রবিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:৪৪ অপরাহ্ন
প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিন থেকে ফেরার পথে বাতাসের কবলে পড়েছে পর্যটকবাহী জাহাজগুলো। তবে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ছাড়াই জাহাজগুলো টেকনাফ দমদমিয়া ঘাটে নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে পর্যটকদের নিয়ে সেন্ট মার্টিন থেকে ফিরতি পথে এ অবস্থার মুখোমুখি হয় জাহাজগুলো।
সেন্ট মার্টিন থেকে ফেরার পথে পর্যটকবাহী জাহাজ বাতাসের কারণে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে হেলেদুলে নৌপথ পাড়ি দেওয়ার একাধিক ভিডিও মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। একটি ভিডিওতে দেখা যায় টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে চলাচলকারী পর্যটকবাহী জাহাজ এসটি সুকান্ত বাবু সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের মধ্যে টেকনাফের উদ্দেশে পাড়ি দিচ্ছেন। অন্য একটি ভিডিওতে একই দৃশ্য দেখা যায় পারিজাত নামের একটি জাহাজের। পর্যটকরা জানান, সেন্ট মার্টিন থেকে ফেরার পথে প্রায় সব জাহাজই কমবেশি সাগরে দুলেছিল।
মঙ্গলবার সেন্ট মার্টিন থেকে ফেরা কয়েকজন পর্যটক জানান, সকালে সেন্ট মার্টিন রওনা দেওয়ার সময় বাতাস না থাকায় নাফনদ ও বঙ্গোপসাগর শান্ত ছিল। কিন্তু বিকেলে জাহাজগুলো সেন্ট মার্টিন ছেড়ে কিছুপথ আসতে বাতাস শুরু হয়। এতে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথের বঙ্গোপসাগর অংশে উত্তাল ঢেউ আছড়ে পড়ে। তখন জাহাজগুলো সাগর অংশে বড় ঢেউয়ের ধাক্কায় এদিক-সেদিক দুলে নাফনদে ঢুকে কিছুটা স্বস্তি পায় এবং আশঙ্কামুক্ত হয়।
সেন্ট মার্টিন থেকে ফেরা স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ হাসান জানান, ব্যক্তিগত কাজ থাকায় এবং অনেকটা ঘুরতে গত সোমবার সেন্ট মার্টিন দ্বীপে গিয়েছিলাম। মঙ্গলবার সেন্ট মার্টিন ছেড়ে টেকনাফের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কিছু সময় পর সাগরে বাতাসের কবলে পড়ে জাহাজগুলো। সবগুলো জাহাজ ঢেউয়ের ধাক্কায় কমবেশি দুলছিল। এসময় পর্যটকদের অনেকে ভয় পেয়েছিল। তবে জাহাজগুলো নাফনদে ঢুকে কিছু সময়ের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরে। সন্ধ্যায় নির্ধারিত সময়ে টেকনাফের জাহাজ ঘাটে পৌঁছায়।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা মাহবুব নামের এক পর্যটক জানান, সকালে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার সময় তেমন বাতাস না থাকায় আমরা নিরাপদে সেন্ট মার্টিন পৌঁছি। তবে বিকেলে ফেরার পথে বাতাসের কারণে আমাদের জাহাজসহ অন্য জাহাজগুলোও সাগরের ঢেউয়ের তালে দুলে দুলে পথ চলতে থাকে। ভাগ্য সহায় ছিল, সবকটি জাহাজ বিপদ কাটিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘হঠাৎ প্রচণ্ড বাতাস হওয়ার কারণে প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন থেকে ফেরার পথে সাগরে পর্যটকবাহী জাহজগুলো দুলছিল। প্রতিদিনের সার্বিক পরিস্থিতি তদারকি করতে কাল থেকে মাঠে আমাদের একটি টিম থাকবে।’
টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে চলাচলকারী জাহাজ মালিকদের সংগঠন সী ক্রুজ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (স্কোয়াব) সভাপতি তোফায়েল আহমদ জানান, সেন্ট মার্টিন যাওয়ার সময় সকালে বাতাসের কোনো পূর্বাভাস না থাকায় সব জাহাজ পর্যটকদের নিয়ে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে টেকনাফ থেকে ছেড়ে যায়। তবে সকালে হালকা বাতাস অথবা দিনের কোনো সময়ে বাতাসের পূর্বাভাস থাকলেও প্রয়োজনে জাহাজগুলো না ছাড়তে সিদ্ধান্ত নিতাম। কিন্তু আসার পথে হঠাৎ বাতাস শুরু হওয়ায় সাগরে বড় ঢেউতে জাহাজগুলো অনেকটা হেলেদুলে সাগর পাড়ি দিয়েছে এটা সত্য। তবে এক্ষেত্রে আমাদের সতর্কতা সবসময় রয়েছে।
পর্যটকবাহী জাহাজ কেয়ারী সিন্দবাদ ও কেয়ারী ক্রুজ এণ্ড ডাইন এর টেকনাফের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যবস্থাপক শাহ আলম জানান, সাগরে বাতাসে উত্তাল ঢেউয়ের সৃষ্টি হলে সবকটি নৌযান কমবেশি দুলে এটি স্বাভাবিক। তবে বড় ঢেউয়ে কোনো কোনো নৌযান কম হেলায় দুলে, কোনোটি আবার বেশি।
টেকনাফের স্থানীয় প্রবীণ জেলে আব্দুস সালাম জানান, নাফনদ ও বঙ্গোপসাগরের মিলনমোহনা যেটি স্থানীয় ভাষায় ‘গরা’ বলে সেখানে স্বাভাবিক সময়েও ঢেউ উত্তাল থাকে। বাতাস হলে ‘গরা’ আরো বেশি উত্তাল হয়ে যায়। তখন এই ‘গরা’ পাড়ি দেওয়া সব ধরনের নৌযানের জন্য কঠিন হয়ে যায়। ‘গরা’ পার হলে তেমন একটা ঝুঁকি থাকে না।
সূত্র-কালেরকণ্ঠ
মন্তব্য করুন