মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৩৭ অপরাহ্ন

জিএসপি নিয়ে নতুন নতুন প্রশ্ন যুক্তরাষ্ট্রের!

জিএসপি নিয়ে নতুন নতুন প্রশ্ন যুক্তরাষ্ট্রের!

অনলাইন বিজ্ঞাপন

আলোকিত কক্সবাজার ডেক্স:
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যের অবাধ বাজার সুবিধা (জিএসপি) ফিরিয়ে দিতে দুই বছর আগে ১৬ দফার এক কর্মপরিকল্পনা দিয়েছিল দেশটি। অধিকাংশ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে তৈরি পোশাক কারখানার কাজের মান উন্নত করার পর যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের দাম বাড়েনি, বরং কমেছে। তাই পোশাকের ‘ন্যায্য মূল্য’ নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র কখন কথা বলবে, তা জানতে চেয়েছে বাংলাদেশ।

গতকাল শনিবার রাজধানীতে যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশের কর্মকর্তারা এ কথা জানতে চান। তবে এই বৈঠকে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে নানা উদ্যোগ নেওয়ার পর তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র নানা রকম প্রশ্ন তুলেছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থানকে বাংলাদেশ ‘শিফটিং গোলপোস্ট’ বা লক্ষ্য পরিবর্তন বলেই মন্তব্য করেছে। পাশাপাশি কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার পর ‘জিএসপি তথ্যানুসন্ধানী দল’ নামের এই প্রতিনিধিদলকে যুক্তরাষ্ট্রে অগ্রাধিকারমূলক বাজার পুনর্বহালের অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্যসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন। প্রতিনিধিদলে ছিলেন শ্রমসচিব মিকাইল শিপার, পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক এবং বাণিজ্য, শ্রম ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি মাইকেল জে ডিলেনির নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধিদলে ছিলেন সে দেশের পররাষ্ট্র ও শ্রম দপ্তরের কর্মকর্তারা।

মূলত আগামী নভেম্বরে বাংলাদেশের জিএসপি পুনর্বহালের শুনানির আগে সরেজমিন পরিস্থিতি দেখতে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিনিধিদলটি। শ্রম মান নিয়ে প্রশ্ন থাকায় ২০১৩ সালের জুনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বাংলাদেশের জিএসপি বাতিল করেন। জিএসপি পুনর্বহালের জন্য মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর ওই বছরের জুলাইতে ১৬ দফার কর্মপরিকল্পনার ঘোষণা দেন। খুব স্বাভাবিকভাবে, কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কতটা অগ্রগতি হলো, সেটিই তথ্যানুসন্ধান দলের আলোচনা করার কথা।

তবে গতকালের বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের দুই সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জিএসপি পুনর্বহালের ক্ষেত্রে ১৬ দফার বাইরে যেতে চান তাঁরা। অর্থাৎ ১৬ দফা পুরোপুরি বাস্তবায়নের পরও বাংলাদেশের শ্রম মান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। গতকালের বৈঠকে মার্কিন কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন, ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠেয় টিকফার পরবর্তী বৈঠকেও বিষয়টি তোলা হতে পারে। এ সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গতকালের বৈঠকে খুব স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম মান চাপিয়ে দেওয়াটা হবে শাস্তিমূলক।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গত দুই বছরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেটি মার্কিন কর্মকর্তাদের কাছে তুলে ধরেন বাণিজ্যসচিব হেদায়েতউল্লাহ আল মামুন। এরপর মাইকেল ডিলেনি বাংলাদেশে কত কারখানা পরিদর্শন করা হয়েছে, এর সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের হিসাবে ৩ হাজার ৬৮৫ কারখানার মধ্যে ৩ হাজার ৪০৭টি (অ্যাকর্ড ১ হাজার ২৭৪, অ্যালায়েন্স ৮০০ ও জাতীয়ভাবে ১ হাজার ৩৩৩টি) পরিদর্শনের করা হয়েছে। ডিলেনির মতে, এই সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। আর এই পরিদর্শনের মানদণ্ড নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মার্কিন কর্মকর্তাকে বলা হয়, সক্রিয়ভাবে রপ্তানিতে যুক্ত পোশাক কারখানাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে।

