বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:০৬ অপরাহ্ন

রোজার আগে খেজুরের দামে ‘কারসাজি’

রোজার আগে খেজুরের দামে ‘কারসাজি’

অনলাইন বিজ্ঞাপন

ফাইল ছবি

 

 

রমজান এলেই চাহিদা বাড়ে খেজুরের। বিশেষ করে দেশের মোট খেজুরের চাহিদার অর্ধেক বিক্রি হয় এই সময়ে। রমজানের সময় এগিয়ে আসায় এবার বাড়ছে খেজুরের দাম। কার্টনপ্রতি (৫ কেজি) খেজুরের দাম বেড়েছে ৩০০ থেকে ৮০০ টাকারও বেশি। শুধু খেজুর নয়, রমজান এলে আপেল, কমলা, আঙুর, বেদানাসহ (আনার) জনপ্রিয় বিদেশি ফলের চাহিদা বাড়ে।

চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় সুযোগটি কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির আমদানিকারক, কমিশন এজেন্ট, পাইকারি আড়তদার থেকে খুচরা ব্যবসায়ী এখনই খেজুর ও ফলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, এলসি খোলার জটিলতা, পরিবহন ব্যয় ও ক্রয়ে বেশি দামের কারণে খেজুর ও অন্য ফলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন কালবেলাকে বলেন, ডলারের অজুহাত দেখিয়ে যে পরিমাণ দাম বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা, সেই পরিমাণ দাম আসলে বিশ্ববাজারে বাড়েনি। খেজুর ও ফলের অনেক মজুত আছে। খেজুর ও ফলের দাম বৃদ্ধির পেছনে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের কারসাজি আছে। এসব বাজারে কারও কোনো তদারকি নেই। তদারকি থাকলে ফল পেতেন ভোক্তারা। বাজার তদারকির বাইরে থাকার কারণে আসলে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা তাদের মতো করে দাম নির্ধারণ করে থাকেন। তাদের মতো করে মুনাফা করে থাকে।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসাবে, দেশে সারা বছর খেজুরের চাহিদা প্রায় এক লাখ টন। তার মধ্যে রমজানে চাহিদা রয়েছে প্রায় ৪৫-৫০ হাজার টন।

কালবেলা পত্রিকা অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে এড়ড়মষব ঘবংি ফিডটি অনুসরণ করুন
এদিকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে খেজুর আমাদানি হয়েছে ৯১ হাজার ৯০৪ টন। বিপরীতে চলতি অর্থবছরের এই সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে খেজুর আমদানি হয়েছে ৫৩ হাজার ৮১১ টন।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন কালবেলাকে বলেন, মোটামুটি মানের খেজুর আমদানি হয়েছে এবার। খেজুর একদম সুপার ভালো বলা যাবে না, আবার খারাপও বলা যাবে না। তবে পোকা বা পচা খেজুর আমদানি হয়নি। তবে এবার সব নতুন খেজুর আমদানি করা হয়েছে।

চট্টগ্রামের ফলমন্ডির ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার কারণে সৌদি আরবে দুই মৌসুম খেজুর অবিক্রীত থাকার গত বছর খেজুর সস্তা ছিল। ফলে গত বছর আমদানিও বেশি হয়েছিল। কিন্তু এ বছর খেজুরের ক্রয়মূল্য বেশি পড়েছে। এ ছাড়া ডলারের মূল্য বেশি হওয়া খেজুরের দাম বৃদ্ধির কারণ।

ব্যবসায়ীরা জানান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, ইরান, তিউনিশিয়া, আলজেরিয়া, জর্ডান ও মিশর থেকে বাংলাদেশে খেজুর আসে। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ইরাকের জাহেদি খেজুর, যা বাংলা খেজুর নামে গ্রামগঞ্জে কেজি দরে বিক্রি হয়। অন্যদিকে ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও চীন থেকে আপেল, কমলা, মাল্টা, আঙুর ও কিসমিস বেশি আমদানি হয়।

খেজুরের আমদানিকারক এস কে ট্রেডার্সের মালিক মোহাম্মদ শফিউল আজম টিপু কালবেলাকে বলেন, ডলারের দাম বেশি ও ক্রয়মূল্য অন্য বছরের তুলনায় এবার বেশি পড়েছে। যার কারণে এ বছর খেজুরের দাম বেশি। খেজুরের দাম বাড়লেও বাজারে খেজুরের সংকট হবে না বলে জানিয়েছেন এই ব্যবসায়ী। তবে দাম আর তেমন কমার সম্ভাবনা নেই বলছেন তিনি।

