শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:২৩ পূর্বাহ্ন

টেকনাফ স্থলবন্দর; ডলারের ইচ্ছে মতো দাম নিচ্ছে ব্যাংক

টেকনাফ স্থলবন্দর; ডলারের ইচ্ছে মতো দাম নিচ্ছে ব্যাংক

অনলাইন বিজ্ঞাপন

ফাইল ছবি।

।।ওয়াহিদ রুবেল।।

ডলার সংকটের কারণে সরকারি ব্যাংকগুলোতে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) বন্ধ রাখা হয়েছে অনেক আগেই। এ অবস্থায় কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীদের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত ডলার মূল্য আদায় করছে বেসরকারি ব্যাংক এবি ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে অতিরিক্ত ৭ থেকে ১০ টাকা না দিলে এফডিডি (ফ্র্যাঞ্চাইজ ডিসক্লোজার ডকুমেন্ট) দেয়া হয় না ব্যবসায়ীদের। ফলে এক প্রকার বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত দামে অর্ডারে আসা মালামাল ছাড়াতে হচ্ছে তাদের।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সংকটের অজুহাতে বেসরকারি ব্যাংকে এফডিডি খুলতে গেলে ডলারের দাম নিচ্ছে ইচ্ছে মতো। বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে অতিরিক্ত ৭ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেশি না পেলে এফডিডি দেননা ব্যাংক কতৃপক্ষ। আর বেসরকারি ব্যাংক হতে ফ্র্যাঞ্চাইজ ডিসক্লোজার ডকুমেন্ট (এফডিডি) মাধ্যমে পণ্যের দাম পরিশোধ করতে গিয়ে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করতে হচ্ছে মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত আদা, মাছ, পেয়াজ, রসুন, শুটকি ও আচারসহ সব পণ্য।

ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য মতে, গেল সোমবার ডলারের দাম ১০৬ টাকা ৯০ পয়সা থাকলেও টেকনাফে চলতি সময়ে এফডিডি দেয়া একমাত্র ব্যাংক এবি ব্যাংক সোমবার ডলার প্রতি দাম রেখেছে ১১৫ টাকা ২৩ পয়সা। অথচ বাড়তি টাকার কোন রশিদও দেয়া হয় না।

তাদের দাবি, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হওয়ায় জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সুপারিশ ও তদবির ছাড়া এফডিডি পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে।

টেকনাফ বন্দরের শীর্ষ ব্যবসায়ী মেসার্স ফারুক টেডার্সের স্বত্বাধিকারী ওমর ফারুক বলেন, সোমবার একটি এলসিতে ২৯ হাজার ৯৪০ ডলারের বিপরীদে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এতে ডলারের দাম পড়েছে ১১৫ টাকা ২৩ পয়সা। কিন্তু আমাকে ১০৬ টাকা ৯০ পয়সার রশিদ দিয়েছেন। কাঁচামাল নষ্ট হওয়ার ভয়ে যা চেয়েছে সেই দরেই এফডিডি নিতে বাধ্য হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, ডলার সংকট দেখিয়ে অনেক আগেই সোনালী ব্যাংক লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে। এরপর হতেই মূলতো এ জটিলতা সূষ্টি হয়েছে।

ব্যবসায়ী আবু আহমদসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা বলেন, এখন একমাত্র এবি ব্যাংকই এফডিডি দিচ্ছে। চাহিদার পরিবর্তে যোগান কম হওয়ায় সরকার নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত মূল্যে ডলার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

টেকনাফ বন্দরের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্রতিদিন কম করে হলেও ১৭টি এফডিডি দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া দর থেকে ৭ থেকে ৯ টাকা বেশি নিয়ে প্রতিদিন ৩৫-৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এবি ব্যাংক। অতিরিক্ত টাকা গুনতে হওয়ায় বেশি দামে বাজারে ছাড়তে হচ্ছে তাদের।

শুধু তাই নয়, নিয়মিত এফডিডি নেতাদের তদবীরের ছাড়াও হয় না। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের সরকারি দলের বড় নেতা বা এমপিদের তদবীরে এফডিডির সিরিয়াল আগে-পরে মিলে।

তাদের মতে, এবি ব্যাংক টেকনাফ শাখা এখন সরকারি দলের দলীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন কোন না কোন ব্যবসায়ীর পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ নেতারা এফডিডির তদবীর করে নিয়ে যাচ্ছেন। আর এ সুযোগে অনৈতিকভাবে ডলারে দর বেশি রাখছে এবি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, নেতা বা বড় আমলার তদবির রক্ষা করতে গিয়ে সিরিয়ালে থাকা অনেক ব্যবসায়ী নিয়ম মতো এফডিডি পান না। সময়মত এফডিডি না পেয়ে কাঁচামাল নষ্টের ঘটনাও ঘটেছে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা।

সালাম এন্ড ব্রাদার্স’র স্বত্বাধিকারী আবদু সালাম বলেন, আমি গত বছরের ডিসেম্বর এফডিডির সিরিয়াল পেয়েছিলাম। এরপর থেকে ডলার সংকটের কারন দেখিয়ে আমাকে এখন পর্যন্ত আর সুযোগ দেয়া হয়নি। তবে সরকার দলীয় নেতা দিয়ে যারা তদবীর করছে তারা নিয়মিত এফডিডির সুযোগ পাচ্ছে। চাহিদা বেশি থাকায় ডলার প্রতি বাজার থেকে ৭ থেকে ৯ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দিতে হচ্ছে।

ডলারের দাম বাড়তি নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন এবি ব্যাংক টেকনাফ ব্রাঞ্চ ম্যানজার মনজুর আলম চৌধুরী। তবে, তিনি এ বিষয়ে কোন ব্যাখ্যা না দিয়ে ব্যাংক হেড অফিসের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
Desing & Developed BY MONTAKIM