শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৩১ পূর্বাহ্ন

থাইরয়েড সচেতনতা

থাইরয়েড সচেতনতা

অনলাইন বিজ্ঞাপন

 

থাইরয়েড গ্রন্থি শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোর মধ্যে একটি। শরীরের বাকি অংশের সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে এটি। তাই থাইরয়েডের সমস্যা হলে শরীরের অন্য গ্রন্থিগুলোও ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। বিস্তারিত জানাচ্ছেন ড. হেমন্ত রায় চৌধুরী

থাইরয়েড কী : থাইরয়েড হলো গলার কাছে থাকা প্রজাপতি আকৃতির একটি গ্রন্থি। এটি শরীরের বিপাক হার বা মেটাবলিজম নির্ভর করে এ গ্রন্থি থেকে হরমোনের ক্ষরণের ওপর। কয়েক ধরনের থাইরয়েড সমস্যা দেখা যায়। যেমন, থাইরয়েড হরমোন কম উৎপন্ন হওয়া যাকে হাইপোথাইরয়েড বলে। আর এ হরমোন বেশি নিঃসরণ হওয়াকে বলে হাইপারথাইরয়েড। এ দুটি প্রধান সমস্যা ছাড়াও থাইরয়েড ফোলা, থাইরয়েড টিউমার ও থাইরয়েড ক্যান্সারের মতো সমস্যাও হতে পারে। শরীরে থাকা টিস্যুগুলোর বিরুদ্ধে শরীরের অস্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য হাইপো আর হাইপার থাইরয়েডই সাধারণত বেশি হতে দেখা যায়। মূলত নারীরাই এ সমস্যায় বেশি ভুগে থাকেন।

কেন হয় : নানা কারণে থাইরয়েডের সমস্যা হতে পারে। থাইরয়েড হরমোন সঠিক পরিমাণে উৎপাদনের জন্য আয়োডিনের গুরুত্ব অনেক। খাবারে আয়োডিন কম থাকলে থাইরয়েড কম উৎপন্ন হবে অথবা থাইরয়েড ফুলে যাবে। সেই ফুলে যাওয়াকেই বলা হয় গলগণ্ড রোগ। শরীরের অন্য গ্রন্থি ঠিকমতো কাজ না করা তার প্রভাব থাইরয়েডের ওপর পড়ে। আবার কারও ক্ষেত্রে জন্মগতভাবে থাইরয়েড গ্রন্থির ত্রুটির কারণেও থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দেয়। পরিবারের কারোর থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে তার সন্তানদেরও অসুস্থতা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

লক্ষণ : প্রজননক্ষম নারীদের হাইপোথাইরয়েডিজমের হার ও জটিলতা বেশি। হঠাৎ অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি, সবসময় ক্লান্তিবোধ করা। অনিয়মিত মাসিক বা দীর্ঘদিন অতিরিক্ত মাসিকের মতো সমস্যা হতে পারে। চুল ও ত্বকের সমস্যা যেমন শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্যসহ শিশুদের বৃদ্ধিতে বাধা ও বয়ঃসন্ধি বিলম্বিত হওয়ার সমস্যাও দেখা দেয় এ কারণে। অন্যদিকে হাইপারথাইরয়েডের সমস্যায় হঠাৎ করেই কমে যেতে পারে ওজন। দেখা দিতে পারে কাঁপুনি, উদ্বেগ, অত্যধিক ঘাম এবং ঋতুচক্রে কম রক্তক্ষরণের মতো সমস্যা। স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়া কিছু ঘটনা বা মানুষ চিনতে না পারার মতো সমস্যাও হতে পারে। থাইরয়েডে সমস্যার কারণে মাংসপেশির ক্ষয় বেড়ে যায়, সক্ষমতা কমে যায়। দ্রুত হাড় ক্ষয় হয়। চোখের অক্ষিগোলক বড় হয়ে যেতে পারে। চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে।

রোগ নির্ণয় : উপসর্গ দেখা দিলে বা অনেক সময় উপসর্গ ছাড়াই রুটিন পরীক্ষা হিসেবে চিকিৎসকরা রক্তে ফ্রি থাইরক্সিন এবং টিএসএইচ (থাইরয়েড-স্টিমুলেটিং হরমোন) পরীক্ষা করে রোগ শনাক্ত করেন। এ ছাড়াও থাইরয়েডের নানা অ্যান্টিবডি, গলার আলট্রাসনোগ্রাফি, দরকার হলে রেডিও-আয়োডিন আপটেক পরীক্ষাও করতে হতে পারে। ক্যান্সার সন্দেহ করলে সুই দিয়ে গলা থেকে টিস্যু নিয়ে বা সার্জারি করে বায়োপসি করার দরকার হতে পারে। প্রজননক্ষম নারীদের সন্তান নেওয়ার আগে আর গর্ভাবস্থায় কোনো উপসর্গ না থাকলেও থাইরয়েড পরীক্ষা করে নেওয়া নিরাপদ।

চিকিৎসা : চিকিৎসকরা নানাভাবে থাইরয়েডের সমস্যা চিকিৎসা করেন। ওষুধ, রেডিয়োঅ্যাকটিভ আয়োডিন, বেটা ব্লকারের মতো চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। চিকিৎসা শুরুর পর নিয়মিত ওষুধ সেবন ছাড়ার নির্দিষ্ট সময় পরপর চিকিৎসকের পরামর্শে বারবার এ হরমোন পরীক্ষা করে ওষুধের মাত্রা ঠিক করে নিতে হয়। হাইপোথাইরয়েডিজমের ওষুধ সাধারণত সারা জীবন খেয়ে যেতে হয়। পাশাপাশি বারবার পরীক্ষা করে মাত্রা ঠিক করার প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে কেউ সন্তান চাইলে বা গর্ভধারণ করলে ঘন ঘন টেস্ট করা দরকার। খুব অল্প কিছু ক্ষেত্রেই থাইরয়েড অস্ত্রোপচার দরকার হয়। ক্যান্সার সন্দেহ করা হলে, গ্রন্থি অতিরিক্ত বড় হয়ে যাওয়ার কারণে চাপ সৃষ্টি করলে বা সীমিত কিছু ক্ষেত্রে হাইপারথাইরয়েডিজমে ওষুধ কাজ না করলে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

লেখক : নিউরো রেডিওলজিস্ট, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স, ঢাকা

সূত্র-কালবেলা।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
Desing & Developed BY MONTAKIM