রবিবার, ২৮ মে ২০২৩, ১০:০৬ পূর্বাহ্ন
ছবি-সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অব:) দেলোয়ার হোসেন খান।
সম্ভবনাময় পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে বিনিয়োগ করে বিভিন্ন সময় প্রতারিত হয়েছেন পর্যটন শিল্পে বিনিয়োগকারীরা। এবার আরএফ বিল্ডারর্স নামে একটি ডেভলাপমেন্ট কোম্পানীর সাথে যৌথ ব্যবসায় ২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারণার শিকার হয়েছেন সাবেক এক সেনা কর্মকর্তা। এমনকি চুক্তিকরা ফ্লাট বুঝে নিতে গিয়ে হামলা মামলারও শিকার হয়েছেন অভিযোগ করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৭এপ্রিল) দুপুরে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের কাছে আবেগ জড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলেছেন ভূক্তভোগী অব: মেজর দেলোয়ার হোসেন খান। তিনি ‘ওয়েসিস হোটেল এন্ড রিসোর্ট কোম্পানী লিঃ নামে একটি বেসরকারি কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর।
তিনি বলেন, আরএফ বিল্ডারর্স নামে একটি কোম্পানী হাজী দেলোয়ারের সাথে ২০১১ সালে আমার কোম্পানীর একটি ব্যবসায়ীক চুক্তি হয়। আমরা উভয় কোম্পানী ‘ওয়েসিস হোটেল এন্ড রিসোর্ট’ নামে ৫ তারকা মানের ১৪ তলা বিল্ডিং প্রকল্পে হাতে নিই । সে মতে ব্যাংক একাউন্টও খোলা হয়। যেখানে আমার কোম্পানী বিনিয়োগ করে প্রায় ২৫ কোটি টাকা। কিন্তু আইনী জটিলতার কারণে কউক ও জেলা প্রশাসনের কোন অনুমোদন ছিল না। এ তথ্য আমার কাছে গোপন রাখে হাজী দেলোয়ার।
সাংবাদিকদের মেজর দেলোয়ার আরো বলেন, প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে হাজী দেলোয়ার আমাকে পর্যটন খাতে বিনিয়োগ করিয়ে প্রতারিত করেছে। তিনি বলেছিলেন ৬ মাসের মধ্যে আমাকে মুলধন ফেরত দিবেন। কিন্তু ৫ বছরেও ফেরত না পাওয়ায় আমাদের অন্যন্য প্রকল্পগুলো অর্থাভাবে থমকে যায়। ফলে কোটি কোটি টাকার ঋণ খেলাপী এবং প্রচন্ড অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে পতিত হয় কোম্পানী।
তিনি বলেন, ফ্লাটের প্রকৃত মালিকদের সাথে আমাকে চুক্তি করিয়ে দেয়ার কথা বলে ২০১৮ সালে ১ জুলাই দেলোয়ার ‘ওয়ার্ল্ড বীচ রিসোর্ট ডেভলপমেন্টের পক্ষে ২০২৮ সাল পর্যন্ত আমার সাথে ভাড়া চুক্তি করেন। আমি হোটেলের প্রতিটি রুম এবং লবির সৌন্দর্য বর্ধন করতে আমি আরো কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করি। কিন্তু ফ্লাটের প্রকৃত মালিকদের সাথে আমাকে চুক্তি করিয়ে না দিয়ে নিজের ইচ্ছে মত ভাড়া তুলে টাকা আত্মসাৎ করছে দেলোয়ার। এতে আমি যেমন প্রতারিত হচ্ছি তেমনি প্রকৃত ফ্লাট মালিকরাও ভাড়া পাচ্ছেননা।
কান্না জড়িত কণ্ঠে অব: মেজর বলেন, আমার জীবনের সব উপার্জন আমি কক্সবাজারে বিনিয়োগ করেছি। অথচ আজ আমি পথে পথে ঘুরতেছি বউ বাচ্ছা নিয়ে। দেলোয়ারের প্রতারণায় পড়ে আমি আজ সর্বশান্ত হয়েছি। দেলোয়ার শুধু আমার সাথে প্রতারণা করেছেন এমন না। আমার চুক্তি বহাল রেখে জনৈক কুদ্দুস এবং ৩/৪ জন অবসর প্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তদের সাথে চুক্তি করেন। এরপর আরো দুইজনের সাথে চুক্তি করেন দেলোয়ার। যা শুধুই প্রতারণা। সর্বশেষ আমাকে ফ্লাট বুঝিয়ে না দিয়ে দুবাই চলে যান দেলোয়ার। এরআগে প্রতারণার শিকার হওয়ায় আমি কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান, কউক চেয়ারম্যান ফুরকান আহমেদ এবং পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজিকে অভিযোগ করেছি। সর্বশেষ আরবিট্রেশন করা হয়েছে। সর্বক্ষেত্রে বৈঠক করে আমার পক্ষে রায় এসেছে। এবং আমাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হাজী দেলোয়ারকে বলা হয়েছে। কিন্তু তিনি কারো কথা আমলে নেয়নি। এছাড়া আরবিট্রেশন রায় অনুযায়ী হাজী দেলোয়ার আমাকে সব মিলিয়ে প্রায় ৮০ কোটি টাকা দিতে বাধ্য। মূলত টাকা পরিশোধ না করতে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে দেলোয়ার।
মেজর (অব:) আরো বলেন, বছরের ১৮ এপ্রিল আমার শ্যালক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের কোচ রাজু আহমেদ রাজ আমার বাড়িতে বেড়াতে এলে হাজীর ছেল ওমর ফারুকের নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত তার উপর অতর্কিত হমালা চলায়। আমি বাঁধা দিলে আমার উপরও চড়াও হয় । আহত অবস্থায় তাকে সদর হাসপাতাল এ ভর্তি করা হয়। সেখানেও দ্বিতীয় দফা হামলা চালায় ফারুখ ও এনাম গ্যাং। হাসপাতালে নিরাপত্তা অবস্থার কথা চিন্তা করে রাজু তার এক বন্ধুর ছোট ভাইয়ের মাধ্যমে কক্সবাজার ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মারুফ আদনানের সহযোগিতা চাইলে মারুফ আমাদের সহযোগিতা করেন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি থেকে শুরু করে অন্যান্য বিষয়ে সহযোগিতা করেন। পরে এ ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে। কিন্তু দু:খের বিষয় অদ্যবধি কোন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়নি।
উল্টো হাজী দেলোয়ারের পালিত সন্ত্রাসীরা নিজেরা হোটেলে ভাংচুর করে আমাকেসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। যেখানে মামলায় ২ নং আসামী করা হয়েছে সন্ত্রাসী হামলায় আহত রুজুকেও আসামী করা হয়েছে। অথচ রাজু এখনো হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ল্যান্ড ওনার অ্যাডভোকেট আশরাফুল আলম বলেন, আমি খতিয়ানভূক্ত জমির মালিক। আমাদের সাথে ডেভলাপের ৩০-৭০ শতাংশের মালিকানা চুক্তি হয়। অথচ হোটেলের মারামারির ঘটনায় আমাকে হাজী দেলোয়ার আমাকে আসামী করেছে। পর্যটন শিল্প বিকাশের জন্য আমরা জমি দিয়ে এখন মামলার আসামী হচ্ছি। মূলত হাজী দেলোয়ার একজন প্রতারক।
মন্তব্য করুন