তিনি বলেন, গত বছর ১০ কেজির এক প্যাকেট জাহিদি খেজুর বিক্রি হয়েছে ৮৫০ টাকায়। এ বছর তা বিক্রি হচ্ছে ১২৫০ টাকায় । আর মরিয়ম খেজুর ৫ কেজির প্যাকেট এবার বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকায়। গত বছর তা বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ২০০ টাকায়। আর মাবরুম খেজুর মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকায়। গত বছর তা বিক্রি হয়েছিলো ২ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায়। আজওয়া খেজুর বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ২ হাজার ৬৫০ টাকা থেকে ৩হাজার টাকায়, যা গত বছর বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়। মাসরুক খেজুর এ বছর বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকায়, একই খেজুর গত বছর বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকায়।

খেজুর আমদানিকারক অ্যারাবিয়ান ডেটস সুপার শপের মালিক জয়নাল আবেদিন আবির কালবেলাকে বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার খেজুরের আমদানি খরচ বেশি পড়েছে, তাই খেজুরের দাম বেশি। তবে বাজারে খেজুরের কোনো সংকট হবে না। রমজানের কারণে নয়, আমদানি খরচ বেশি পড়ার কারণেই খেজুরের দাম বেড়েছে।

ফলমন্ডির পাইকারি খেজুর বিক্রেতা আজওয়া ট্রেডার্সে গিয়ে দেখা গেছে, আমদানিকারক থেকেও ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেশি দামে খেজুর বিক্রি করতে।

আজওয়া ট্রেডার্সের মালিক মো. গিয়াস উদ্দিন নয়ন কালবেলাকে বলেন, এক মাসের ব্যবধানে ক্যারেটপ্রতি খেজুরের দাম বেড়েছে ১০০ টাকার ওপরে। মূলত আমদানিকারকদের কাছ থেকে বেশি দামে ক্রয় করার কারণে আমাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

ফলমন্ডি ঘুরে দেখা গেছে, রমজানকে কেন্দ্র করে দুই মাসের ব্যবধানে চায়না থেকে আমদানিকৃত ১ নম্বর ফুজি আপেলের ২০ কেজির ক্যারেট/প্যাকেট প্রায় ১ হাজার ২০০-১ হাজার ৩০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ১ নম্বর ফুজি আপেল ২০ কেজির ক্যারেট বিক্রয় হচ্ছে ৫ হাজার ৫০০ টাকা দরে, যা দুই মাস আগে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেসার্স রূপা এন্টারপ্রাইজের সাইফুর রহমান রিয়াদ।

রিয়াদ আরও বলেন, বর্তমানে হানি ফুজি আপেল বিক্রয় হচ্ছে ৪ হাজার ৫০০ টাকা, যা দুই মাস আগে বিক্রয় হয়েছিল ২ হাজার ৮০০ টাকায়। অপরদিকে মিশর থেকে আমদানি করা মাল্টার দাম কেমেছে। আগে ৩ হাজার ৩০০ টাকা বিক্রি হলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২৫০ টাকা করে।

ভারত থেকে আমদানি করা কালো আঙুরের ১০ কেজির ক্যারেট বিক্রয় হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ টাকা দামে এবং এই পরিমাণের সাদা আঙুর বিক্রয় হচ্ছে ১ হাজার ৮৫০ টাকা দামে, যা দুই মাস আগে কয়েকশ টাকা কমছিল বলে জানান এই বিক্রয়কর্মী। তিনি আরও জানান, বর্তমানে ফলমন্ডির পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আনার বিক্রয় হচ্ছে ২৮০ টাকা দরে, যা এক মাস আগেও ১৫০ টাকায় বিক্রয় হয়েছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফলমন্ডির এক ব্যবসায়ী বলেন, ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দাম কিছুটা বেড়েছে, তা ঠিক আছে। কিন্তু ফলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। তারা কারসাজি করে ফলের দাম অনেক বাড়িয়ে দিয়েছেন রমজানের আগেই।

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য ও চট্টগ্রাম ফল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী হোসেন সওদাগর কালবেলাকে বলেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও ক্রয়মূল্য বেশির কারণে দাম বেড়েছে। ফল ব্যবসায় কোনো ধরনের সিন্ডিকেট নেই। ফল আমদানি বেড়েছে। সামনে ফলের দাম আরও কমে যাবে।

অপরদিকে, বছরের ব্যবধানে কাজু বাদামের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ১০০ টাকার বেশি। এ বছর কাজুবাদাম বিক্রি হচ্ছে ৮৮০ টাকা করে, যা গত বছর ছিল ৭৫০ টাকা। কাঠবাদাম ১০০ টাকা করে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ টাকায়। পোস্তা গত বছর বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৮০০ টাকা করে, যা এ বছর বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে।

সূত্র-কালবেলা।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
Desing & Developed BY MONTAKIM