বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন
ছবি-ট্রলারে করে ফিরছেন পর্যটকরা।
বিশেষ প্রতিবেদক।।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে সমুদ্র বন্দরে ২নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি করায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-পথে পর্যটকবাহি জাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। রবিবার (১৯ মার্চ) সকালে টেকনাফের দমদমিয়া ঘাট থেকে পর্যটকবাহী কোনো জাহাজ সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়নি। ভোরে হঠাৎ মেঘলা আকাশ ও ঝড়োবৃষ্টি শুরু হওয়ার পর সকালেই টেকনাফ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তৎক্ষণাত নৌ-পথে জাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। দমদমিয়া ঘাট থেকে পর্যটনের এ মৌসুমে প্রতিদিন ৮টি পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করে আসছে।
এদিকে, সেন্টমার্টিনে জাহাজ না যাওয়ায় আগের দিন দ্বীপে রাত্রিযাপনে থেকে যাওয়া প্রায় হাজারখানেক পর্যটক সেন্টমার্টিনেই আটকা পড়েছে। এদের অনেকের আজকে (রবিবার) ফেরার কথা ছিল। দ্বীপে থাকতে পর্যটকদের কোনো সমস্যা না হলেও যাদের রবিবারেই ঢাকা বা নিজ গন্তব্যে যাত্রা করার কথাছিল তারা বিকেলে ট্রলার ও স্পীডবোটে করে টেকনাফের উদ্দেশ্যে সেন্টমার্টিন ছেড়েছে বলে জানিয়েছেন দ্বীপের হোটেল ব্যবসায়ীরা।
পর্যটকবাহী জাহাজ কেয়ারী সিন্দাবাদ ও কেয়ারী ডাইন এন্ড ক্রুজের ব্যবস্থাপক মো. শাহ আলম বলেন, সাগর উত্তাল এবং ২নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত থাকায় রবিবার সকালে জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেয় উপজেলা প্রশাসন। আগে বিক্রি করা টিকেট নিয়ে পর্যটকরা নির্ধারিত সময়ে ঘাটে এলেও জাহাজ ছাড়তে না পারায় টিকেটের টাকা ফেরত দেয়ার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ভ্রমণে গিয়ে রাত্রি যাপনে থেকে যাওয়া প্রায় এক হাজারের মতো পর্যটক দ্বীপে রয়েছেন। তারা হোটেল-মোটেলে নিরাপদে আছেন। সাগর স্বাভাবিক হয়ে গেলে আবার জাহাজ যাবে এবং থেকে যাওয়া পর্যটকদের ফিরিয়ে আনা হবে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা ও টুরিজম ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদ এবং হোটেল ব্যবসায়ী মো. দিদারুল আলম বলেন, হাজারখানেক পর্যটক দ্বীপে অবস্থান করছিল। আমাদের কটেজে অনেক পর্যটক একদিন আবার কোন পর্যটন দুদিনের জন্য জন্য কক্ষ ভাড়া নিয়েছিলেন। অনেকের ররিবার ফিরে যাবার কথা ছিল। যেহেতু হঠাৎ সমুদ্র উত্তাল হয়েছে, তাই তাদের রুম ছাড়তে জোর করা হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পর্যটকেরা ফিরে যাওয়ার কথা ছিল।
তারা আরো জানায়, রবিবার বিকেলে হঠাৎ পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে চারটি কাঠের বোট (ফিশিং ট্রলার) ও ১০-১২টি স্পীড বোটে করে কয়েকশ’ পর্যটক নারী-পুরুষ ঝুঁকি নিয়ে দ্বীপ ছেড়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সেন্টমার্টিন যাতায়াত বন্ধ রাখতে সংশ্লিষ্ট সকলকে বলা হয়েছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে সেন্টমার্টিন যাতায়াত ফের শুরু হবে। দ্বীপে ভ্রমণে গিয়ে আসতে না পারা পর্যটকদের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়গুলো নজরে রাখা হচ্ছে বলেও উত্তর করেন ইউএনও।
কাঠ ও স্পীড বোটে পর্যটকদের ফেরার বিষয়ে ইউএনও বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। কাউকে এভাবে ঝুঁকি নিয়ে আসতে অনুমতি উপজেলা প্রশাসন দেয়নি। যারা যাত্রা করেছেন প্রশাসনের অগোচরে, ঝুঁকি নিয়ে। মাঝপথে কোন অঘটন ঘটলে তার দ্বায় কে নেবে? তাই কারা পর্যটকদের ঝুঁকি নিতে উদ্বুদ্ধ করেছে তাদের চিহ্নিত করতে চেষ্টা চলছে।
কোস্টগার্ড সেন্টমার্টিন স্টেশন কমান্ডার লে. রাগীব বলেন, দুপুরের পর থেকে আবহাওয়া নৌযান চলাচল উপযোগী হওয়ায় পর্যটকরা ফিরে যাবার প্রচেষ্টা চালায়। ট্রলার সার্ভিস পরিচালকরা চলাচল উপযোগীতার কথা বলায় কাঠ ও স্পীড বোটে যেতে ইচ্ছুকদের বহনে মৌখিক সম্মতি দেয়া হয়। এরপরই অনেক পর্যটক দ্বীপ ত্যাগ করেছে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, রবিবার সকালে কালবৈশাখীর প্রার্দূভাব দেখা দেয়ায় নৌ-রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ করেছিল প্রশাসন। কিন্তু বেশি বৃষ্টি হয়নি এবং বেলা ১১টা হতে আবহাওয়া স্বাভাবিক হয়ে যায়। দ্বীপে অবস্থান করা পর্যটকদের মাঝে যাদের ফেরার তাড়া ছিল তারা কাঠ ও স্পীড বোটে করে বিকেলে দ্বীপ ছেড়েছে।
মন্তব্য করুন