বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:৪৪ অপরাহ্ন
ছবি-মেয়র প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ, শহিদুল হক সোহেল, তাহমিনা চৌধুরী লুনা এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল।
ওয়াহিদ রুবেল।।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রয়াত সভাপতি একেএম মোজাম্মেল হকের প্রভাব ছিল সব সময়। তার মৃত্যুর পর চার সন্তান ও এক মেয়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। সাধারণ মানুষের গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তাকে কাজ লাগিয়ে আগামী ১২ জুন অনুষ্ঠিতব্য পৌরসভা নির্বাচনে বড় ছেলে মাসেদুল হক রাশেদ দলের বাইরে নাগরিক কমিটির ব্যানারে নির্বাচন করছেন। এ অবস্থায় পরাজয় ঠেকাতে দলের বিভিন্ন পদবী থেকে মোজাম্মেল পরিবার সন্তানদের বহিষ্কার করেছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন। যদিও মোজাম্মেল পরিবার সন্তানদের দাবি দল থেকে বহিষ্কার করে তাদের জয় ঠেকানো যাবে না। উল্টো সাধারণ মানুষের সহানুভূতি বাড়ছে তাদের প্রতি।
তথ্য মতে, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত প্রয়াত একেএম মোজাম্মেল হকের বড় ছেলে মাসেদুল হক রাশেদ। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও তার ছোটভাই শহিদুল হক সোহেল জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক, ছোটবোন তাহমিনা চৌধুরী লুনা যুব মহিলা লীগের সভাপতি এবং কায়সারুল হক জুয়েল জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব। আগামী ১২ জুন অনুষ্ঠিতব্য পৌরসভার নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচন করায় মাসেদুল হক রাশেদকে দলের সাধারণ সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী হিসেবে আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান চৌধুরী।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, আঞ্চলিকতা আর প্রয়াত মোজাম্মেল হকের জনপ্রিয়তাসহ নানা কারণে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থীর চেয়ে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে আছেন নাগরিক কমিটির প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ। দিন দিন এ জনপ্রিয়তা আরো বাড়ছে।
নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে দুই প্রার্থীর প্রচারণায় ততই নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে রাশেদকে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপরে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব থেকে বহিষ্কার করা হয় রাশেদের ছোটভাই কায়সারুল হক জুয়েলকে। জুয়েল কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।
যদিও জুয়েলের দাবি, আহবায়কের অসাংগঠনিক কর্মকান্ড ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে এর আগেই পদত্যাগ করেছেন তিনি। এর কয়েকদিন যেতে না যেতে বহিষ্কার করা হয় জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি ছোটবোন তাহমিনা চৌধুরী লুনাকে। যদিও জুয়েলের মতো লুনাও দাবি করেছেন পারিবারিক কারণে দলের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়েও কেন্দ্রীয় সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে আবেদন দিয়েছিলেন তিনি। সর্বশেষ গেল ৮ জুন জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় রাশেদের ছোটভাই শহিদুল হক সোহেলকে। তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়।
তবে সোহেলের দাবি, মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে তিনি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠি ছিলেন তিনি। দলের এমন সিদ্ধান্তে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন তিনি।
আর সোহেলকে বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যবাহী মোজাম্মেল পরিবারকে পদবী শূন্য করা হয়েছে। এরফলে কক্সবাজার আওয়ামী রাজনীতিতে সুদূর প্রসারি প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
সোহেল বলেন, আমার ভাই নাগরিক কমিটির ব্যানারে ভোট করলেও আমি সব সময় দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছি। মিটিং, মিছিল গণসংযোগসহ সব ধরনের কর্মকান্ডে অংশ নিয়েছি। তারপরও আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিষয়টও অত্যান্ত দু:খজনক। দলের এ ধরনের সিদ্ধান্ত আমার প্রতি চরম অবিচার। তবে এটি বুঝতে পেরেছি একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে আমার পরিবারকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। দলের ক্ষতি করে এ চক্রটি তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে চলছে।
উল্লেখ্য, রাশেদের অপর ভাই সাবেক স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা শাহিনুল হক মার্শাল জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন পদবী হারালেও রাশেদের জনপ্রিয়তায় কোন ভাটা পড়েনি। উল্টো তাদের প্রতি মানুষের সহানুভূতি বাড়ছে। ফলে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে নৌকার পরাজয় ঠেকানো যাবে না।
নাগরিক কমিটির প্রার্থী রাশেদ বলেন, জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে আমি প্রার্থী হয়েছি। জনগণই আমাদের শক্তি। তাই বহিষ্কার করে আমার বিজয় ঠেকানো যাবে না। মোজাম্মেল পরিবার সব সময় মানুষের পক্ষে ছিল, আছে এবং থাকবে।
মন্তব্য করুন