সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:৪৩ পূর্বাহ্ন
টানা পঞ্চম সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ। অবিশ্বাস্য ২০১৫ কে আরো রঙে রাঙালো টাইগাররা। জিম্বাবুয়েকে তারা এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ হারিয়েছে। তিন ম্যাচের সিরিজে এখন ২-০’র লিড টাইগারদের। এই বছর এটা চতুর্থ সিরিজ জয়। গত বছরের শেষ জিতেছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই। মাঝে বিশ্বকাপের পর হারিয়েছে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস হেরে আগে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ২৪১ রান তুলেছিল টাইগাররা। এরপর পেস ও স্পিন আক্রমণে জিম্বাবুয়েকে ৪৩.২ ওভারে ১৮৩ রানে অল আউট করে দেয়। ৫৮ রানের জয় স্বাগতিকদের। তিনটি উইকেট নেন মুস্তাফিজুর রহমান। ২টি করে উইকেট নেন আল-আমিন হোসেন ও নাসির হোসেন। একটি করে উইকেট নেন মাশরাফি বিন মুর্তজা ও আরাফাত সানি। দারুণ ফিফটির জন্য ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন ইমরুল কায়েস।
২৪২ রানের টার্গেট ব্যাট করতে শুরু করে জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের সামনে জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার সেট হওয়ার চেষ্টা করছেন তখন। পঞ্চম ওভারেই মাশরাফি আক্রমণে আনলেন স্পিন। আর তাতেই সাফল্য পেলো বাংলাদেশ। বাঁ হাতি স্পিনার আরাফাত সানির তৃতীয় বলেই লেগ বিফোর উইকেটের শিকার হয়ে গেলেন রেগিস চাকাভা। ১৯ বলে মাত্র ১ রান করতে পেরেছেন তিনি। ২২ রানের সময় প্রথম উইকেট হারালো জিম্বাবুয়ে। ২৩ রানের সময় নেই চামু চিভাভা। মাশরাফি বোল্ড করে দিলেন তাকে। চিভাভা করেছেন ১৪ রান। এরপর দলীয় ৪৫ রানের সময় শন উইলিয়ামসের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন মুস্তাফিজুর রহমান। ১৪ রান করেছেন উইলিয়ামস।
দ্রুত দুটি উইকেট তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর তৃতীয় উইকেটটাও পড়েছে সামান্য বিরতির পর। কিন্তু চতুর্থ উইকেটটা আর পাওয়া যাচ্ছিল না। অধিনায়ক মাশরাফি তার বোলিং অপশন বাজিয়ে দেখছিলেন। ক্রেগ আরভিন ও এল্টন চিগুম্বুরার জুটি রুখে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু লিটন দাসের থ্রোতে আরভিনের (২৬) ভাগ্য পুড়লো। রান আউট হয়ে ফিরতে হলো তাকে। জুটি ভাংলো।
এর পর ৭৩ রানের জুটি গড়ে ফেলেছিলেন এল্টন চিগুম্বুরা ও সিকান্দার রাজা। তাদের ওপর ভর করে খুব চমৎকারভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলো জিম্বাবুয়ে। আর এই জুটির প্রতিরোধে বাংলাদেশের মনে কাটা বিধছিল। সেই কাটাটা সরিয়ে দিলেন আল আমিন হোসেন। এই পেসার তুলে নিয়েছেন রাজার (৩৩) উইকেট। তাতে ভেঙ্গেছে জিম্বাবুয়ের গুরুত্বপূর্ণ এক জুটি। এর পরের ওভারেই চিগুম্বুরা (৪৭) আল আমিনের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন। চমৎকার ক্যাচটি নিয়েছেন ইমরুল কায়েস। ১৫৬ রানে পড়ে ৬ উইকেট।
এরপর জিম্বাবুয়ের টিকে থাকার লড়াই। আর লড়ার মতো ব্যাটসম্যান নেই। ওয়ালারকে নাসির হোসেন তুলে নেন। জংবি ও পানিয়াঙ্গারাকে এক ওভারেই শিকার করে ফেলেন মুস্তাফিজ। ক্রেমারকে নাসির তুলে নিলে শেষ হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে।
এর আগে শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের সামনে ২৪২ রানের জয়ের টার্গেট দিয়েছে টাইগাররা। ইমরুলের ফিরে আসা ৭৬।
নাসির হোসেনের লড়াকু ৪১। সাব্বির রহমানের ৩৩ । মুশফিকুর রহিমের ২১।
