বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:২৮ পূর্বাহ্ন
প্রতিকী ছবি।
সুলতান আহমেদ।
দেশের একশ্রেণির মানুষের খুব সখ হইছে গণতান্ত্রিক ভোটের অধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাওয়ার। কারণ, এটা গণতান্ত্রিক দেশের মৌলিক অধিকার। কিন্তু ভোটের অধিকার প্রয়োগ করে জনগণের লাভ কি? ১৯৯১-৯৬ সালের বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। আবার ১৯৯৬-২০০১ সালের সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। আবারও ২০০১-০৬ সালের সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে অগণতান্ত্রিক ফখরুদ্দিন সরকারকে ক্ষমতায় বসার সুযোগ দিয়েছিল। যারা দুইবছর ক্ষমতায় ছিল। তাদের দুইবছর পর আবারও ২০০১-০৬ সালের সরকারের বিরোধীপক্ষ আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় বসালো। একবার একপক্ষ তো আবার অপরপক্ষ। বিজয়ী পক্ষ লাভবান হয়, বিজিত পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু জনগণ কি পায়?
একপক্ষ দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তো, অপরপক্ষ লুটপাট করে নিঃশেষ করে দিয়ে দেশে মঙ্গা পরিস্থিতি তৈরি করে গরীব মানুষকে অভুক্ত রাখে।
একপক্ষ বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে তো, অপরপক্ষ খাম্বা দেখাইয়া দেশকে অন্ধকারে রাখে। একপক্ষ দেশকে বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ডিজিটাল বানায় তো, অপরপক্ষ দেশকে এনালগ করে পিছিয়ে দেয়, পিছিয়ে দেয়ার স্বপ্ন দেখায়। একপক্ষ দেশকে জঙ্গি-সন্ত্রাস থেকে মুক্ত করে তো, অপরপক্ষ দেশকে জঙ্গির আস্তানা বানায়। একপক্ষ দেশের মূল জনবল কাঠামো বিসিএস এর নিয়োগকে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করে তো, অপরপক্ষ দুর্নীতির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে মেধাবীদের বঞ্চিত করে দুর্বল ও অযোগ্যদের নিয়োগ দেয়। একপক্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি বন্ধ করে দিয়ে এনটিআরসির মাধ্যমে মেধাবীদের নিয়োগ দেয় তো, অপরপক্ষ কমিটির সভাপতি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অযোগ্যদের নিয়োগ দিয়ে দেশের বারোটা বাজিয়ে কোটি কোটি টাকা কামায়। একপক্ষ দেশকে দুর্নীতির হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করে তো, অপরপক্ষ দেশকে একটানা পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বানায়। একপক্ষ দেশের মানুষকে সঠিক তথ্য দিয়ে নিরাপদে রাখতে চায় তো, অপরপক্ষ গুজব ছড়িয়ে মানুষকে আতঙ্কিত করে।
জনগণকে ধোঁকা দেওয়ার কি সুন্দর গলাবাজি! গণতান্ত্রিক ভোটাধিকার চায়! দেশ ও দেশের মানুষ নিরাপদে রাখবার গ্যারান্টি তো দেয় না! দেশকে দুর্নীতি মুক্ত করার গ্যারান্টি তো দেয় না! অতীতের পাপ থেকে মুক্ত হবার প্রতিশ্রুতি ও গ্যারান্টি তো দেয় না!
দেশে আর বোমাবাজি না হবার গ্যারান্টি তো দেয় না! দেশের উন্নয়ন প্রকল্প চালু রাখবার গ্যারান্টি তো দেয় না! দেশকে এগিয়ে নেওয়ার গ্যারান্টি তো দেয় না! শুধু অশিক্ষিত ও কুশিক্ষিত জাতিকে ভোটাধিকারের গল্প শোনায়! দেশে যারা শিক্ষিত আছে, তাদের বেশিরভাগ তো কুশিক্ষিত! আওয়ামী সমর্থনকারীরা আওয়ামী শাসনের ভুল বা অন্যায় কিছু দেখেন না। সব-ই ঠিক দেখেন। বিএনপি সমর্থনকারীরা বিএনপির অতীতের নৈরাজ্যকর শাসন পরিস্থিতি চোখে তো দেখেন নাই, বরং সবকিছুতে শুধু ভালোই দেখেছিলেন!
মাহমুদুর রহমানের আমার দেশ পত্রিকা বিএনপিকে আল্লাহর শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি হিসেবে দেখেন, যেখানে কোনদিন বিএনপির দোষ তো দূরের কথা, ভুলত্রুটিও উঠে আসেনি। কী চমৎকার! আমার দেশের গণতন্ত্র! গণতন্ত্রের সূতিকাগার গ্রিসের দার্শনিকগণ বলেছিলেন, ‘গণতন্ত্র যাতে কার্যকর হতে পারে সেজন্য আসলে জনগণকে যথেষ্ট শিক্ষিত হতে হয়, যাতে করে তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে।
দেশের জনগণ কখন যথেষ্ট শিক্ষিত হবে? যাতে যোগ্য নেতাকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নির্বাচিত করতে পারে। কখন দেশে যোগ্য নেতা তৈরি হবে? যাতে দেশ ও দেশের মানুষ নিরাপদে থাকতে পারে আর মৌলিক অধিকার ভোগ করতে পারে।
লেখক-সহকারী অধ্যাপক।
মন্তব্য করুন