বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:৪৬ অপরাহ্ন
ছবি-কক্সবাজার ঈদগাঁও উপজেলায় বনেরজমি দখল করে আবাসিক ভবন নির্মাণ করেছে।
কক্সবাজার বনবিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। যারফলে প্রতিনিয়ত বেদখল হচ্ছে বনভূমি। বনবিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে আলোকিত কক্সবাজারের অনুসন্ধানি ধারাবাহিক প্রতিবেদন।
।।ওয়াহিদ রুবেল।।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জীব-বৈচিত্র সংরক্ষণে দেশের সীমিত বনাঞ্চল রক্ষা ও নতুন বনায়ন সৃষ্টির লক্ষে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন সরকার। কিন্তু কোনভাবেই বন রক্ষা করা যাচ্ছেনা। বরং বন কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতায় কক্সবাজারে দিন দিন বেদখল হচ্ছে বনভূমি। এতে একদিকে যেমন কমছে বনের জমি অন্যদিকে বন্যপ্রাণী হারাচ্ছে তাদের আবাসস্থল আর নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। একই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাতাসে কার্বনের পরিমাণ। এ অবস্থায় বনরক্ষায় কঠোর হওয়ার আবহবান জানান সংশ্লিষ্টরা।
তবে, বন দখলের বিষয়টি পুরাতন বলে দাবি করেছেন বনবিভাগ।
বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারে সংরক্ষিত বনের মোট ২৮ হাজার ৫৪২ জন ব্যক্তি ৩২ হাজার ৯৮৩ দশমিক ৫৮ একর জমি দখল করে রেখেছে। তৎমধ্যে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগে ৯ হাজার ৬০ জন জবরদখলকারী ৫ হাজার ৫৫৮ দশমিক ৮২ একর এবং উত্তর বনবিভাগ ৮ হাজার ১২২ জন ৯ হাজার ৫৫১ দশমিক ৬৫ একর বনভূমি দখল করে রেখেছে প্রভাবশালীরা। সংরক্ষিত বন ব্যতিত অন্যান্য বনভূমি দখল করেছে ব্যক্তি পর্যায়ে ঘর-বাড়ি বসতভিটা ও হাটবাজার, দোকান, রিসোর্ট তৈরিতে ১১ হাজার ৯৩১ দশমিক ২৩ একর জমি দখল করে রেখেছে ১৬হাজার ৭০৪ জন। এছাড়া সরকারি বিভিন্ন বাহিনীকে দেয়া হয়েছে ৩ হাজার ৩০৮ দশমিক ৫৬ একর। সর্বশেষ রোহিঙ্গাদের জন্য কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগে ধ্বংস হয়েছে আরো ৬১৬৪ একর বনের জমি। তবে, বেদখল হওয়া জমির পরিমাণ আরো বেশি বলে দাবি করছেন অনেকে। যদিও জমি উদ্ধারের কক্সবাজার দুই বনবিভাগ ৪৩৫টি পিওআর মামলা করেছেন। যেখানে জেলা প্রশাসনের কাছে উচ্ছেদ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে ৬৪ টি।
অভিযোগ রয়েছে, বিট ও রেঞ্জ কর্মকর্তাদের অনৈতিক লেনদেনের কারণে বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মাঝে মধ্যে নামে মাত্র মামলা দিয়ে নিজেদরে দায়িত্ব শেষ করেন তারা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজারের সভাপতি ফজলুল কাদের বলেন, বন-বনভূমি এবং বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তা দিতে বন বিভাগ ক্রমাগত ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। প্রভাবশালীদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে নিরব ভূমিকা নিয়ে বনভূমি দখলে পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন। তবে যেটুকু বনাঞ্চল রয়েছে তা রক্ষায় এখন থেকে কঠোর হওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
তবে বরাবরের মতোই জনবল সংকট আর আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে বনের জমি দখল মুক্ত করা যাচ্ছে না বলে দাবি করেছেন বনবিভাগ।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সরওয়ার আলম বলেন, বনের জমি দখল অনেক পুরাতন ঘটনা। তারপরও বন রক্ষায় আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করি। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে পর্যপ্ত ব্যবস্থা নেয়া যায় না।
তিনি বলেন, স্থানীয় বিট কর্মকর্তারা বেদখলের বিষয় সম্পর্কে অবগত থাকতে পারেন। কিন্তু আমরা জানিনা।
উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, বনের জমি যুগ যুগ ধরে বেদখল হয়ে আসছে। নতুন করে আর যেন বেদখল না হয় সে চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি। যারা বনের জমি দখল করেছেন তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
জানতে চাইলে উপ-প্রধান বন সংরক্ষক মোঃ জাহিদুল কবির বলেন, দখল উচ্ছেদের জন্য বন বিভাগের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয়া হয়। জেলা প্রশাসক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। কিন্তু জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন সাপোর্ট আমরা পাচ্ছি না।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ আমিন আল পারভেজ বলেন, বনবিভাগ চিঠি দিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করেন। পরবর্তীতে যোগাযোগ না করার কারণে আর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয় না।
মন্তব্য করুন