বাংলাদেশের স্কোর বলতে এই। মূলত ইমরুলের ইনিংসটার ওপর ভর করেই তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের ইনিংস।
২০১৪ সালের মার্চে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঢাকায় ফিফটি করেছিলেন ইমরুল। ইনিংসটি ছিল ৫৯ রানের। এর পর খেলা সাত ইনিংসে স্কোর যথাক্রমে ৯, ১, ১, ৫, ২, ২, ৫। সব মিলিয়ে ২৫ রান। বিশ্বকাপের পর বাদ পড়েন। তার পর জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন এবার। একাদশে এসেছেন। এবং প্রথম সুযোগেই ফিফটি করেছেন ইমরুল। সৌম্য সরকারের ইনজুরির সুযোগে তিনি দলে এসেছিলেন। একাদশে ইমরুল জায়গা করে নেন সাকিব আল হাসান প্রথম ম্যাচ খেলে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ায়। তবে ইমরুলের মনে অপূর্ণতা থাকতেই পারে। সেঞ্চুরির সুবাস পাচ্ছিলেন তিনি। আর চমৎকার খেলতে থাকা ব্যাটসম্যানের দায়িত্বও ছিল ইনিংসটাকে আরো বড় করার। ফেরার গল্পটাও তাতে পূর্ণতা পেতে পারতো।
বিশ্বকাপে শেষ তামিম ইকবাল ও ইমরুল বাংলাদেশের ওয়ানডে ইনিংস ওপেন করেছেন। মেলবোর্নে ভারতের বিপক্ষে ওই ম্যাচে ৩৩ রানের জুটি ছিল তাদের। এবার জুটিটা আরো ভালো করার ইঙ্গিত ছিল। তামিম তিনটি বাউন্ডারি মেরে নিজের ওপর থেকে চাপ ঝেড়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু টিনাশে পানিয়াঙ্গারা এদিন চমৎকার বল করছিলেন। ৩২ রানে তাই ভাংলো তামিম ও ইমরুলের জুটি। ১৯ রান করে পানিয়াঙ্গারার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেছেন তামিম।
জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনারকে তুলে নিলেন মাশরাফিরা
লিটন দাস ছক্কা দিয়ে ইনিংস শুরু করে আক্রমণের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনিও পানিয়াঙ্গারার শিকার। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন ৭ রান করে। পর পর দুই ম্যাচেই ব্যর্থ লিটন। মাহমুদ উল্লাও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ইমরুল সঙ্গী পাচ্ছিলেন না। তৃতীয় উইকেটে ৩২ রানের জুটি হয়েছে। কিন্তু মাহমুদ উল্লার অবদান সেখানে মাত্র ৪।
সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়ে ফিরে গেছেন গত ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহিম। ২১ রান করেছেন তিনি। ইমরুলের সাথে তার জুটিটা ৪৮ রানের। ক্রেমারের দ্বিতীয় শিকার হয়েছেন মুশফিক।
মুশফিকের বিদায়ের পর সাব্বির রহমানের সাথে ইমরুলের একটি জুটি গড়ে ওঠার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। চমৎকার খেলে যাচ্ছিলেন ইমরুল। ফেরার গল্পকে পূর্ণতা দিতে পারতেন সেঞ্চুরি করে। সেই সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু শন উইলিয়ামসকে একটি ছক্কা মারার পরের বলে আবার তুলে মারতে গিয়ে আউট হয়ে ফেরেন তিনি। ৮৯ বলে ৬টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৭৬ রান করে ফিরেছেন ইমরুল। শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান জুটি সাব্বির ও নাসির মিলে ৪২ রান তুলেছেন বোর্ডে। তাদের কাছে প্রত্যাশা ছিল বেশি। কিন্তু অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে চাকাভার চতুর্থ ক্যাচ হয়ে ফিরেছেন সাব্বির। ৪০ বলে ৩৩ রান করেছেন তিনি।
নাসির ও মাশরাফির মধ্যে ৩৮ রানের জুটি হয়েছে। মাশরাফি করেছেন ১৩ রান। তবে ৫ রানের মধ্যে দ্রুত তিনটি উইকেট পড়ে যাওয়ায় শেষ দিকে বাংলাদেশের আরো বেশি রান হওয়ার সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে। নাসির ৫৩ বলে ৪১ রান করেছেন। পানিয়াঙ্গাআর ৩ উইকেট নিয়েছেন। ২টি করে উইকেট পেয়েছেন ক্রেমার ও মুজারাবানি।
মন্তব্য করুন