শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:১৫ পূর্বাহ্ন

টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকান্ডে ৫৫২ ঘর ভস্মীভূত

টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকান্ডে ৫৫২ ঘর ভস্মীভূত

অনলাইন বিজ্ঞাপন

কক্সবাজারের টেকনাফের নয়াপাড়া রেজিস্টার্ড শরণার্থী ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে একটি ব্লকের রোহিঙ্গাদের ৫৫২টি সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সাথে স্থানীয় দু’টি ঘর, কমিউনিটি সেন্টারও পুড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) ভোররাতে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এমনটি জানিয়েছেন নয়াপাড়া মোচনী রেজিস্ট্রার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সিআইসি আব্দুল হান্নান।

স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিস সকাল নাগাদ আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। অগ্নিকান্ডে কারো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও ২০-২৫ জন নারী-পুরুষ আহত হয়েছেন। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার দিনগত রাত দুইটার দিকে টেকনাফ নয়াপাড়া রেজিষ্টার্ড শরণার্থী ক্যাম্পের ই-বøকের একটি ঘর থেকে আকস্মিক অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়। ঘরগুলো কাঁচা চালা হওয়ায় আগুন দ্রুত চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যেক বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার থাকায় তার অধিকাংশ বিস্ফোরণ হয়ে আগুন অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়। খবর পেয়ে টেকনাফ ফায়ার সার্ভিস ইউনিটসহ রোহিঙ্গারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। দীর্ঘ চেষ্টার পর ভোরের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাম্পের বাসিন্দা ছৈয়দুর রহমান নামে একজন বলেন, অগ্নিকান্ডে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই-ব্লকের অন্তত ৫৫২টি রোহিঙ্গা বসতি পুড়ে যায়। এসময় ইউএনএইচসিআরের একটি কমিউনিটি সেন্টার এবং পার্শ্ববর্তী ২টি স্থানীয় লোকের বসত ঘরও আগুনে পুড়ে ছাঁই হয়ে গেছে। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী ভাসমান আরো কিছু ঝুপড়ি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে বেশ কয়েকজন দাবি করেন।

ধারণা করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার থেকে এই অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হতে পারে। আবার অনেকে মনে করছেন হয়তো সিগারেট বা কয়েল থেকেও অগ্নিকান্ড ঘটেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মতে, পরনের কাপড় ছাড়া অন্য কোন পণ্য বের করা সম্ভব হয়নি। ফলে স্বর্ণালংকারসহ বাড়ির বিভিন্ন পণ্য পুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। টাকার অংকে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা।

ক্যাম্প এলাকায় কাজ করা শৃংখলা বাহিনী সূত্র জানায়, নয়াপাড়া আর্মি ক্যাম্প অধীনস্থ রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প মুচনী (রেজিস্টার) বিকাশ মোড় ও মাকরাজ মসজিদ সংলগ্ন স্থান ব্লক-ই ,শেড নং (৯৭৫) ও ঘর নং ১/২ রোহিঙ্গা শরণার্থী মৃত মো. নুর কবিরের ঘর থেকে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। মুহুর্তে ব্লক-ই, ব্লক-বি,ব্লক-ডি ও বি ব্লকের দোকান ঘরে ছড়িয়ে যায়। খবর পেয়ে টেকনাফ ও উখিয়ার ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় সম্মিলিত পচেষ্টায় প্রায় ৩ ঘন্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কোন নিহত না হলেও ৮৬টি শেডের আনুমানিক ৬০০ ঘর পুড়ে বিপুল পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘটনাস্থলে আর্মিড পুলিশ, আনসার, ফায়ার সার্ভিস, সিআইসি অবস্থান করে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের সান্তনা দিচ্ছেন।

নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পের ইনচার্জ আব্দুল হান্নান অগ্নিকান্ডের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ভোর রাতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটায় কিভাবে তা ঘটলো এখনো জানা যায়নি। হিসাব মতে আগুনে ৫৫২ শতাধিক রোহিঙ্গা ঘর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কিছু দোকানপাট পুড়ে থাকতেও পারে, সেগুলো ক্যাম্পের ঘর হিসেবে গণ্য নয়। ক্ষতিগ্রস্তদের পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে রাত যাপনের ব্যবস্থা করার প্রচেষ্টা চলছে। তাদের জন্য নিয়মানুসারে আবারও ঘর করা হবে। অগ্নিকান্ডের প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে, ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে বেলা ১০ টার দিকে কক্সবাজার ত্রাণ শরণার্থী ও পুনর্বাসন বিষয়ক কমিশনার (আরআরআরসি) শাহ রেজওয়ান হায়াতসহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
Desing & Developed BY MONTAKIM