বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১৬ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক॥
মনোরম সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে উপকূলবাসীদের রক্ষা করে আসছিল সমুদ্র পাড়ের ঝাউ বাগান। বিশ্বের দ্বীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পাড়ের নয়নাভিরাম এ ঝাউ বাগান বিলীন হয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও পূর্ণিমার জোয়ারে ঢেউয়ের তোড়ে গোড়ালী থেকে মাটি সরে গিয়ে উপড়ে পড়ছে সৌন্দর্য বর্ধনকারী এসব ঝাউগাছ। এর পাশাপাশি কিছু ঝাউ গাছ কাঠ চোর চক্রও কেটে নিয়ে যাচ্ছে।
কক্সবাজার দক্ষিন বন বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, কক্সবাজার সদর রেঞ্জের নাজিরারটেক থেকে হিমছড়ী পর্যন্ত ১৯৬১-৬২ থেকে ২০১১-১২ অর্থ সালে ৩ শত হেক্টর বালিয়াড়ীতে প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষাধিক ঝাউ গাছের চারা রোপন করা হয়। যা ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বর্তমানে ৫০ থেকে ৬০ হেক্টর বাগানে শুধুমাত্র অর্ধ লক্ষাধিক ঝাউগাছ রয়েছে। এ ছাড়াও ইনানী, হোয়াক্যং, শিলখালী ও টেকনাফ রেঞ্জের আওতাধীন ঝাউ বাগান নিশ্চিন্ন হওয়ার পথে।
প্রাপ্ত সূত্র মতে, কক্সবাজার সদর রেঞ্জের নাজিরারটেক থেকে হিমছড়ী পর্যন্ত ১৯৬১-৬২ অর্থ সালে ১২ হেক্টর বালিয়াড়ীতে প্রথমে সৃজন করা হয় ঝাউ বাগান। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজ উদ্যোগে ও আগ্রহে ঝাউ বাগানের প্রসার ঘটানো হয়। এ ঝাউ বাগান সমুদ্র পাড়ের মনোরম সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে উপকূলবাসীদের রক্ষা করে আসছিল সমুদ্র পাড়ের এ ঝাউ বাগান। তবে ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ে অর্ধেকের বেশী বাগান সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়ে পড়ে। ১৯৯১-৯২ সালে ১২ হেক্টর বালিয়াড়ীতে নতুন করে প্রায় ৩০ হাজার চারা রোপন করা হয়। ১৯৯৬-৯৭ সালে ১১৫ হেক্টর বালিয়াড়ীতে রোপন করা হয় প্রায় ৩ লক্ষাধিক ঝাউ চারা। ১৯৯৭-৯৮ সালে ৪০ হেক্টরে লক্ষাধিক চারা, ১৯৯৮-৯৯ সালে ৫ হেক্টরে সাড়ে ১২ হাজার চারা, ২০০২-০৩ সালে ৮ হেক্টরে ২০ হাজার চারা, ২০০৩-০৪ সালে ৮৭ হেক্টরে ২ লাখ ১৭ হাজার চারা ও ২০১০-১১ সালে ৫ হেক্টরে সাড়ে ১২ হাজার চারা রোপন করা হয়।
প্রতি হেক্টরে আড়াই হাজার করে প্রায় ৩ শত হেক্টরে সাড়ে ৭ লক্ষাধিক ঝাউ গাছ সৃজন করা হয়। কিন্তু প্রাকৃতিক দূর্যোগ, জোয়ারের ঢেউয়ের ধাক্কায় ভাঙ্গতে থাকে সৈকতের বালিয়াড়ী। সমুদ্র পৃষ্টের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জোয়ারের ঢেউয়ের তোড়ে গোড়া থেকে বালি সরে যায়। এতে বিলীন হতে থাকে নয়নাভিরাম ঝাউ বাগান।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৯১ সালে প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড়ে দ্বীর্ঘ সৈকতের প্রস্থে ১০০ মিটারের অধিক ঝাউ বাগান বিলীন হয়ে যায়। এর নতুন করে ঝাউ বাগান সৃজন করা হলেও ভাঙ্গন রোধ করার কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ ছাড়াও ঝাউ বাগানের পাশে অবৈধ বসবাসকারীরা রাতের আধারে ঝাউ গাছ কেটে পাচার করে আসছে। এ অবস্থায় ভাঙ্গন রোধ ও কাঠ চোরদের দমন করতে না পারলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে সৌন্ধর্য্য বর্ধনকারী ঝাউ বাগান নিশ্চিন্ন হয়ে পড়বে।
কক্সবাজার দক্ষিন বন বিভাগের সদর রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা তাপস কুমার দেব জানান, সমুদ্র পৃষ্টের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জোয়ারের ঢেউয়ের তোড়ে প্রতিনিয়তই বিলীন হচ্ছে ঝাউ বাগান। প্রতি বর্ষা মৌসুমেই ভাঙ্গন বেশী দেখা দেয়। প্রতিকূল পরিবেশের কারনে ঝাউ বাগান রক্ষা করা যাচ্ছেনা। পড়ে যাওয়া এসব গাছ সংগ্রহ করে নিয়ম মোতাবেক নিলামে বিক্রি করা হয়। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা নাজিরারটেক থেকে টেকনাফ পর্যন্ত নতুন করে ঝাউ বাগান সৃজনের উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
কক্সবাজার দক্ষিন বন বিভাগের বিভাগিয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী কবির জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক কারনে সমুদ্র পৃষ্টের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে পূর্ণিমার জোয়ারের সময় ঢেউয়ের ধাক্কায় ঝাউ গাছের গোড়া থেকে বালি মাটি সরে যাওয়ায় বিলীন হতে থাকে বাগান। প্রাকৃতিক কারনে এ ভাঙ্গন রোধ করার কোন সুযোগ বনবিভাগের নেই। তবে নতুন করে ঝাউ বাগানের পাশাপাশি নারিকেল ও খেজুর গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
মন্তব্য করুন