বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:৫৫ অপরাহ্ন
ফাইল ছবি সংগ্রহীত।
রাশিয়ার মস্কোয় বিমান দুর্ঘটনায় রুশ ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনারপ্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন নিহত হয়েছেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পরপরই প্রিগোজিনবিহীন ওয়াগনারের ভবিষ্যৎ কী হবে, সে প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগেও ওয়াগনারের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল। গত জুনে রাশিয়ার সামরিক নেতাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পরও ওয়াগনারের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা দেখা দেয়। যদিও তখন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ, আফ্রিকায় ওয়াগনারের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে মিত্রদের আশ্বস্ত করেছিলেন। তবে এবার প্রিগোজিনের মৃত্যুর পর আফ্রিকান মিত্রদের এমন কোনো আশার কথা শোনায়নি রুশ সরকার।
সাম্প্রতিক বছরে মধ্য আফ্রিকা ও সাহেল অঞ্চলে বিদ্রোহীদের উত্থান ও ফ্রান্সবিরোধী বিক্ষোভের সঙ্গে সঙ্গে ওয়াগনারের প্রভাব-প্রতিপত্তি বেড়েছে। পশ্চিমাদের কাছে পোড় খেয়ে রাশিয়া ও ওয়াগনারের দিকে ঝুঁকেছে দেশগুলো।
২০২০ সালের পর আফ্রিকার ৯টি দেশে সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে। সর্বশেষ এ তালিকায় নাম লেখিয়েছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজার। ইকোওয়াসের সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকি ও পশ্চিামাদের চাপের মুখে এরই মধ্যে ওয়াগনারের কাছে সহায়তা চেয়ে রেখেছে নাইজারের জান্তা সরকার।
আফ্রিকায় ওয়াগনারের প্রভাব-প্রতিপত্তি জোরদারে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন প্রিগোজিন। অন্তর্ধানের আগের দিনও আফ্রিকাকে আরও স্বাধীন ও মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। তবে তার এমন হঠাৎ অন্তর্ধানে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশের সরকার। বিশেষ করে সামরিক সরকার রয়েছে এমন মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলো। কেননা বিরোধী বা বিদ্রোহী দমনে তারা প্রিগোজিননের ওয়াগনার বাহিনীর ওপর অধিক মাত্রায় নির্ভরশীল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রিগোজিন না থাকলেও আফ্রিকায় রাশিয়ার প্রভাব যেন বজায় থাকে, তা নিশ্চিত করবে ক্রেমলিন।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক জন লেচনার, আফ্রিকায় রাশিয়ার উপস্থিতি থেকে অনেক রুশ প্রতিষ্ঠান সুবিধা নিচ্ছে। সেই সম্পর্ক অব্যাহত থাকুক, তারা তাই চাইবে।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের আফ্রিকা প্রোগ্রামের সিনিয়র সহযোগী ক্যামেরন হাডসন বলেন, মালি ও মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের ক্ষেত্রে ওয়াগনারের নীতি খুব বেশি পরিবর্তন হবে না। কারণ সেখানে আগে থেকেই সম্পর্ক ও চুক্তি আছে। আর রাশিয়ানরা এসব চুক্তির প্রতি সম্মান দেখানোর কথা জানিয়েছে। এখন মূল প্রশ্ন হলো বুর্কিনা ফাসো ও নাইজারের মতো যেসব দেশে ওয়াগনার নিজেদের উপস্থিতি বাড়াতে চাচ্ছে সেখানো কী হবে? রুশ সরকারের অধীনে কি সেই সম্প্রসারণ অব্যাহত থাকবে?
প্রিগোজিনের মৃত্যুর কারণে নতুন দেশের কাছে ওয়াগনারের আবেদন কমতে পারে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এরপরও এই ভাড়াটে সেনাদল নতুন নতুন দেশে প্রবেশ করতে পারে।
লেচনার বলেন, আমি মনে করি প্রিগোজিনের মৃত্যুর পরও ওয়াগনার যদি নাইজারে প্রবেশ করে তাহলে আমাদের অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমরা একটা ভীতিকর পরিবেশের মধ্যে আছি। নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়ে আফ্রিকান সরকারগুলোর বিদেশি দেশের কাছে সহায়তা চাওয়ার বিকল্প খুব কম।
আর হাডসন বলেন, ক্ষমতা ও সরকার টিকিয়ে রাখতে আফ্রিকার অবৈধ সরকারগুলোর নিরাপত্তা সহায়তা প্রয়োজন। মূল বিষয় হলো তারা ভাড়াটে সেনা সরবরাহ করে না, এসব সেনা তাদের প্রয়োজন।
সূত্র : আলজাজিরা, কালবেলা।
মন্তব্য করুন