শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৪৬ পূর্বাহ্ন

শ্রমের মর্যদা না থাকায় শিক্ষিত যুবকরা বিদেশ যাচ্ছে!

শ্রমের মর্যদা না থাকায় শিক্ষিত যুবকরা বিদেশ যাচ্ছে!

অনলাইন বিজ্ঞাপন

শরণার্থী ত্রাণ ও পর্নবাসন অফিসের অতিরিক্ত কমিশনার খলিলুর রহমান খান বলেন, শ্রমের মর্যদা না থাকায় দেশের শিক্ষিত বেকার যুবকরা বিদেশ যাচ্ছে। অথচ বিদেশে তারা যে কাজ করছে, একই কাজ দেশে বসে করতে পারেন।

‘ইউএসএআইডি’ এর আর্থিক সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ‘ইউনরক’ আয়োজিত শনিবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে হোটেল রয়েল টিউলিপ সী পার্ল বিচ রিসোর্ট হল রুমে মানবপাচার প্রতিরোধ নিয়ে বিজিবি, র‍্যাব, পুলিশ, এনজিও সংস্থার প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি এবং সাংবাদিকদের সাথে অনুষ্ঠিত “সমন্বয় সভায়” প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে তিনি উপরোক্ত কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, মানব পাচারের মূল লক্ষ্য মুনাফা অর্জন। তাই লোভে পড়ে পাচারকারীরা নারী, পুরুষকে পাচার করে থাকে। আর পাচার হওয়া নারী পুরুষ শিশুকে জোর করে বাণিজ্যিকভাবে যৌন-শোষণ, জবরদস্তি মূলক শ্রম, জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি, ঋণ-দাসত্ব করানোর কাজে ব্যবহার করে। মানব পাচারকে পরিবর্তীত সময়ে নব্য দাস ব্যবসা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

প্রধান অতিথি বলেন, রোহিঙ্গাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করে আমরা যেটি বুঝেছি তা হচ্ছে রোহিঙ্গারা পাচার হচ্ছে না, তারা চোরাচালানের শিকার। কারণ ক্যাম্পে প্রতি দুইজন পুরুষের বিপরীতে ১ জন নারী রয়েছে। এতে অনেক সময় প্রবাসীর সাথে মোবাইল ফোনে রোহিঙ্গা নারীদের বিয়ে হয়। বিবাহিত নারীরা স্বামীর কাছে ফিরতেই তারা অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে। আর এ কাজটি করে থাকে রোহিঙ্গাদের একটি চক্র। সাথে স্থানীয় কিছু মুনাফা লোভী মানুষও কাজ করছে। তাই মানব পাচারে শুধু সচেতন হলেই হবে না, বিদেশ যাওয়ার কারণ চিহ্নিত করে প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে।

জনপ্রতিনিধি, শিক্ষিত সমাজ এগিয়ে না আসলে শুধু আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পক্ষে মানব পাচার রোধ করা সম্ভব না। আমরা যদি মানব পাচার রোধ করতে না পারি তবে, অর্থনীতিতে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ চলার পথে বাধাগ্রস্ত হবে।

এ অবস্থায় আইন প্রয়োগকারী সকল সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

‘ইউএসএআইডি’ এর আর্থিক সহযোগিতায় হোটেল রয়েল টিউলিপের হল রুমে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভার আয়োজন করেন ‘ইউনরক’।

চেম্বার অব কমার্স সভাপতি আবু মোর্মেদ চৌধুরী খোকা বলেন, যারা প্রতিরোধ কমিটিতে আছেন তাদের কঠোর হতে হবে। একই সাথে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিতে হবে। অন্যথায় মানব পাচার রোধে গৃহীত কার্যক্রমে সুফল আসবে না।

টেকনাফ ২ বিজিবির মেজর রুবাইয়েত কবির বলেন, বছরের অন্যন্য সময়ের চেয়ে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে সাগর শান্ত থাকায় মানব পাচার বেশি থাকে। এ সময়টা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে পাচারকারী চক্র পাহাড়ী জঙ্গলে এবং স্থানীয়দের বিভিন্ন বাসা বাড়িতে জমায়েত করে। এতে জনপ্রতিনিধি বা সচেতন মানুষের কাছ থেকে সঠিক তথ্য পাওয় যায়না। ফলে কারা মানব পাচারে জড়িত তাদের চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে পাচারকারীদের সম্পর্কে কিছু ধারণা পাচ্ছি।

সাগর পথে মালয়েশিয়া যাওয়া পথে উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের উদ্বৃতি দিয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা উন্নয়ন জীবনের আশায় অবৈধ পন্থায় বিদেশ যেতে চাই। অনেক সময় তারা নিজেরাই পাচারকারীদের টাকা দিয়ে যেতে চাই।

র‍্যাব ১৫ এর ইউং কমান্ডার আজিম আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গারা মানুষ, পশু না। শুধু তিন বেলা খাবার দিলেই তাদের সন্তুষ্টি করা যায় না। তারা মানুষিক ও শারীরিক প্রশান্তি চাই। তাই যেভাবে হউক বিদেশ যেতে চেষ্টা করে তারা। তবে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানব চোরা চালানের শিকার হয় তারা।

তবে দুঃখজনক, যে পরিমাণ মামলা হয়েছে সেখান থেকে একটি মাত্র মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। তারপরও আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় মানব পাচার প্রতিরোধ করবো। আশা করি মানব পাচার শুণ্যের কৌটায় নিয়ে আসবো।

কোস্ট গার্ড টেকনাফ কমান্ডিং অফিসার লেঃ কর্ণেল মোঃ মনচুর মাহাদীন বলেন, ১২০ বর্গকিলোমিটার বিশাল জলসীমায় মানব পাচার রোধ করতে কাজ করছে বিভিন্ন সংস্থা। তারপরও নানা কারণে নিয়ন্ত্রণে আনা কষ্ট হয়ে পড়ছে। আমরা সরকারি দায়িত্বের বাইরে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অতিরিক্ত কিছু দায়িত্ব পালন করি তবে সকলের চেষ্টা সফল হবে।

তিনি বলেন, সীমান্ত হওয়ার কারণে টেকনাফে মানব পাচার বেশি। মানব পাচারে তারা লাভবান হলেও সরকার ক্ষতি গ্রস্ত হচ্ছে।

চীফ অব পার্টি, বিসি/টিআইপি লিসবেথ জোনেভেল্ড এবং প্রোগ্রাম টিম লিড এইচ. এম. নজরুল ইসলাম।

উইনরক ইন্টারন্যাশনাল’র বিসি/টিআইপি প্রোগ্রামের প্রোগ্রাম টিম লিড এইচ. এম.নজরুল ইসলাম’র সঞ্চালনায় সভার সমাপনী বক্তব্য রাখেন চীফ অব পার্টি লিসবেথ জোনেভেল্ড।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
Desing & Developed BY MONTAKIM