মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ০৩:৪৭ অপরাহ্ন
কক্সবাজার পৌরসভায় পাঁচ শতাধিক নতুনসহ তিন হাজার টমটমের লাইসেন্সের অনুমোদন দিয়েছে পৌরপ্রশাসন। অথচ বরাদ্দ দেয়া লাইসেন্সের সিংহভাগই টমটম মালিক ও চালকের হাতে পৌঁছেনি। তারা মাসিক কিংবা সাপ্তাহিক ভাড়ায় গাড়ি চালাচ্ছেন। এতে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে দাবি করেছেন চালক ও টমটম মালিক। এ অবস্থায় টমটমের মালিক নন এমন ব্যক্তিদের লাইসেন্স বাতিল করে প্রকৃত চালক ও মালিকদের হাতে লাইসেন্স তুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
তাদের অভিযোগ, সরকারি দলের সমর্থক, পৌরসভার জনপ্রতিনিধিদের নিকট আত্মীয় এবং ব্যবসায়ীদের কাছে এক বা একাধিক লাইসেন্স দিয়েছেন পৌর প্রশাসন। লাইসেন্স পাওয়া ব্যক্তিদের অনেকে দেড় লাখ থেকে এক লাখ ৮০ হাজার টাকায় লাইসেন্স বিক্রি করছেন। আবার অনেকে সপ্তাহিক বা মাসিক ভাড়ায় ব্যবসা করছেন। বিষয়টি জানার পরও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না পৌর প্রশাসন।
তবে, পৌর প্রশাসনের লাইসেন্স শাখা থেকে দাবি করা হয়েছে, প্রকৃত চালকদের হাতে টমটম লাইসেন্স তুলে দিতে কাজ করছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
তাদের দেয়া তথ্য মতে, ২০১৫-২০১৬ সাল পর্যন্ত সর্বশেষ লাইসেন্স অনুমোদন দিয়েছিলণ পৌর প্রশাসন। সে সময় যারা দায়িত্বে ছিলন তারা ২৫০০ হাজার টমটম লাইসেন্স অনুমোদন দেন। চলতি বছর নতুন করে ৫০০ লাইসেন্স অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পৌর প্রশাসন। সব মিলিয়ে তিন হাজার লাইসেন্স অনুমোদন দিয়েছে পৌর প্রশাসন। এর বাইরে কোন টমটম লাইসেন্স অনুমোদন দেয়া হয়নি। শুরুতে এসব লাইসেন্সের মূল্য ধরা হয়েছিল দেড় হাজার টাকা। বর্তমানে প্রতিটি লাইসেন্সের মূল্য নেয়া হচ্ছে ৬ হাজার ৯’শত টাকা।
পৌরসভার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পৌরসভার কাগজে কলমে তিন হাজার হলেও বাস্তবে এর সংখ্যা তিনগুন। গাড়ির মালিক না হয়ে লাইসেন্সের মালিক হওয়ার বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি পৌরসভার দায়িত্বশীল এ কর্মকর্তারা। তবে, বিষয়টি সে সময়ে দায়িত্বশীল মেয়র ও কাউন্সিলরকে দায়ি করেছেন তিনি।
টমটম চালক ও মালিকরা অভিযোগ করেছেন, পৌরসভার অনুমোদিত এসব লাইসেন্স পাওয়া সিংহভাগ ব্যক্তির টমটম নেই। এ তালিকায় রয়েছেন, রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদকর্মী, পৌর প্রশাসনে কর্মরত অনেকের নিকট আত্মীয় স্বজন। এমন কি একজনের হাতে ৫/৬ টি লাইসেন্স রয়েছে। গাড়ি না থাকায় অনেকে উচ্চ দামে গাড়ির মালিক কিংবা চালকের কাছে লাইসেন্স বিক্রি করে দিয়েছেন।
নিজেদের হাতে লাইসেন্স না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টমটম চালকরা।
শহরের আলির জাহাল এলাকার মনির নামে এক চালক বলেন, দেড় লাখ টাকা দিয়ে টমটম গাড়ি কিনেছি, কিন্তু লাইসেন্স কিনতে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধর্ণা দিয়েও লাইসেন্স পায়নি।
ফরিদ আলম নামে আরেক চালক বলেন, প্রতিদিন ২’শত টাকা করে প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে গাড়ি চালিয়ে কোন রকম জীবিকা নির্বাহ করছি। শহরের বিভিন্ন গ্যারেজের মালিকের কাছ থেকে এসব লাইসেন্স ভাড়া নিতে হয়। এ ব্যক্তির মালিকানাধীন একাধিক লাইসেন্স রয়েছে।
রফিকুল ইসলাম নামে অপর চালক বলেন, আমার নিজের কোন গাড়ি নেই। তাই দৈনিক ৭৫০ টাকায় গাড়ি ভাড়া এবং ২’শত টাকা লাইসেন্স ভাড়া নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি। এতে আয়ের সিংহভাগই চলে যাচ্ছে গাড়ি আর লাইসেন্স ভাড়ায়। অথচ প্রকৃত কোন টমটম মালিকের কাছে লাইসেন্স নেই। তবে দু’একজন ব্যতিক্রম।
এক ব্যক্তির একাধিক লাইসেন্স ও টমটম মালিকহীন ব্যক্তির কাছে লাইসেন্স থাকার নিশ্চিত করেছেন ট্রাফিক পুলিশ।
কক্সবাজার ট্রাফিক বিভাগের টিআই আমিনুর রহমান বলেন, কক্সবাজারে আমরা সবাই নতুন। ট্রাফিক বিভাগে থাকা একটি তালিকা থেকে দেখা যায় এক ব্যক্তির নামে একাধিক লাইসেন্স রয়েছে। যাদের বেশির ভাগের নিজস্ব টমটম নেই। এখন আরো ৫’শতাধিক নতুন লাইসেন্স অনুমোদন দেয়ার কথাও শোনতে পাচ্ছি।
ট্রাফিক পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, একদিকে সড়কের বেহাল অবস্থা অন্যদিকে মাত্রাতিরিক্ত টমটমের লাইসেন্স অনুমোদন দেয়ার ঘটনা দু:খজনক। এ অবস্থায় যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, যখন অবৈধ টমটমের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয় তখন রাজনৈতিক নেতা কিংবা সাংবাদিকরা তা ছাড়িয়ে নিতে তদবির করেন।
কক্সবাজার পৌরসভার লাইসেন্স পরিদর্শক প্রমথ পাল বলেন, বর্তমান পৌর প্রশাসন এখনো কোন টমটমের লাইসেন্স অনুমোদন দেননি। তবে পাঁচ শতাধিক লাইসেন্স অনুমোদন দেয়া হতে পারে। পৌরসভার নির্ধারিত ফি; এর বাইরে কোন টাকা আদায় করা হচ্ছে না। কোন ব্যক্তি নিজের লাইসেন্স যদি অন্য কাউকে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করেন তাতে পৌরসভা কিছুই করতে পারে না।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, আমার দায়িত্বকালিন সময় কোন টমটমের লাইসেন্স অনুমোদন দেয়া হয়নি। বিগত সময়ে কিভাবে, কাদের টমটম লাইসেন্স বরাদ্দ দিয়েছে তারাই ভাল বলতে পারবেন না। তাদের দেয়া লাইসেন্সের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ারও সুযোগ নেই।
মন্তব্য করুন