বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৫০ পূর্বাহ্ন

চাকুরির জন্য বসে না থেকে কৃষি কাজে মনোযোগী হতে পারে তরুন সমাজ

চাকুরির জন্য বসে না থেকে কৃষি কাজে মনোযোগী হতে পারে তরুন সমাজ

অনলাইন বিজ্ঞাপন

আবুল মনজুর পেশায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা। সারাদিন অফিসের একাজ ওকাজ করে সময় কাটান। ক্লান্ত শরীর নিয়ে অন্যরা যখন নীড়ে ফিরে তখন তিনি ছুটে যান জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ছাদে নিজের গড়া বাগানের পরিচর্যা করতে। সবার মতো আরামে সময় নষ্ট না করে সবুজ বিপ্লব ঘটাতে ভূমিকা রাখছেন তিনি। ২০১৯ সালের আগে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের পরিত্যাক্ত ভবনের ছাদ তার হাতের পরশে এখন সবুজে ভরে উঠেছে। একই সাথে কবুতরের বাক বাকুম শব্দে মুখরিত ছাদের প্রাঙ্গন। ছাদের উপর রোপিত দৃষ্টিন্দন বাগানটি যে কারো নজর কাড়বে। বাগানে রয়েছে, ড্রাগন, লেবু, আম, আমড়া, জাম্বুরা, মালবেরি, ব্লাকভেরি, চেরিফল। রয়েছে মাধবীলতা, অপরাজিতা, বাগান বিলাস, জবা, গোলাপ, টিউলিপ, বিভিন্ন প্রকার অর্কিড, তুলসি পাতা, মেহদী ও দুর্বা ঘাস।

আলোকিত কক্সবাজারের সাথে কথা হয় উদ্যমী যুবক মনজুর আলমের।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালের আগে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ছাদ ছিল পরিত্যাক্ত, ময়লা ও আর্বজনায় ভরপুর। ছাদে জমে থাকা পানিতে মশা-মাছির জন্ম হচ্ছে। ছাদে ময়লার স্তূপ দেখ তৎকালীন জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন স্যারকে ছাদের অবস্থা তুলে ধরে ছাদ বাগান করার ইচ্ছা প্রকাশ করি। সৃষ্টিশীল চিন্তার কর্মট জেলা প্রশাসক আমাকে বাগান করার অনুমতি দিলেন। দিন মজুরের মাধ্যমে ছাদ পরিষ্কার করে প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করে ড্রাগন, লেবু, আম, আমড়া, জাম্বুরা, মালবেরি, ব্লাকভেরি, চেরিফল গাছ রোপন করি। এছাড়া মাধবীলতা, অপরাজিতা, বাগান বিলাস, জবা, গোলাপ, টিউলিপ, বিভিন্ন প্রকার অর্কিড, তুলসি পাতা, মেহদী ও দুর্বা ঘাসের চাষ করেছি। শুরুতে আমার কলিগ অনেকে হেয় করলেও এ বাগানটি এখন অনেকের অনুপ্রেরণার উৎস। আমার বাগানটা দেখে অন্যরাও বাগান সৃজনে এগিয়ে আসবেন এটি আমার বিশ্বাস।

আবুল মনজুর বলেন, বৃক্ষ চাষ আমার ছোট বেলার শখ। বাড়ির পাশে খালী জমি পেলেই গাছের চারা রোপন করতাম। বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবা ডাঃ মোহাম্মদ হাসিম উদ্দিন এবং মাতা শামসুন নাহার ছিল সে সময়ে অনুপ্রেরণার উৎস। তাই সরকারি চাকুরিতে যোগ দেয়ার পরও আগ্রহ হারায় নি। তবে, এ সময়ে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা পেয়েছি স্কুল শিক্ষিকা স্ত্রী সুহানা নাসরিনের। সারাদিন অফিসে সময় কাটানোর পরও দেরিতে বাড়ি গেলে স্ত্রী কখনো অভিযোগ বা অনুযোগ করেন নি। উল্টো আমাকে উৎসাহ যুগিয়েছে। মাঝে মাঝে নিজে এসে বাগান পরিচর্যাও করেছে।

তিনি বলেন, এ বাগান করার পেছনে মূল কারণ ছিল সরকারের সবুজ বিপ্লব ঘোষণার সাথে একাত্বতা ঘোষণা। “গ্রীণ রেভ্যুলেশন সোসাইটি” নামে আমার একটি প্রতিষ্ঠানও আছে। যার মাধ্যমে বৃক্ষ রোপনের গুরুত্ব সম্পর্কে যুব ও তরুন সমাজকে সচেতন করি। আমি বিশ্বাস করি তরুন আর যুবকদের সচেতনতার মাধ্যমে জাগানো গেলে সবুজের বিপ্লব ঘটবেই। অযথা সময় নষ্ট না করে নিজের বাড়ির আঙ্গীনায় কিংবা ছাদে ফলজ গাছের চাষ করে স্বাবলম্বীও হওয়া যায়। এ ম্যাসেজ পৌঁছে দেয়ায় আমার মূল পরিকল্পনা।

তিনি আরো বলেন, শত ব্যস্ততার মাঝেও মূলত ইচ্ছা শক্তি আছে বলেই নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও বাগান করা আমার পক্ষে সহজ হয়েছে। আমি চাই প্রতিটি মানুষ নিজ নিজ কাজের ফাঁকে খালি জায়গায় বৃক্ষ রোপন করুক। বৃক্ষ ছাড়া যে মানব জাতির বেঁচে থাকতে পারবেনা সেটি অনুধাবন করুক। একই সাথে সরকার তরুনদের সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে সরকারি-বেসরকারি ভবন, আবাসিক ভবন কিংবা স্কুল কলেজের ছাদে বাগান করতে উদ্বুদ্ধ করুক।

আবুল মনজুর আরো বলেন, আমরা ঘর্ণিঝড় প্রবণ এলাকায় বসবাস করি। এখানে প্রতিবছর জলোচ্ছ্বাসসহ নানা দূর্যোগ লেগেই থাকে। এ অবস্থায় খাবার পানির তিব্র সংকট দেখা দিতে পারে। এ সংকট থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হচ্ছে সবুজ বিপ্লব। এছাড়া যারা ছাদে বাগান করবেন তাদের বাড়ি শীতল থাকবে। পরিবেশ ভাল থাকবে। বায়ু দুষণমুক্ত থাকবে।

তাই পাহাড় কাটা বন্ধ করে সবুজের বিপ্লব ঘটানো ছাড়া নতুন প্রজন্মের নিরাপদ পৃথিবী হবে না।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
Desing & Developed BY MONTAKIM