বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:২১ অপরাহ্ন

ছুটিতে একগঙ্গা পর্যটক কক্সবাজারে; ব্যবসা হবে ৫০০ কোটি টাকা

ছুটিতে একগঙ্গা পর্যটক কক্সবাজারে; ব্যবসা হবে ৫০০ কোটি টাকা

অনলাইন বিজ্ঞাপন

ছবি-আলোকিত কক্সবাজার।

 

।।ওয়াহিদ রুবেল।।

একদিকে সরকারি ছুটি অন্যদিকে ছেলে মেয়েদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। এর সাথে যোগ হয়েছে খ্রিস্টানদের বড়দিন। এ সুযোগে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কক্সবাজারে ছুটে এসেছে লাখো পর্যটক। আজ (শুক্রবার) কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নেমেছেন অন্তত দেড় লাখ পর্যটক। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন গেল দুইদিনে সৈকতে ভ্রমণে এসেছেন অন্তত তিন লাখ পর্যটক। ইতিমধ্যে পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস, কটেজ শতভাগ বুকিং হয়েছে। হঠাৎ কক্সবাজারে পর্যটকের আগমনে খুুশি ব্যবসায়ীরাও। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে থাকলে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অতিরিক্ত পর্যটকের উপস্থিতিতে জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে তিব্র যানজটেরও সৃষ্টি হচ্ছে।

এদিকে পর্যটকের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া ও খাবারের দাম বেশি রাখায় দুটি হোটেল ও চারটি রেস্তোঁরাকে জরিমানা করেছে প্রশাসন। একই সাথে পর্যটকদের নিরাপত্তায় দুটি মোবাইল টিম কাজ করছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ।

তথ্য মতে, অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয় পর্যটন মৌসুম। এরই মধ্যে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত থাকে পর্যটনের ভর মৌসুম থাকে। মৌসুমের শুরুতে পর্যটকের খরা দেখা দিলেও গেল কয়েক দিনে হঠাৎ পর্যটকে ভরপুর হয়ে পড়েছে কক্সবাজার। শুক্রবার কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্ট, সীগাল পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, কলাতলী পয়েন্টসহ, হিমছড়ি ঝর্ণা, দরিয়া নগর, ইনানী বীচ, পাটুয়ারটেক এলাকায় দেড় লাখের অধিক পর্যটকের মেলা বসেছে। সাগরের নোনাজলে শরীর ভিজিয়ে নিচ্ছেন অনেকে। ব্যবসায়ীদের দাবি যদি সেন্টমার্টি যাওয়া সহজ হতো তবে এ পর্যটকের সংখ্যা হতো দ্বিগুণ।

ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ছেলে মেয়েদের স্কুল বন্ধ রয়েছে। তার উপর বড় দিনের ছুটিও আছে। তাই কক্সবাজারে ঘুরতে এসেছি। ভাল লাগছে।

বন্ধুদের নিয়ে বেড়াতে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহ জালাল বলেন, কক্সবাজার বিনোদনের জন্য একটি উপযুক্ত স্থান। তাই সুযোগ পেলেই বন্ধুদের সাথে ঘুরতে চলে আসি।

অনেকে আবার অতিরিক্ত রুমভাড়া আদায়ের অভিযোগও করেছেন।

ব্যবসায়ীদের দাবি কক্সবাজারে বেড়াতে আসা সিংহভাগ পর্যটক সেন্টমার্টিন বেড়াতে যেতে চাই। কিন্তু কিছু অসাধু চক্রের ফাঁদে পড়ে সেন্টমার্টিন যাওয়া কঠিন করে তুলেছে। ফলে অনেক পর্যটক কক্সবাজারে আসার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে।

হোটেল সী-প্রিন্সেস হোটেলের সিনিয়র ম্যানেজার মাজেদুল বাশার চৌধুরী বলেন, হোটেলে একটি কক্ষও খালি নেই। গেল দুইদিন যে পরিমাণ পর্যটক আসছে এতে রুম ক্রাইসিস হতে পারে।

হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজুর রহমান লাভলু বলেন, মৌসুমের শুরুতে পর্যটকের অবস্থা দেখে ব্যবসা নিয়ে ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু বিশ্বকাপ ফুটবল শেষ হওয়ার পর থেকে পর্যটক আসা শুরু করেছে। আশা করছি ভালই ব্যবসা হবে।

সৈকতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সী সেইফ লাইফ গার্ডের কর্মী আব্দু শুক্কুর জানান, শুক্রবার সকাল থেকে সমুদ্র পাড়ে বেড়াতে আসা মানুষের উপস্থিতি বেড়েছে। বেড়াতে আসা বেশিরভাগই সৈকতে গোসল করতে নামে। এতে বাড়তি পর্যটকের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে লাইফগাড সদস্যদের। তারপরও দূর্ঘটনায় এড়াতে আমাদের কঠোর নজরদারি রয়েছে।

পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়ে সৈকত ও আশপাশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে জম জমাট ব্যবসা–বাণিজ্য শুরু হয়েছে। বিশেষ করে শুঁটকি ও শামুক–ঝিনুকের রকমারি পণ্যের বিক্রি বেড়েছে।

ডলফিন মার্কেট ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রহমান বলেন, কক্সবাজারে সহস্রাধিক পরিবার পর্যটন ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত। পর্যটক আসায় শুটকি, শামুক ঝিনুক ও বার্মিজ পণ্যের ব্যবসা ভাল হচ্ছে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এর সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যদি এভাবে পর্যটক আসতে থাকে তবে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা কিংবা তার বেশি ব্যবসা হতে পারে।

এদিকে পর্যাপ্ত পাকিং ব্যবস্থা না থাকায় সড়কের দুইপাশে পর্যটকবাহী গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে স্থানীয়দের।

ট্রাফিক পুলিশের টিআই আমজাদ হোসেন বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও পর্যটকের আগমনের সাথে সাথে যানজটও বেড়েছে। বিশেষ করে কলাতলী মোড়ে যানজট বেশি সৃষ্টি হয়। আমরা পর্যটক ও স্থানীয়দের সহজ চলাচলের সুবিধার্থে কাজ করে যাচ্ছি।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক গাজি মিজানুর রহমান জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যটন স্পটগুলোতে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। পোষাকের পাশাপাশি সাদা পোষাকেও রয়েছে পুলিশ সদস্য। পর্যটকদের কাছ থেকে কোন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিষ্ট্রেটও মাঠে রয়েছে বলে জানান তিনি।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা ও অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম কমাতে সকাল বিকেল দুটি করে পৃথক চারটি মোবাইল টিম কাজ করছে। ইতিমধ্যে দুটি হোটেল ও তিনটি রেস্তোঁরা মালিককে ৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
Desing & Developed BY MONTAKIM