বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৮ অপরাহ্ন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোনো ষড়যন্ত্র বা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের চলমান উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। সরকারের সঠিক নির্দেশনা ও পরামর্শ, জনগণের অদম্য কাজের স্পৃহা এবং প্রবাসীদের অব্যাহত সমর্থন আগামীতে বাংলাদেশকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নেবে। ২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূর করে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।
প্রধানমন্ত্রী নেদারল্যান্ডসে তাঁর তিন দিনের সরকারি সফরের শেষ দিন গত বৃহস্পতিবার রাতে কুরহাউস হোটেলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া এক সংবর্ধনা সভায় এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য বিদেশি উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে এবং বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্যও তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে আরো বলেন, বাংলাদেশ সব ক্ষেত্রে সাফল্যের সঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশকে এখন আর কেউ উপেক্ষা করতে পারছে না। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত অর্জনের পথ থেকে কোনো ষড়যন্ত্রই দেশকে বিচ্যুত করতে পারবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই সামরিক স্বৈরশাসকরা এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি বাংলাদেশে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। এসব সত্ত্বেও বাংলাদেশের জনগণ যখনই সুযোগ পেয়েছে, তখনই তারা সামনে এগিয়ে যাওয়ার এবং মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, সব ষড়যন্ত্র কাটিয়ে উঠে বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হবে।
বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা দেশের সব রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাফল্য অর্জনে অবদান রেখেছে। প্রবাসীরা বর্তমান অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং তারা চলতি বছর প্রায় ২৭.২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে।
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে লড়াই করার জন্য প্রবাসীরা সেই সময় স্যার টমাস উইলিয়ামকে পাঠিয়েছিলেন। তারা মুক্তিযুদ্ধকালে আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তুলেছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর সুইডেন ও ব্রিটেনে প্রতিবাদ জানাতে নেমে এসেছিল। তিনি বলেন, তারা জাতির পিতার হত্যাকাণ্ড তদন্ত করার জন্য টমাস উইলিয়ামকে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমান তাঁকে বাংলাদেশে আসতে দেননি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০০৮ সালের নির্বাচন হচ্ছে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন। এ নির্বাচনে দেশের জনগণ সরকার গঠনের জন্য আওয়ামী লীগকে আবার ম্যান্ডেট দিয়েছিল। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশে প্রতিটি খাতের উন্নয়নে গতি ফিরে আসে। তিনি বলেন, সরকার সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যেই প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকারের রূপকল্প বাস্তবায়নে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারি অফিসগুলোর জন্য কম্পিউটার সংগ্রহ করার বিষয়ে একটি ডাচ কম্পানির সঙ্গে সম্পাদিত একটি চুক্তি বাতিল করে দেওয়ার জন্য বিএনপির সমালোচনা করেন। ১৯৯৬-২০০১ সালের মেয়াদে বাংলাদেশ সরকার ডাচ কম্পিউটার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান টিউলিপ কম্পিউটার্স এনভির কাছ থেকে কম্পিউটার ক্রয় করার জন্য চুক্তি করেছিল। বর্তমানে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দীকের নামের সঙ্গে মিল থাকায় বিএনপি সরকার ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর এই চুক্তিটি বাতিল করে দিয়েছিল। কারণ বিএনপি সরকার মনে করেছিল টিউলিপ কম্পিউটার্স কম্পানির মালিক টিউলিপ সিদ্দীক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি সরকারের এই হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে তখন চুক্তি বাতিল করায় বাংলাদেশ সরকারকে ৩২ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হয়েছিল। দুর্নীতি ও অসৎ লোকদের জোট বিএনপি সব সময় অন্যদেরও একইভাবে বিচার করে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম বীরপ্রতীক, অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি অনীল দাশগুপ্ত, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফ এবং হল্যান্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহিদসহ প্রবাসী নেতারা বক্তব্য দেন।
প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরেছেন : নেদারল্যান্ডসে সরকারি সফর শেষে গতকাল শুক্রবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরেছেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের আমন্ত্রণে শেখ হাসিনা নেদারল্যান্ডস সফর করেছেন। নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের কোনো সরকার প্রধানের প্রথম সফরকালে ডাচ সরকার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ আতিথেয়তা দেয়। সফরকালে শেখ হাসিনা ৪ নভেম্বর ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। ফলপ্রসূ আলোচনার পর দুই দেশের মধ্যে শিক্ষা ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে চারটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট অন্য মন্ত্রীদের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি বদ্বীপ পরিকল্পনায় অর্ধশতকের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন দেশটি ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ বাস্তবায়নের জন্য আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমার সঙ্গে সৌজন্য বৈঠক হয় প্রধানমন্ত্রীর। এ সময় রানি বাংলাদেশের বিস্ময়কর সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশে বিনিয়োগ বিষয়ে ডাচ ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের সঙ্গে একটি সেমিনারে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
সূত্র : বাসস।
কালের কণ্ঠ
মন্তব্য করুন