সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৫০ পূর্বাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেক্স॥
রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধান প্রতিপক্ষ সিপিএমের বুকে শেল বিঁধিয়েই কলকাতা ছাড়লেন চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট লি ইউয়ান চাও। কারণ, লি জানিয়ে গেলেন, চীনের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা অনুযায়ী ভারতের সবচেয়ে সৎ রাজনৈতিক নেতা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীই। সেই সমীক্ষায় এই তথ্যও উঠে এসেছে যে, মমতা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। এমনকি, মমতাকে চিন সফরের আমন্ত্রণও জানিয়ে গেলেন লি। সব মিলিয়ে, এ যে উল্টা বুঝিলি রাম! কেননা, শেষ পর্যন্ত সিপিএমের মতাদর্শগত দিশারী লাল চিনের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য লি-ও মাতলেন মমতার প্রশংসায়। তা-ও আবার রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের মুখে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিউ টাউনের ইকো পার্কের গ্লাস হাউসে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তাতে যোগ দেন চীনের বিদেশ, সামাজিক সুরক্ষা, বাণিজ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের চার উপমন্ত্রীও। রাজ্যের তরফে ছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র, স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিত্ কর পুরকায়স্থ। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা বৈঠকের পর সাংবাদিকদের অমিতবাবু বলেন, ‘বৈঠকে একটা বড় ব্যাপার ঘটেছে। চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট আমাদের জানালেন যে, তাঁরা ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্বের উপর একটি সমীক্ষা করেছেন। সেই অনুযায়ী ভারতের সবচেয়ে সত্ ও পরিচ্ছন্ন নেতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধেও লাগাতার সংগ্রাম চালিয়েছেন। এমনকি, পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্পর্কেও যে চিনা নেতৃত্ব পুরোমাত্রায় সচেতন, সেটাও তিনি জানিয়েছেন।’
এ ব্যাপারে কি ভাবছেন মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা? সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘যাঁরা এসেছেন, তাঁরা অমিতবাবুকে কী বলছেন জানি না। ফলে, আন্দাজের ভিত্তিতে কোনও মন্তব্য করা ঠিক নয়। তাই এই নিয়ে কিছু বলছি না।’
এদিন চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের সুর যে সামগ্রিক ভাবে ইতিবাচকই ছিল, তার ইঙ্গিত মিলেছে সাংবাদিক বৈঠকে মমতার মন্তব্যেও। তিনি বলেন, ‘ওঁরা আমাকে চিনে যাওয়ার আমন্ত্রণও জানিয়েছেন। প্রস্তাবিত বাস কারখানায় ইতিমধ্যেই চিনের তরফে ১১ শতাংশ বিনিয়োগ হয়েছে। বছরে দেড় হাজার বাস তৈরি হবে। অটো হাব নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। পাশাপাশি, পর্যটনের বিকাশে আলোচনা হয়েছে। চিনা প্রতিনিধিরা হিউয়েন সাঙের কথাও উল্লেখ করেছেন। দু’তরফে ঐতিহাসিক যোগসূত্র তো রয়েছেই। রাজ্যে উন্নয়নমূলক নানা প্রকল্পে চিনা সরকারের এশিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যাঙ্কের থেকে আর্থিক সহায়তা নেওয়ার ব্যাপারে আমাদের উত্সাহ দিয়েছেন। এতে আমরাও আগ্রহী। পশ্চিমবঙ্গ এক্ষেত্রে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করতে চলেছে। চীনের সঙ্গে শান্তিনিকেতনের কলাভবন-সহ রাজ্যের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষাগত যোগ রয়েছে, তার সূত্র ধরে শিক্ষা হাবের বিকাশের কথাও বৈঠকে আলোচিত হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ-মায়ানমার-চিন অর্থনৈতিক করিডরের বিকাশে পশ্চিমবঙ্গের গুরুত্বের প্রসঙ্গও উঠে এসেছে বারবার। পুজোর সময় চিনা পর্যটকরা যাতে কলকাতায় আসেন, সেই অনুরোধও করেছি।’ এই ব্যাপারে মুখ্যসচিব জানান, প্রাথমিকভাবে এক হাজার চীনা পর্যটকের জন্য বিশেষ পুজো প্যাকেজ বানাতে চায় রাজ্য।
অমিতবাবু বলেন, ‘বাস কারখানাটিতে দূরপাল্লা, মাঝারি দূরত্ব ও শহরের মধ্যে চলার উপযোগী তিন ধরনের পরিবেশবন্ধু ইউরো ফোর গুণগত মানের বাস বানানো হবে। চীনা কোম্পানি জং-টঙের মতো এই কারখানায় রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমও ১১ শতাংশ বিনিয়োগ করবে।’ অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী লি-কে আসন্ন বিশ্ব বাংলা সম্মেলনে চিন থেকে বাণিজ্য প্রতিনিধিদল পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছেন। মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে চিনের সঙ্গে বাংলার সেতুবন্ধনে একটি বিশেষ কমিটি বানানোর কথাও জানিয়েছেন মমতা। চীন সরকারের তরফেও এই একই পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও তিনি সাংবাদিকদের জানান।
সূত্র: এই সময়
কালের কণ্ঠ
মন্তব্য করুন