বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:১৮ অপরাহ্ন

কক্সবাজারে এক রাতে তিন নারী ধর্ষণ ৩০ দিনে হাসপাতালে সেবা নিয়েছে ৬৭ জন

কক্সবাজারে এক রাতে তিন নারী ধর্ষণ ৩০ দিনে হাসপাতালে সেবা নিয়েছে ৬৭ জন

অনলাইন বিজ্ঞাপন

প্রতিকী ছবি।

 

 

 

ওয়াহিদ রুবেল।।

কক্সবাজারে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ধর্ষণের ঘটনা। শুধু আগস্ট এক মাসে ধর্ষণের শিকার হয়ে হাসপাতালে চিকি’ৎসা সেবা নিয়েছেন ৬৭ জন নারী। তবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এই মাসে ২৬ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। সর্বশেষ ৪ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজার শহরের পৃথক দুটি কটেজে তিন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুইজন নৃত্য শিল্প ঢাকা থেকে কক্সবাজার এসেছিলেন। অপরজন কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুলের বাসিন্দা। এ ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। আটক করা হয়েছে দুইজনকে।

কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কক্সবাজার শহরের হোটেল মোটলে জোনে পৃথক স্থানে তিন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় পৃথক দুটি মামলায় দুইজনকে আটক করা হয়েছে। মামলা দুটি ট্যুরিস্ট পুলিশকে দেয়া হয়েছে।

আটককৃতরা হলেন, কক্সবাজার পৌরসভার মোহাজের পাড়া এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলামের ছেলে সোলাইমান শামীম (২৩)। সদর উপজেলার খুরুশকুল মেহদী পাড়া এলাকার খালেক।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের ‘ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস’ (ওসিসি) এ দায়িত্ব প্রাপ্ত সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনা লাইলা বলেন, একমাসে ৬৭ জন ভূক্তভোগী ধর্ষণের চিকিৎসা সেবা নিতে হাসপাতালে এসেছেন।

জেলা প্রশাসনের এক গোপন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গেল আগস্ট মাসে প্রথম পক্ষকালে ১৫ জন এবং দ্বিতীয় পক্ষকালে ১১জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রেম ঘটিত বিষয়, বিয়ের প্রলোভন কিংবা দুই জনের সম্মতিতে যৌন সঙ্গমের ঘটনাকে পরবর্তীতে ধর্ষণ মামলা হচ্ছে। আমরা যখন তদন্তক করি তখন এসব বিষয় উঠে আসে। তবে কিছু কিছু মামলায় জোরপূর্বক ধর্ষণের বিষয়টি প্রমাণ মেলে।

এদিকে একমাসে যে পরিমাণ ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে তা পর্যালোচনা করে বিষয়টি উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন সচেতন মহল। পুরুষের বিকৃত মানুসিকতা, অভিযোগের পক্ষপাতমূলক তদন্ত আর বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ধর্ষণ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করছেন তারা। আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং দ্রæত সময়ে বিচার নিশ্চিত করা গেলে ধর্ষণ প্রবণতা কমে আসবে বলেও মনে করেন তারা।

তারা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা আর জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা না গেলে ধর্ষণের ব্যাপকতা কমবে না। এছাড়া নিরাপত্তার অভাববোধ থেকে সংক্ষুদ্ধ পরিবারের অনেকে মামলা দায়েরে আগ্রহ প্রকাশ করেননা। একই সাথে থানা প্রশাসন কর্তৃক মামলা গ্রহণে অনীহা, ক্ষমতার আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে থাকা ব্যক্তি ধর্ষণের সাথে জড়িত হলে প্রভাবশালী ব্যক্তি কর্তৃক তদন্ত ও বিচার কার্যক্রমকে প্রভাবিত করার ফলে আইনের সঠিক বাস্তবায়নও বাধাগ্রস্ত যেমন হচ্ছে তেমনি ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে সঞ্চয়ে থাকেন ভুক্তভোগীরা। ফলে অনেকে গোপনে সামাজপতিদের মাধ্যমে ধর্ষণের ঘটনা মিমাংসা করেন।

তবে, সামাজিক অবক্ষয়কে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার মূল কারণকে দায়ি করেছেন কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল (১) এর সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) এ্যাডভোকেট নুরুল ইসাম সায়েম।

নারী নেত্রী কক্সবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর শাহনা আক্তার পাখি বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা, বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘ সূত্রিতা কমে আসলে ধর্ষণও কমে আসবে। একই সাথে নারীদের বেপরোয়া চালচলন ও অশ্লীল পোষাককে ধর্ষণের এক প্রকার উপকরণ বলেও মনে করেন তিনি।

লিগ্যাল এইড কক্সবাজারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট বাপ্পী শর্মা বলেন, ধর্ষনের মত জঘন্য ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারন আইনের মারপ্যাঁচে বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘ সূত্রিতা ও নানান প্রতিবন্ধকতা। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ও ৯(২) ধারায় ধর্ষনের দায়ে শাস্তির বিধান যাবজ্জীবন। আর মৃত্যু ঘটলে মৃত্যুদন্ডের ও ২০(৩) ধারায় বিচারের জন্য মামলা প্রাপ্তির ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার কার্য সমাপ্ত করার কথা রয়েছে। কিন্তু বিচার তো দুরের কথা, সঠিক সময়ে তদন্ত কার্যও শেষ হয়না। এতে অপরাধীরা আইনকে যেমন তোয়াক্কা করছে না, তেমনি অপরাধ করতেও দ্বিধা করছে না।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
Desing & Developed BY MONTAKIM