বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:১১ পূর্বাহ্ন
ফাইল ছবি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, ‘নৌকায় ভোট দিয়ে আমাদের উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবেন। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ যেন করতে পারি, সে জন্য নৌকায় ভোট দেবেন।’ তিনি গতকাল বিকেলে রাজশাহী মহানগরীর মাদরাসা মাঠে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসভায় এসব কথা বলেন।
আগামী জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী জনসভা শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই অংশ হিসেবে গতকাল রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় অংশ নেন তিনি। সেখানে রাজশাহীর ২৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ছয়টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জনসভায় দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন, বিএনপি নেতাদের দুর্নীতি, রাজশাহীকে ঘিরে সরকারের আগামী দিনের নানা পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।
জনসভায় বক্তব্যের শেষ দিকে সমবেতদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী নির্বাচন আসবে এ বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতে। আপনাদের কাছে ওয়াদা চাইব। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন কিনা বলেন।’ এ সময়ে জনসভায় উপস্থিত সবাই দুই হাতে তুলে নৌকায় ভোট দেওয়ার ওয়াদা করে।
বিএনপির নেতাকর্মীদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘নৌকায় ভোট না দিলে দেশ স্বাধীন হতো না। দেশ স্বাধীন না হলে তাঁদের নেতা জিয়াউর রহমান মেজর থেকে মেজর জেনারেল হতে পারতেন না। এটা তাঁরা ভুলে যান। দেশ স্বাধীন না হলে কোনো দিন ক্ষমতায় আসতে পারতেন না খালেদা জিয়া, কোনো দিন প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন না। সেই নৌকার ওপরে এত রাগ কেন?’
রাজশাহীবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই রাজশাহী সব সময় অবহেলিত ছিল। বিগত মেয়র নির্বাচনে আপনারা আমাদের ভোট দিয়েছেন। বিভিন্ন এলাকায় নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করেছেন। আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজশাহীর উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে গত ১৪ বছরে শুধু রাজশাহী জেলা ও মহানগরে ১০ হাজার ৬৬০ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করে দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে এক হাজার ৩৩৩ কোটি টাকার ২৬টি প্রকল্প উদ্বোধন করলাম এবং ৩৭৫ কোটি টাকার ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম। এই প্রকল্পগুলো আমি আপনাদের উপহার হিসেবে দিয়ে গেলাম।’
দুপুর ১২টার দিকে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠের মধ্য দিয়ে জনসভা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয়। পরে জনসভার মূল মঞ্চের পাশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেল সোয়া ৩টায় মহানগরীর ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠের মঞ্চে এসে পৌঁছান। এরপর তিনি ২৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ছয়টির ভিত্তিপ্রস্তর ফলক উন্মোচন করেন।
জনসভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান ও এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন প্রমুখ।
আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না : আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জানি, বিরোধী দল অনেক কথাই বলে। তারা আমাদের আবার নোটিশ দেয়। আবার বলে, আমরা নাকি পালানোর পথ পাব না। এই বিএনপি-জামায়াত জোটে যারা আছে, তাদের জিজ্ঞেস করি পালায় কে? আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না। পিছু হটে না।’
১৯৮১ সালে বিদেশে নির্বাসন থেকে দেশে ফেরার প্রতিকূল সময়ের স্মৃতিচারণা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়াউর রহমান বাধা দিয়েছিল, আমাকে দেশে আসতে দেবে না। আমি বাধা অতিক্রম করেই দেশে ফিরেছিলাম।’ বিএনপির উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে যারা বলে পালানোর সুযোগ পাবে না আওয়ামী লীগ, আমি স্পষ্ট বলতে চাই, আওয়ামী লীগ পালায় না। পালায় আপনাদের নেতারাই।’
দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্তকে নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই? : বিএনপির নেতাদের নানা দুর্নীতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা (বিএনপি) নাকি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে। কাকে নিয়ে? যে দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত, তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে রাজনীতি করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিল।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তাঁর দুই পুত্রের দুর্নীতির প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা-তারেক। এমনকি তারেক-কোকোর মাধ্যমে যে টাকা পাচার হয়েছিল তার মধ্যে ৪০ কোটি টাকা আমরা ফিরিয়ে এনেছি। এর জবাব কি তারা দিতে পারবে?’
