রবিবার, ২৮ মে ২০২৩, ০৯:২০ পূর্বাহ্ন
প্রতিকী ছবি।
আলেমা হাবিবা আক্তার
নেক কাজ ও আল্লাহর নৈকট্য লাভে ইসলাম নারী ও পুরুষ উভয়কে সমানাধিকার দিয়েছে। তাই পুণ্যের কাজে নারী-পুরুষ পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে। বিশেষত রমজানের রহমত ও বরকত লাভে নারী ও পুরুষ উভয়ে সচেষ্ট থাকবে। কেননা পুণ্যের সুফল তাদের উভয়ের জন্য সমান। আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন হয়ে পুুরুষ ও নারীর মধ্যে যে ব্যক্তি পুণ্যের কাজ করবে তাকে আমি নিশ্চয়ই পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৯৭)
কিন্তু রমজানে বহু নারীকে পুণ্য লাভের প্রতি উদাসীন দেখা যায়, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
নারীদের যেসব ভুল হতে পারে
রমজান মাসের মহামূল্যবান সময়কে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে মুমিন নারীদের যেসব ভুল হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১. রান্নাঘরে বেশি সময় কাটানো : রমজান ধৈর্য ও সংযমের মাস। রমজানে আল্লাহ খাদ্য-পানীয় পরিহারের নির্দেশ দিয়েছেন বান্দাকে সংযম শেখাতে। কিন্তু বহু মানুষ রমজানে সংযমের পরিবর্তে আরো বেশি বিলাসী হয়ে ওঠে। ইফতার ও সাহরিতে বাহারি খাবারের চাহিদা বেড়ে যায় তাদের। তাদের এই চাহিদা মেটাতে নারীদের দীর্ঘ সময় রান্নাঘরে কাটাতে হয়। বহু নারী শখের বশেও তা করে থাকেন। এতে তাঁরা কোরআন তিলাওয়াত, জিকিরসহ অন্যান্য ইবাদত থেকে বঞ্চিত হন। এমন নারীদের প্রতি কোরআনের নির্দেশনা হলো, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো; প্রত্যেকেই ভেবে দেখুক আগামীকালের (পরকাল) জন্য সে কি অগ্রিম পাঠিয়েছে।’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ১৮)
২. অনর্থক রাত জাগা : সংসারের প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করার পরও বহু নারী অনর্থক রাত জাগেন। তাঁদের কেউ কেউ টেলিভিশন ও মোবাইল ফোনে চোখ রেখে সময় পার করে দেন। অনেকে আবার সারা রাত জেগে থাকেন। ইসলামের নির্দেশনা হলো ব্যক্তি দ্রুত ঘুমিয়ে পড়বে। আর কোনো কারণে ঘুম না এলে কোরআন তিলাওয়াত ও তাহাজ্জুদ নামাজে সময় কাটানো। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা রাতের খুব সামান্য অংশই ঘুমাত এবং শেষ রাতে তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করত।’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত ১৭-১৮)
৩. পর্দার প্রতি উদাসীন থাকা : রমজান মাসে পারিবারিক ও সামাজিক বহু অনুষ্ঠান ও আয়োজনে নারীদের অংশগ্রহণ করতে হয়। কখনো নিজ ঘরে আত্মীয়-স্বজনকে আপ্যায়ন করতে হয়। এসব আয়োজনের সময় বহু নারী পর্দার প্রতি উদাসীন থাকেন। যেকোনো সময়ই পর্দা লঙ্ঘন করা গুনাহ। রমজানে তা করা আরো গুরুতর। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে নারী সুগন্ধি ব্যবহার (সাজসজ্জা) করে বের হয়, অতঃপর কোনো গোত্রের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে যেন তারা ঘ্রাণ পায় সে ব্যভিচারিণী, (তাকে দেখা) প্রতিটি চোখ ব্যভিচারী।’ (জামিউস সগির, হাদিস : ২৭০১)
