বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:২৮ পূর্বাহ্ন
এস.এম.ছগির আহমদ আজগরী পেকুয়া
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের সুন্দরীপাড়ার ছনুয়া নদীর চরে উৎপাদিত হচ্ছে কিটনাশকমুক্ত নির্ভেজাল শুঁটকি। সম্পূর্ন প্রাকৃতিক উপায়ে ওই চরাঞ্চলে উৎপাদিত হচ্ছে শুটকি। প্রায় তিন একর জায়গায় গড়ে উঠেছে শুটকি তৈরির অস্থায়ী মহাল। আর এখানে শুটকি উৎপাদনের ধুম পড়েছে।
বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী বাশঁখালী উপজেলার ছনুয়া ও কক্সবাজার জেলার উত্তর প্রান্তে রাজাখালী ইউনিয়নের মাঝখান দিয়ে কুতুবদিয়া চ্যানেল থেকে ছনুয়া নদী বয়ে গিয়েছে উত্তর দিকে। ওই নদীর মোহনা রাজাখালীর সুন্দরীপাড়া শুটকি উৎপাদনের জন্য এটি একটি উত্তম স্থান। জেলেদের সাগরের আহরিত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ প্রক্রিয়াজাত এর মাধ্যমে এ মহালে নিয়ে আসা হয়। বিশেষ কায়দায় রোদ্রে শুকিয়ে তৈরি করা হচ্ছে শুটকি। স্থানীয় একজন মৎস্যজীবি নিজস্ব অর্থায়নে এ মহালটি শুটকি উৎপাদনের জন্য তৈরি করেছে। প্রতিদিন শত শত কেজি শুটকি ওই মহাল থেকে উৎপাদিত হচ্ছে। সামুদ্রিক নানান প্রজাতির মাছ এ মহালে শোভা পেয়েছে। কোন ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়া সম্পুর্ন প্রাকৃতিক উপায়ে হচ্ছে শুটকি। ছনুয়া নদীর তীরবর্তী হওয়ায় এখানে রোদ্রের প্রচন্ড তাপ রয়েছে। এছাড়া বায়ু চলাচলের কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা নেই। তাই রোদ ও বাতাসের সংমিশ্রনে দ্রæত কাচা মাছ রুপান্তরিত হচ্ছে শুটকি হিসেবে। রাজাখালীতে শুটকি উৎপাদন হওয়ায় এর প্রাণচাঞ্চল্যতা দেখা গেছে স্থানীয় অর্থনীতিতে। ওই মহালকে ঘিরে শতাধিক নারী পুরুষ প্রতিদিন শুটকি পল্লীতে মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরন কাজে সম্পৃক্ত হয়েছেন। রাজাখালী ছাড়াও পার্শ্ববর্তী চট্টগ্রাম জেলার দক্ষিন বাশঁখালীর বেশ কিছু বেকার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে ওই শুটকি পল্লীকে ঘিরে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত দু’বছর ধরে রাজাখালীর পশ্চিম অংশে আমিনবাজারের উত্তর পাশে ছনুয়া নদীর চরে একটি শুটকি মহাল মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরনে সম্পৃক্ত হয়েছে। মেসার্স তামিম ফিস নামের একটি প্রতিষ্টান ওই শুটকি মহালটির অর্থ যোগান দাতা এর স্বত্তাধিকারী মোহাম্মদ হামিদ হোছাইন নিজেই উদ্যেগী হয়ে রাজাখালীর চরে এ কাজ চলমান রেখেছেন। জানাগেছে, ওই শুটকি মহালের উৎপাদিত শুটকি সরাসরি চ্ট্টগ্রাম শহরের আসাদগঞ্জ তার গুদামে নিয়ে যান। সেখান থেকে ওই শুটকি বাংলাদেশের প্রত্যান্ত বাজারসহ বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। শুটকিগুলোর মধ্যে লইঠ্যা, ছুরি, ফাইস্যা, রুপচান্দা, মাটিয়া, পোহা, চিংড়ি ও লাক্ষা মাছ উল্লেখযোগ্য। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে শুটকি মহাল পরিদর্শনে দেখা গেছে, মেসার্স তামিম ফিস নামের ওই শুটকি মহালে শুটকি উৎপাদনের ধুম তৈরি হয়েছে। নদীর চরে বোট ও জেলেদের নৌকা থেকে সামুদ্রিক আহরিত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উঠানো হচ্ছে। এসব মাছ মহালে সংরক্ষন করা হয়। পানিতে পরিশুদ্ধ করার পর এসব কাচা মাছে আংশিক লবন মেশানো হচ্ছে। পরে গিটি তৈরি করে এগুলো ওই মহালের একাধিক মাছায় টাঙ্গানো হচ্ছে রোদে শুকানোর জন্য। তবে কোন ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ হচ্ছেনা। শ্রমিকদের মধ্যে অনেকে জানিয়েছেন, ওই মহালটি রোদ ও বায়ু নিষ্কাশনে সর্বাধিক উপযুক্ত স্থান হওয়ায় এখানে কোন ধরনের কীটনাশকের প্রয়োজন হয়না। তাছাড়া কাচা মাছে যেসব কীটপতঙ্গ আক্রমন করার লক্ষন থাকে এ মহালে তা হয়না। দেখা গেছে প্রায় ৭০জন পুরুষ ও ৫০জন নারী শ্রমিক এ মহালে কাজ করছেন। এছাড়া কয়েকজন কিশোরও রয়েছেন। তারা দৈনিক মজুরি নিয়ে এ মহালে করছেন। তবে রাজাখালীর চরে শুটকি উৎপাদন হওয়ায় সেটির প্রতি দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে স্থানীয়দেরও। নির্ভেজাল শুটকি হাতের নাগালে পাওয়া যাওয়ায় অনেকে ওই মহাল থেকে ক্রয় করছেন। দুর দুরান্তে নিকট আত্মীয়কেও বিষমুক্ত শুটকি উপহার দিচ্ছেন। আত্মকর্মসংস্থানের জন্য রাজাখালীর চরে ওই শুটকি মহালের গুরুত্ব বেড়েছে। দারিদ্র বিমোচন ও কর্মসংস্থানের জন্য এর ভুমিকা মানুষের নজরে এসেছে। সেই সাথে প্রাকৃতিক উপায়ে কিটনাশক ও ভেজাল মুক্ত শুটকি মাছ উৎপাদনে জড়িতরা তাদের উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়াতে সরকারী পৃষ্টপোষকতা প্রয়োজন সব চাইতে বেশি।
মন্তব্য করুন