জনসভায় দেওয়া বক্তৃতায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমরা এই দেশেতে জন্মি, এই দেশেতে মরব। পালাব না। কোথায় পালাব। আমরা পালাব না, প্রয়োজনে ফখরুল সাহেবের বাসায় গিয়ে উঠব। কি জায়গা দেবেন? না হলে ঠাকুরগাঁওয়ে বাড়ি আছে না, ওই বাড়িতে গিয়ে উঠব।’ ‘সরকার পালাবার পথ খুঁজে পাবে না’, মির্জা ফখরুল ইসলামের এমন বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, ‘সরকারকে পালাতে বলে। পালাবার পথ নাকি খুঁজে পাবে না। ফখরুল সাহেব, পালিয়ে তো আছেন আপনারা? তারেক রহমান আর রাজনীতি করবেন না মুচলেকা দিয়ে পালিয়েছেন লন্ডনে। সাত বছরের দণ্ডিত পলাতক আসামি আপনাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পালিয়ে যান। আমরা পালাতে জানি না।’
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি যদি আবার সুযোগ পায়, তারা একটা নয়, ১০টা ‘বাংলা ভাই’ সৃষ্টি করবে। এই রাজশাহী অঞ্চলকে তারা জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত করবে। কিন্তু মানুষ তা হতে দেবে না। তিনি বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন রাজশাহীতে ‘বাংলা ভাই’ সৃষ্টি হয়েছিল, বিএনপির নেতারা তাকে বরণ করে নিয়েছিলেন। শেখ হাসিনার দেশ পরিচালনায় গত ১৪ বছরের উন্নয়নে রাজশাহী জেলা বদলে গেছে, রাজশাহী বিভাগ বদলে গেছে, পুরো দেশ বদলে গেছে।
জনসভায় মানুষের ঢল : জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতির উপস্থিত হওয়ার নির্ধারিত সময় দুপুর আড়াইটা হলেও সকাল থেকেও নেতাকর্মীদের ঢল নামে রাজশাহী নগরে। সকাল ৯টা থেকেই বিভিন্ন রাস্তায় নেতাকর্মীদের খণ্ড মিছিল দেখা যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনসভাস্থল মাদরাসা মাঠগামী মিছিলের স্রোতও বাড়তে থাকে। সকাল ৮টায় জনসভাস্থল মাদরাসা মাঠের ফটক খুলে দেওয়া হয়। সকাল ৯টা থেকেই নেতাকর্মীরা প্রবেশ করতে শুরু করেন। ১১টার মধ্যেই মাদরাসা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
রাজশাহী ও আশপাশের আট জেলার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা সমাবেশে উপস্থিত হন। বাস, ট্রেন ও ট্রাকে করে আশপাশের জেলার নেতাকর্মীরা রাজশাহীতে আসেন। জনসভায় আসা নেতাকর্মীদের বর্ণিল সাজ ছিল চোখে পড়ার মতো। নানা রঙের টি-শার্ট, কাগজ ও কাঠের নৌকা, বিভিন্ন এলাকার সংসদ সদস্যদের ছবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে একেবারে ভোটের আমেজে জনসভায় আসেন নেতাকর্মীরা। ফায়ার সার্ভিস মোড় ও পাঠানপাড়া মোড়ে দলের নেতাকর্মীদের ঢল নামে। ১১টার পর যে নেতাকর্মীরা মাদরাসা মাঠের আশপাশে পৌঁছান তাঁরা আর জনসভাস্থলে প্রবেশের সুযোগ পাননি। কারণ আগেই জনসভাস্থল পূর্ণ হয়ে যায়।
নওগাঁর পোরশা থেকে আসা আওয়ামী লীগ সমর্থক দিদারুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক দিন পরে প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী সফরে আসছেন। তিনি এই অঞ্চলের অনেক উন্নয়ন করেছেন। তাঁকে একনজর দেখতে ছুটে এসেছি। শীতে আসতে কষ্ট হয়েছে; কিন্তু জনসভাস্থলে এসে সব কষ্ট ভুলে গেছি।’
আমাদের সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জ থেকে কয়েক হাজার নেতাকর্মী রাজশাহীর সমাবেশে যোগ দেন। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত মুন্না একটি ট্রেন ভাড়া করে প্রায় সাড়ে তিন হাজার নেতাকর্মী নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন।
সূত্র-কালেরকণ্ঠ
মন্তব্য করুন