৪. ঈদের কেনাকাটায় সময় নষ্ট করা : রমজান মাসে ঈদের কেনাকাটা করার প্রচলন আছে। পুরুষদের মতো বহু নারী ঈদের কেনাকাটা করতে গিয়ে বহু সময় ও অর্থ ব্যয় করেন, যা কোনোভাবেই উচিত নয়। রমজানে দীর্ঘ সময় শপিং মল ও বাজারে সময় কাটানোয় বেশ কিছু দ্বিনি সমস্যা হয়। যেমন—পর্দা নষ্ট হওয়া, নামাজ কাজা হওয়া, অর্থ ও সময় নষ্ট হওয়া, ইবাদতের সুযোগ হারানো ইত্যাদি। অথচ আল্লাহ মুমিনদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন এভাবে, ‘সেসব লোক, যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ, নামাজ কায়েম ও জাকাত প্রদান থেকে বিরত রাখে না। তারা ভয় করে সেদিনকে যেদিন অনেক অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।’ (সুরা : নূর, আয়াত : ৩৭)
৫. বিশেষ দিনে সব ইবাদত ত্যাগ করা : শরিয়ত নারীদের প্রতি মাসের বিশেষ দিনগুলোতে নামাজ-রোজা থেকে বিরত থাকতে বলেছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে তাঁরা এ সময় কোনো ধরনের ইবাদতই করতে পারবেন না। এই বিশেষ সময়েও তাঁরা জিকির-আজগার, তাওবা, ইস্তিগফার, মোনাজাত ও দোয়া করতে পারেন। বহু নারীকে দেখা যায় বিশেষ দিনগুলোতে তাঁরা সব ধরনের ইবাদত ও প্রার্থনা ত্যাগ করেন, যা শরিয়ত ও রমজানের দাবি পরিপন্থী।
৬. শেষ দশকের ইবাদত না করা : রমজানের শেষ দশক মুমিনের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা এই দশকে মহিমান্বিত রাত লাইলাতুল কদর রয়েছে বলে হাদিসে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। এই দশকে মহানবী (সা.) অধিক পরিমাণে ইবাদত-বন্দেগি করতেন এবং পরিবারের সদস্যদেরও উদ্বুদ্ধ করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, রমজানের শেষ দশক এলে রাসুল (সা.) কোমর শক্ত করে বেঁধে নিতেন, রাত জেগে থাকতেন এবং পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০২৪)
অথচ শেষ দশকেই যেন তাঁদের পারিবারিক ব্যস্ততা বহুগুণ বেড়ে যায়। তাঁরা ঈদের কেনাকাটা, ঈদের রান্না করা, মেহমান আপ্যায়ন করা, ঘরবাড়ি প্রস্তুত করা ইত্যাদি কাজে ব্যস্ত হয়ে যান। নারীদের উচিত সব ব্যস্ততা উপেক্ষা করে ইবাদতে মনোযোগী হওয়া।
৭. শিশুদের ইবাদতে অভ্যস্ত না করা : যদিও প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগ পর্যন্ত শিশুদের জন্য নামাজ-রোজা আবশ্যক নয়, তবে তাদের ধীরে ধীরে ইবাদতে অভ্যস্ত করে তোলাও গুরুত্বপূর্ণ। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) এমনটিই করতেন। রুবাইয়া বিনতে মুআব্বিজ (রা.) বলেন, পরবর্তীতে আমরা ওই দিন (আশুরা) রোজা পালন করতাম এবং আমাদের শিশুদের রোজা পালন করাতাম। আমরা তাদের জন্য পশমের খেলনা তৈরি করে দিতাম। তাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁদলে তাকে ওই খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতাম। আর এভাবেই ইফতারের সময় হয়ে যেত। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৬০)
আল্লাহ রমজানে সময়টুকুর যথাযথ মূল্যায়ন করার তাওফিক দিন। আমিন।
মন্তব্য করুন