বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:৪৯ অপরাহ্ন
ফাইল ছবি।
সরকারি বনজ সম্পদ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, বন সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ এবং বনের উপর সরাসরি নির্ভরতা হ্রাসসহ বনজ সম্পদ উজাড়রোধে কল্পে সরকার সাস্টেনেইবল ফরেস্ট এন্ড লাভলীহুডস প্রজক্ট (সুফল) বা টেকসই বন ও জীবিকা প্রকল্প গ্রহণ করেন। এ প্রকল্পের আওতায় বননির্ভর জনগোষ্ঠির তালিকা তৈরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের বিকল্প জীবিকায়নের ব্যবস্থা করার কথা রয়েছে। একই সাথে বেসরকারি নার্সারি মালিকদের প্রশিক্ষিত করে তোলার কথা। কিন্তু বননির্ভর জনগোষ্ঠির তালিকাও যেমন তৈরি হয়নি তেমনি নার্সারি মালিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হয়নি। আলোকিত কক্সবাজারের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ পড়ুন প্রতিবেদনের ৮ম পর্ব।
।।ওয়াহিদ রুবেল।।
সুফল প্রকল্পের আওতায় বনের উপর সরাসরি নির্ভরতার হৃাস, বনের উজাড় রোধ, বনের উপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর বিকল্প জীবিকা এবং অতি দরিদ্র-বিপদাপন্ন নারী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ সাধারণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করার লক্ষে প্রকল্প এলাকায় বসবাসকারীদের তালিকা তৈরি করে প্রশিক্ষণ প্রদান করার কথা। একই সাথে তিন জেলায় সামাজিক বনায়নের নার্সারি সৃজন ও ২ হাজার ব্যক্তি মালিকানাধীন নার্সারি মালিকদের প্রশিক্ষণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ পর্যায় এসেও চূড়ান্ত করা হয়নি বননির্ভর মানুষের তালিকা এবং করা হয়নি বেসরকারি নার্সারি মালিকদের ট্রেনিং এর ব্যবস্থা। ফলে প্রকল্পের আসল উদ্দেশ্য অধরায় রয়ে গেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বনবিভাগ বলছে উপকারভোগীর তালিকা ও নার্সারি মালিকদের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পালন করছেন নেকম’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা। নেকম’র দাবি তারা উপকারভোগীর তালিকা তৈরি করেছে। তবে নার্সারি মালিকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি।
এনজিও সংস্থা নেকম’ সূত্রে জানানো হয়, কক্সবাজার উত্তর-দক্ষিণ বনবিভাগের ১২৬ টি গ্রামে ৮৫৩০ জন উপকারভোগীর তালিকা করা হয়েছে। যেখানে সমিতির মাধ্যমে প্রতিজনকে ৪২ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হবে। উপকারভোগী চিহ্নিত করে ৫৬০০ জনকে লাইভিহোড ও ৪০০০ সাংগঠনিক দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। তবে মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধান করে তাদের দেয়া তালিকার সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। আর যা পাওয়া গেছে তাও বননির্ভর কোন জনগোষ্ঠিও নয়। এবং অন্য একটি প্রজেক্টের তালিকা সুফলের বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে।
আরো পড়ুন-সুফল প্রকল্প- সাইনবোর্ডে সুফল বাগান।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের কক্সবাজার রেঞ্জের লিংকরোড় বিটের কয়েকজন ভিলেজার জানিয়েছেন, তাদের ইক্যুলাইফ প্রজেক্টরের আওতায় প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এখনো সুফলের কোন প্রশিক্ষণ তারা পাননি। এমনকি সুফলের তালিকাও করা হয়নি।
নেকমের বরাত দিয়ে তারা আরো বলেন, সুফলের নাকি বরাদ্দ শেষ হয়েছে। যখন শুরু হবে তখন তাদের তালিকা করা হবে।
সরজমিনে কক্সবাজার রেঞ্জের হিমছড়ি বিট আওতায় বনে বসবাসকারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যখন চারা রোপন করা হয় তখনই তাদের ডাকা হয়। সুফল প্রকল্পের কোন তালিকায় তাদের নাম নেই প্রশিক্ষণ তো দুরের কথা। তাদের অভিযোগ সরকারি বাজেট থাকলেও শ্রমিকদের কোন পারিশ্রমিক দেয়া হয়না। আবার লিংকরোড় বিটের আওতায় যেসব উপকারভোগীদের তালিকা করা হয়েছে তাদের অনেকে বনের উপর যেমন নির্ভর নন, এমন কি তাদের বসবাসও প্রধান সড়কের পাশে। মনগড়া তালিকা তৈরি করে প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের জন্য এমন অনিয়ম বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
আরো পড়ুন-সুফল প্রকল্পে সুফল নিয়ে সঞ্চয় !
নেকম’র দেয়া তালিকায় কলাতলী এলাকার একটি সমিতির নেতা জানিয়েছেন তিনি এখনো কলেজ ছাত্রী। তাদের অনেকে অবিবাহিত। আর সিংহভাগই বন নির্ভর নন।
তাহলে তাদের কেন তালিকায় স্থান দেয়া হলো তা জানতে চাইলে নেকমের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো: শফিকুল রহমান বলেন, বন থেকে পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত জায়গায় তালিকার করার কথা বলা হয়েছে। সে হিসেবে কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী পর্যন্ত তাদের তালিকায় স্থান পেয়েছে। সেখানেও তাদের উপকারভোগী রয়েছে।
তবে সুফল প্রকল্প থেকে বেসরকারি নার্সারি মালিকদের কোন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় আমরা কোন প্রশিক্ষণ দেইনি। বনবিভাগ দিয়েছে কিনা জানি না।
বনবিভাগ বলছেন, তালিকা তৈরি করে প্রশিক্ষণের দায়িত্ব নেকমের। তারা না করলে এটি করা হয়নি।
মন্তব্য করুন