বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:০৯ অপরাহ্ন
ছবি-র্যাবের হাতে আটক দুই জঙ্গি।
।।ওয়াহিদ রুবেল।।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়া জিরো পয়েন্টে কথিত ”আরসা’ এবং ‘আরএসও’ গ্রুপের সংঘর্ষের পর থেকে সীমান্তের জিরো পয়েন্টে থেকে শুরু করে ৩৪ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প এখন আতংকের নগরী। এরই মধ্যে ২৩ জানুয়ারি কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় র্যাব এর সাথে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এসময় সংগঠনটটির সামরিক শাখার প্রধানসহ ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। উদ্ধার করা হয়েছে দেশি ও বিদেশি ৩ টি অস্ত্র, গোলাবারুদ ও নগদ টাকা ।
কুতুপালং ৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এ ব্লকের আশে-পাশে সোমবার ভোর থেকে সকাল ১০ টা পর্যন্ত চলে এ অভিযান।
গ্রেপ্তার ২ জন হলেন, নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সামরিক শাখার প্রধান ও শুরা সদস্য মাসিকুর রহমান মাসুদ ওরফে রনবীর ও তার সহযোগি বোমা বিশেষজ্ঞ আবু বাশার।
অভিযানের পর ক্যাম্প এলাকায় সংবাদ সম্মেলন তাদের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। ক্যাম্প এলাকা থেকে জঙ্গি গ্রেফতারের ঘটনায় সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
এ ঘটনার পর থেকে রোহিঙ্গা আতংকের সাথে যুক্ত হলো জঙ্গি আতংক। কুতুপালং ক্যাম্প এলাকা থেকে জঙ্গি গ্রেফতারের বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন স্থানীয়রা।
কুতুপালং এলাকার বাসিন্দা ও রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা রোহিঙ্গা সন্ত্রাস, রোহিঙ্গা সন্ত্রাস বলে চিৎকার করে আসছি। এখন নতুন করে যোগ হলো জঙ্গি আতংক। বিষয়টি আমাদেরকে নতুন করে ভাবাচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ সকল বাহিনীর মিলে ক্যাম্পে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে অপরাধের আইনের আনতে হবে। অন্যথায় পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
ছবি-ক্যাম্পে র্যাবের অভিযানে পাহারারত র্যাব সদস্য।
এদিকে, সকাল সাড়ে ১০ টার পর ঘটনাস্থলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দাকার আল মঈন জানিয়েছেন, র্যাবের ধারাবাহিক অভিযানে গোয়েন্দা তথ্য ছিল নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সামরিক শাখার প্রধান রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আত্মগোপনে রয়েছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার ভোরে কুতুপালং ৭ নম্বর ক্যাম্পের এ ব্লকে অভিযান শুরু করে।
অভিযানে র্যাবের অবস্থান বুঝতে পেরে জঙ্গিরা পাশের পাহাড়ে চলে যায়। র্যাব ওখানে অভিযান শুরু করলে সশস্ত্র লোকজন র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। আত্মরক্ষার্থে র্যাব সদস্যরাও পাল্টা গুলি চালায়। এসময় সংগঠনটির শীর্ষস্থানীয় এক নেতা সহ ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
খন্দাকার আল মঈন জানান, ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সামরিক শাখার প্রধান ও শুরা সদস্য মাসিকুর রহমান মাসুদ ওরফে রনবীরের নেতৃত্বে তরুণদের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছে। এর ভিত্তিতে পার্বত্য এলাকাও অভিযান হয়েছে। এ পর্যন্ত এ সংগঠণটির ৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করা সক্ষম হয়েছে। সামরিক শাখার প্রধান সহ এবার গ্রেপ্তার ২ জনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, নতুন জঙ্গি সংগঠণের সদস্যরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কেন এল, তাদের সাথে রোহিঙ্গার যোগসূত্র কি তা বের করতে কাজ করছে র্যাব।
তথ্য মতে, দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের জঙ্গিরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে নিরাপদ আশ্রয় স্থান বলে বেঁচে নিয়েছেন। পাহাড়ি এলাকার পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে জঙ্গি প্রশিক্ষণও দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা।
তারা বলেন, ক্যাম্পে এত বেশি গ্রুপ যে কারা জঙ্গি, কারা সন্ত্রাস, কারা স্বাধীকার আদায়ের সংগঠন বুঝা মুশকিল। সন্ধ্যা হলেই সবকিছু অপরিচিত মনে হয়। ভারি অস্ত্রের ঝনঝনানি শুরু হয় চারদিকে।
ছবি-জঙ্গিদের সাথে গোলাগুলির পর উদ্ধার হওয়া অস্ত্র।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমরা আগে থেকেই সন্দেহ করেছিলাম রোহিঙ্গাদের সাথে জঙ্গি কানেকশন রয়েছে। আজ (সোমবার) এটি বাস্তবে প্রমাণ পেলাম। রোহিঙ্গাদের সাথে জঙ্গি কানেকশন কতটা গভীর জানি না তবে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।
এদিকে রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, সীমান্তের সংঘর্ষের পর পুরো এলাকাটি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে আরএসও। তারা আরসা বাহিনী অস্ত্র কারখানা ও ইয়াবার গুদাম ধ্বংস করেছে। ঐ সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আরসা ক্যাডারও নিহত হয়েছে। তাদের লাশগুলো মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদকের হাতে আসা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সশস্ত্র আরএসও কর্মীরা আরসার দখলচ্যুত্ত হওয়া আস্তানা তল্লাশি করছেন। সেখানে ইয়াবা ও অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম দেখা যায়। আস্তনায় রয়েছে সুড়ঙ্গ। আর সে আস্তানার পজিশন রাখা হয়েছে বাংলাদেশমুখী। ভিডিওতে কথিত আরসার অপরাধ নিয়ে এক যুবককে কথা বলে শোনা যায়। বর্তমানে সীমান্তে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, সীমান্তের ঘটনার পর ঝিমিয়ে পড়া আরএসও নতুন করে জেগে উঠেছে। তারা আরসা বিরোধী কর্ম তৎপরতা শুরু করেছে। সম্প্রতি আরসা নেতাকে ধরিয়ে দেয়ার পোস্টারও তারা প্রচার করেছে বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা।
তাদের দাবি, আরসা শুরু থেকে রোহিঙ্গাদের স্বার্থ নিয়ে কথা বললেও বাস্তবে তারা মিয়ানমারের পক্ষ হয়ে কাজ করছে। তারা এখন পুরোপুরি মাদক ব্যবসায়ী একটি সংগঠন। তাই তারা দিন দিন জন সম্পৃক্ততা হারাচ্ছে।
মন্তব্য করুন