বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:৩৯ অপরাহ্ন
ফাইল ছবি রোহিঙ্গা ক্যাম্প।
।।ওয়াহিদ রুবেল।।
রোহিঙ্গা শিশু ফয়সাল (১১)। সে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১৩ এর আমান উল্লাহর ছেলে। বেশ কয়েকদিন ধরে কক্সবাজার বাসটার্মিনাল এলাকায় একটি চায়ে’র দোকানে চাকুরি করছেন। ছেলেটি জানালেন পরিবারের জন্য উপার্জন করতে ক্যাম্প থেকে বেরিয়েছে। শুধু আমান উল্লাহ নয়, তার মতো শত শত শিশু, কিশোর ও যুবক ক্যাম্প ছেড়েছেন কাজের সন্ধানে।
সর্বশেষ গেল ২৯ জানুয়ারি একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অবস্থায় ১১ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে পেকুয়া থানা পুলিশ। পরে তাদের ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়।
জেলা পুলিশের তথ্য মতে, গেল একমাসে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ৭৫৯ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ক্যাম্পে কাজ করা এপিবিএন এর অভিযোগ রোহিঙ্গাদের কাজের অনুমতিপত্র দেয়া সিআইসি। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আরআরআরসি।
ক্যাম্প থেকে বের হওয়া রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় দাতা সংস্থাগুলো তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করলেও ব্যক্তিগত অনেক অভাব আছে তাদের। অর্থাভাব দুর করতে তারা ক্যাম্প কাজের সন্ধানে বের হচ্ছেন। ছড়িয়ে পড়ছেন গ্রামে গঞ্জে। এছাড়া রোহিঙ্গা শ্রমিকদের সস্তায় ব্যবহার করতে পারেন বলে স্থানীয়রা শ্রমিক হিসেবে তাদের নিয়োগ করে থাকেন।
তারা জানান, ক্যাম্প থেকে বের হয়ে কর্মস্থানে যাওয়া পর্যন্ত কোথাও তাদের আটকানো হয়না। তবে কেউ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে তথ্য দিলে আটক করে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়।
তথ্য মতে, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর দেশের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গা ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে টেকনাফ কক্সবাজার সড়ক এবং কক্সবাজার টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে সেনাবাহিনীর তল্লাশি চৌকি বসানো হয়। এখন কয়েকটি স্থানে শুধু বিজিবি চেকপোস্ট রাখা হয়। আর সুযোগকে কাজে লাগিয়ে উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে প্রতিদিন শত শত রোহিঙ্গা কৌশলে জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। ক্যাম্প থেকে লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়ার কারণে পুরো সমাজ ব্যবস্থা হুমকিতে পড়ছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। ক্যাম্পে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত এপিবিএন পুলিশের পূর্ণাঙ্গ তিনটি ইউনিট থাকার পরও রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাফেরা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
ফাইল ছবি-পেকুয়া থেকে আটক ১১ রোহিঙ্গা।
এদিকে রোহিঙ্গাদের একটি সূত্র দাবি করেছেন, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীগোষ্ঠি মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ার কারণে অনেক যুবক অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। আর যারা কোন রকম বসবাস করছেন তারাই ক্যাম্প থেকে বের হয়ে কক্সবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। তারা বলেন, সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সশস্ত্র সংগঠন ‘আরসা’ এবং ‘আরএসও’ এর মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হলে ক্যাম্পগুলোতে আরো বেশি অস্থিরতা তৈরি হয়। এ অবস্থয় অনেকে কাজের সন্ধানে ক্যাম্প ছেড়ে বেরিয়ে পড়ছেন। ক্যাম্প থেকে বের হলেও তাদের আটকানো হয়না।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গারা যখন তখন ক্যাম্পের ভেতরে বাইরে আসা যাওয়া করতে পারে। ফলে তারা যে কোন অপরাধ করেই পার পেতে পারে। আবার রোহিঙ্গাদের কারণে শ্রম বাজারও দখলে যাচ্ছে স্থানীয়দের। এটি স্থানীয়দের জন্য নিরাপত্তার ঝুঁকি। এ অবস্থায় রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্প ছেড়ে বের হতে না পারে সেদিকে নজর দিতে হবে।
যদিও পুলিশ বলছে, রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়ারোধ করতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে তারা।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মো: মাহফজুল ইসলাম বলেন, পুলিশের স্থায়ী চেকপোস্ট না থাকলেও টহল জোরদার রয়েছে। প্রয়োজন মতে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশিও চালানো হয়। গেল এক মাসে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ৭৫৯ জন রোহিঙ্গাকে ধরে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, পাহাড়ী এলাকা কিংবা যেসব স্থানে রোহিঙ্গারা অবস্থান করে স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলে দ্রুত আইনের আওতায় আনা সহজ হবে।
রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাফেরাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এর জন্য ক্যাম্পে দায়িত্বরত এপিবিএনকে দায়ি করেছেন তারা।
১৬ এপিবিএন এর দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি মো: হাসান বারী নুর ক্যাম্প ছেড়ে রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়ার কথা স্বীকার করে বলেন, রোহিঙ্গারা সিআইসি অফিস থেকে কাজের অনুমতি নিয়ে ক্যাম্প থেকে বের হয়। অনেকে ফিরে আসলেও অনেকে আর ফিরে আসেনা। এছাড়া অনেক এনজিও সংস্থার কার্যক্রম ক্যাম্পের বাইরে হওয়ায় চাইলেও আমরা বাঁধাও দিতে পারছি না। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে ক্যাম্পের বাইরে যাওয়ার সব ধরনের অনুমতি দেয়া বন্ধ করতে হবে।
রোহিঙ্গাদের কাজ করার কোন ধরনের অনুমতি দেয়া হয় না দাবি করে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, শুধু মাত্র প্রয়োজনে তাদের (রেহিঙ্গা) অনুমতিপত্র দেয়া হয়। যেমন আদালতে হাজির হওয়া কিংবা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা যাওয়া। এপিবিএন যা বলেছেন তার সঠিক নয়।
তিনি উল্টো অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয়রা সস্তায় শ্রমিক নিয়োগ করতে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করছে। পেকুয়ায় আটকের তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদের সবাইকে স্থানীয় ঠিকাদার কর্তৃক নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া মুদির দোকান, টমটম চালক কিংবা দিনমজুর হিসেবে রোহিঙ্গাদের কাজে লাগানো লাগাচ্ছে স্থানীয়রা। এমনটাই দাবি করেছেন তিনি।
মন্তব্য করুন