জিএসপি আলোচনায় দুই বছর ধরে যুক্ত এবং বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জ্যেষ্ঠ ওই সরকারি কর্মকর্তা বলেন, মানদণ্ড নিয়ে প্রশ্ন দুই বছর পর কেন এর মানে তো তাঁরা বারবার ‘লক্ষ্য পাল্টাচ্ছেন’।

তবে বৈঠকে মাইকেল ডিলেনি শ্রম আইনের বিধিমালা জারির প্রশংসা করেন এবং এতে বিস্তারিতভাবে শ্রম অধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করার কথাও উল্লেখ করেন।

আলোচনায় পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক নৈতিকভাবে ব্যবসা পরিচালনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পোশাকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের প্রসঙ্গটি তোলেন। এ সময় তিনি বলেন, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া পোশাকের দাম কারখানা পর্যায়ে গড়ে ২ দশমিক ৯ ভাগ কমিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা।

ডিলেনি আলোচনার একপর্যায়ে ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধের সংখ্যা হঠাৎ করে কমে যাওয়ার প্রসঙ্গ তোলেন। এ সময় তাঁকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংখ্যাতাত্ত্বিক বিষয়ের ওপর জোর না দিয়ে তাদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিকাশে মনোযোগী হওয়ার ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। পরে মার্কিন প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে বলা হয়, ট্রেড ইউনিয়নগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক বিকাশে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা দেবে।

ইপিজেডে শ্রম আইনের খসড়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মাইকেল ডিলেনি। নতুন কোনো প্রতিষ্ঠান ইপিজেডে ব্যবসা শুরু করলে প্রথম চার বছর ওই কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন করা যাবে না, এমন কোনো বিধান আছে কি না, তা তিনি জানতে চান। মার্কিন কর্মকর্তাকে তখন জানানো হয়, ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন চালুর ক্ষেত্রে এমন কোনো বিধিনিষেধ যুক্ত করার বিধান রাখা হয়নি।

আলোচনার একপর্যায়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশের উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপট থেকে তৈরি পোশাকশিল্পকে বিবেচনা করা উচিত। এই শিল্পের জন্য বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা এসেছে। তা না হলে সহিংস উগ্রবাদ ও মৌলবাদের উত্থান হতো। তাই বারবার যখন এটা করো, সেটা করো বলা হয়, তাতে এটা মনে হয় যে, গোলপোস্ট বদল হচ্ছে।

এ সময় মাইকেল ডিলেনি বলেন, বাণিজ্য নিয়ে নীতিমালা ঠিক করে মার্কিন কংগ্রেস। এ ক্ষেত্রে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের গোলপোস্ট বদলের সুযোগ কোথায়! কর্মপরিকল্পনার পর্যালোচনা সম্পর্কে বাংলাদেশকে অবহিত করা হবে। শ্রম মান নিয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের নেওয়া পদক্ষেপ সন্তোষজনক।

মাইকেল ডিলেনির নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি গতকাল ভোরে ঢাকায় এসে সরকারের সঙ্গে বৈঠক করেছে। পাঁচ দিনের বাংলাদেশ সফরের সময় প্রতিনিধিদলটি ব্যবসায়ী, শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলবেন। এ ছাড়া মার্কিন কর্মকর্তারা চট্টগ্রামে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের কর্মকর্তা চিংড়ি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

বৈঠকের পর শ্রমসচিব মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত দুই বছরে শ্রম মান নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। খুব সংগত কারণে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকের দাম বাড়ানোর বিষয়টি আমরা তুলেছি। মার্কিন প্রতিনিধিদল বিষয়টি বাজার পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে উল্লেখ করে। আমরা এ ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা চেয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিদর্শন করা কারখানার সংখ্যা, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের ক্ষেত্রে যাচাই পদ্ধতি, ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়নসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে মার্কিন প্রতিনিধিদল জানতে চেয়েছে। এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয়ে আমরা তাদের অস্পষ্টতা দূর করেছি।’
উৎস: প্রথম আলো


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
Desing & Developed BY MONTAKIM