বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:৩৫ অপরাহ্ন
ছবি-কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে তোলা।
।।ওয়াহিদ রুবেল।।
শনিবারের ভোরের সূর্যটি পশ্চিমাকাশে ডুবে যাওয়ার পর শুরু হবে নতুন বছরের সূর্যোদয়ের প্রতিক্ষা। রবিবারের সূর্যোদয়ের সাথে শুরু হবে নতুন বছর। বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে শনিবার বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে ভীড় করে কয়েক লাখ পর্যটক আর দর্শণার্থী।সফলতা-ব্যর্থতার হিসাব পেছনে ফেলে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২ঃ১ মিনিটে ২০২৩ সালকে স্বাগত জানিয়ে পালন করা হবে থার্টিফাস্ট নাইট। কিন্তু ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও করোনা মহামারীর সময় থেকে কক্সবাজারে বন্ধ রয়েছে থার্টিফাস্ট নাইট উদযাপন। তবে, তারকা মানের হোটেলগুলো ইনহাউজ গেস্টদের জন্য ইনডোর অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কক্সবাজারে থার্টিফাস্ট নাইট উৎসবের বড় কোন আয়োজন না থাকলেও বড়দিন এবং শীতকালীন ছুটিতে পর্যটকে ভরে গেছে কক্সবাজার। এক সপ্তাহ ধরে সমুদ্র সৈকত, ইনানী, হিমছড়ি, রামুর বৌদ্ধপল্লী, চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক, মহেশখালীর আদিনাথসহ পুরো কক্সবাজারের পর্যটন স্পটে পর্যটকদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। তবে, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-পথে পর্যটকবাহি জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। একটি মাত্র জাহাজ চলাচল করলেও তাদের সেবা নিয়ে পর্যটকদের মাঝে তিব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
এদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছর দশেক আগে থার্টিফাস্ট নাইট উদযাপনে বিভিন্ন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানী সৈকতে উন্মুক্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করতো। অনুষ্ঠান উপভোগ করতে লাখো পর্যটক ভীড় করতো কক্সবাজারে। তারকা হোটেলগুলো ইনডোর অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেও বহিরাগতরাও অংশ নিতে পারত। কিন্তু ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা আগমণের পর থেকে থার্টিফাস্ট নাইট উপলক্ষে সৈকতে তীরে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। আর ২০১৯ সালে করোনা মহামারীর পর থেকে থার্টিফার্স্ট নাইটের আয়োজন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এতে দিন দিন কমতে থাকে পর্যটক আগমন। এবারও উন্মুক্ত সৈকতে থার্টিফাস্ট নাইট বা নতুন বর্ষ বরণ অনুষ্ঠান না হওয়ায় দিবসটি ‘প্রাণহীন’ বলে উল্লেখ করছেন পর্যটকরা।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আব্দু রহিম দম্পতি বলেন, সৈকতের বালুচরে দাঁড়িয়ে বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখা আর রাত ১২টা ১ মিনিটে পুরোনো বছরকে বিদায় জানাবো বলে কক্সবাজার এসেছি। কিন্তু কক্সবাজারে থার্টিফাস্ট নাইট নিষ্প্রাণ। একটি পর্যটন শহরে বিনোদন ব্যবস্থা না থাকাটা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন তিনি
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান বলেন, সার্বিক আইনশৃংখলা পরিস্থিতি বিবেচনায় এবারও বীচে ওপেন অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকরা চাইলে রাত ১-২টা পর্যন্ত বীচে ঘুরতে পারবেন। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বেশ কয়েকটি টিম মাঠে থাকবে। কিন্তু রাত দশটার পর হোটেলের সব বার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে শহরের অভ্যন্তরে যানজট কমাতেও।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, মৌসুমের এ সময়টা পর্যটকরা বেড়াতে কক্সবাজার আসেন। অনুষ্ঠান না হলেও ইংরেজি নতুন বছর ২০২৩-কে স্বাগত জানাতে ও বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে কয়েক লাখ পর্যটকের মিলন মেলা হয় এখানে। হোটেলগুলোতে ৮০ থেকে ৯০ ভাগ বুকিং হয়েছে বলে জানান তিনি।
কক্সবাজারের তারকা হোটেল সায়মান বীচ রিসোর্টের কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান নূর বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও ইনহাউজ গেস্ট এবং বিদেশীদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তবে বাহিরাগত কেউ অনুষ্ঠান আসতে পারবেন না।
কক্সবাজার চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে উন্মুক্ত অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি। থার্টিফাস্ট নাইট উপলক্ষে অনুষ্ঠান করা গেলে পর্যটনের বিভিন্ন সেক্টরে কয়েকশ কোটি টাকা বাণিজ্য হতো।
টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের সহকারী পুলিশ সুপার শেহরিন আলম বলেন, কক্সবাজারের নাজিরারটেক থেকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার সৈকতের কোথাও আতশবাজি, ফটকা ফোটানোসহ গান-বাজনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কিংবা ব্যান্ডসংগীতের আয়োজন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় বালুচরে দাঁড়িয়ে সমুদ্র উপভোগ করা যাবে। বিধিনিষেধ পালনে টুরিস্ট পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, সরকারি নির্দেশনার প্রেক্ষিতে সৈকতের উন্মুক্ত স্থানে থার্টিফাস্ট নাইট উপলক্ষে কনসার্ট, গান বাজনাসহ সব ধরনের আয়োজন বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে হোটেল কর্তৃপক্ষ চাইলে তাদের অতিথিদের জন্য নববর্ষ উদ্যাপনের আয়োজন করতে পারে।
মন্তব্য করুন