেন। দেশের জনগণ আমাকে সরকার প্রধান করেছে, তাই সবার ভাগ্য গড়া আমার নৈতিক দায়িত্ব। সেভাবেই কাজ করছে আওয়ামীলীগ সরকার। উন্নয়ন আপনারা দেখেছেন, আগামীতেও উন্নয়নের ধারা অব্যহত রাখতে নৌকায় ভোট দেওয়া আপনাদের দায়িত্ব। সম্প্রতি আমি ওমরাহ করে এসেছি, সেখানে আমার পরিবারে সদস্যদের মতো দেশের সবার কল্যাণ কামনা করে দোয়া করেছি। আপনারাও আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আমি পরিবারের সবাইকে হারিয়েছি, নতুন করে কিছু হারোনোর নেই। বাবার মতো, এদেশের কল্যাণে কাজ করে মরতে চাই।

ছবি-মাতারবাড়িতে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের পর দোয়া করছেন প্রধানমন্ত্রী।

 

মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার পাশা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তওফিক ইলাহী, বেসমারিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসাইন, তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ নুরে আলম চৌধুরী লিটন এমপি, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার নওফেল, জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আলম মাহমুদ স্বপন, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া, আওয়ামী লীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, মহেশখালী কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ জাফর আলম, কক্সবাজার সদর-রামু-ঈদগাঁও আসনের সংসদস্য সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়য়দার চৌধুরী, ছাত্রলীগের সভাপতি হোসাইন সাদ্দাম।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমণ উপলক্ষ্যে সমুদ্রের কোলঘেঁষা প্রত্যান্ত জনপদ মাতারবাড়িতে শেখ হাসিনার আগমনে সাজ সাজ রব উঠেছে। বদলে যাওয়া জনপদের সাক্ষী হতে সকাল থেকে সাগরপাড়ে অগণিত মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে উপস্থিত হন।

প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে কক্সবাজার শহর ও মাতারবাড়িতে নিশ্ছিন্দ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। তিনদিন ধরে আইকনিক রেলস্টেশন ও রেলপথ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। সেখানে সর্বসাধারণের যাতায়াত নিষিদ্ধ করা হয়। তারপরও প্রধানমন্ত্রীকে একনজর দেখার জন্য আইকনিক রেলস্টেশন, রামু পর্যন্ত রেলপথের দুই পাশ এবং মাতারবাড়ি সমাবেশ স্থলে দাঁড়িয়ে ছিলেন হাজারো নারী, পুরুষ ও শিশু-কিশোর।

ছবি-বাঁকখালী নদীতে খুরুশকুল-কক্সবাজার ব্রীজ।

 

১৫ প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৪ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন:-
আইকনিক রেলস্টেশন ও দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও ১৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব প্রকল্পে মোট ব্যয় ৬৯ হাজার কোটি টাকা।

প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে মাতারবাড়ী আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মিত সেতু, সাবমেরিন কেব্লের মাধ্যমে কুতুবদিয়া দ্বীপকে জাতীয় গ্রিডে সংযুক্তকরণ, উখিয়ার বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প, রামু উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র, চকরিয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুল হামিদ পৌর বাস টার্মিনালের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্প, কুতুবদিয়া ঠান্ডা চৌকিদারপাড়া আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, মহেশখালীর গোরকঘাটা-শাপলাপুরের জনতাবাজার সড়ক, বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভূমি ভরাট, বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প, ঈদগাঁও জাহানারা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, মহেশখালীর ইউনুছখালীর উচ্চবিদ্যালয়, উখিয়ার রতœা ও মরিচ্যা পালং উচ্চবিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন উদ্বোধন।

এ ছাড়া ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেলের টার্মিনাল, টেকনাফের মাল্টিপারপাস ডিজাস্টার রিসিলেন্ট শেল্টার কাম আইসোলেশন সেন্টার, রামুর জোয়ারিয়ানালার নন্দাখালী সড়কে আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় কাব স্কাউটিং সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ভবন নির্মাণ প্রকল্পের।

ছবি-কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশন।

 

যা আছে আইকনিক রেলস্টেশন:

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে ঝিলংজায় ২৯ একর জমিতে ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে চোখধাঁধানো আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন। পুরো স্টেশনের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে চারপাশে ব্যবহার করা হয়েছে কাচ। ছাদের ওপর ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক স্টিল ক্যানোফি। ফলে দিনের বেলা বাড়তি আলো ব্যবহার করতে হবে না স্টেশনে। আর অত্যাধুনিক নির্মাণশৈলীর কারণেই একে বলা হচ্ছে ‘গ্রিন স্টেশন’।

দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপ্রকল্পের পরিচালক মো. সুবক্তগীন গণমাধ্যমকে বলেন, ছয়তলার এই স্টেশনে রয়েছে চলন্ত সিঁড়ি, মালামাল রাখার লকার, হোটেল, রেস্তোরাঁ, শপিংমলসহ আধুনিক সব সুবিধা। ৪৬ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতা সম্বলিত স্টেশনটি সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। যেখানে আছে কনভেনশন হল, ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন বুথ, এটিএম বুথ, প্রার্থনার স্থানও। স্টেশনে ফুড কোর্ট, হোটেল ও শপিং কমপ্লেক্সের বিষয়টি বাইরের এজেন্সি দ্বারা টেন্ডারিংয়ের মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে।

উল্লেখ্য, দোহাজারী-কক্সবাজার ও মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী ঘুমধুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১০ শুরু হয়ে ২০১৩ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে, ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল একনেকে অনুমোদিত হয় এবং এ লাইনে ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৮৫২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। কিন্তু জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ২০১৬ সালে সংশোধিত প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকায়। এ বাজেটে এডিবি ঋণ দেয় ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা আর বাকি চার হাজার ৯১৯ কোটি সাত লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে।

ছবি-উদ্বোধনের দিনে রেল স্টেশনের দৃশ্য।

 

স্থানীয়দের উচ্ছ্বাস:
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কাছাকাছি নির্মিত দেশের প্রথম এবং এশিয়ার বৃহত্তম দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেলস্টেশন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতিহাসের স্বাক্ষী হতে সূধী সামাবেশে যোগ দেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।

অনুষ্ঠানে যোগ আসা এম মঞ্জুর বলেন, কক্সবাজারবাসির দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে আজ। আমরা আজ গর্বিত।

বোরহান উদ্দিন খোকন বলেন, কক্সবাজারে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা আসলে আবেগ আপ্লুত। আমরা যা চেয়েছি তার চেয়েও বেশি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই আমরা দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে আবারো নৌকা মার্কায় ভোট দিবো।

সাবেক ছাত্রনেতা মোর্শেদ হোসেন তানিম বলেন, আমরা অনেক বেশি খুশি ও আনন্দিত। আমরা মনে করি প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আছেন বলেই দেশে একের পর এক উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা কক্সবাজারবাসি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ। রেলে করে আমরা সমগ্র দেশে ঘুরে বেড়াবো এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজারো পর্যটক কক্সবাজারে আসবেন।

যুবলীগ নেতা এহসানুল করিম বলেন, কক্সবাজারের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন আজ পুরণ হয়েছে। আমরা বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঋণী হয়ে গেলাম। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনে সে ঋণের প্রতিদান দিবো আমরা।

শ্রমিক লীগ নেতা মো: আব্দুল্লাহ বলেন, আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছি। বাপ বাদার কাছে শোন গল্প আজ সত্যি হলো। বলার বা বুঝাবার ক্ষমতা আমার নেই।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
Desing & Developed BY MONTAKIM