বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩২ পূর্বাহ্ন
কক্সবাজার টেকনাফে ঘোষণা দিয়ে হত্যা মামলার বাদির ঘর পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার (৪জানুয়ারী) দিনগত রাত আড়াই টায় টেকনাফের রঙ্গিখালীর হৃীলা মাদ্রাসা পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
বাড়িতে আগুন লাগার খবর পেয়ে টেকনাফ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ষ্টেশনের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় এক ঘন্টা প্রচেষ্টায় আগুণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও তার আগেই বাড়িটি পুড়ে ছাই হয়ে যায় বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
অভিযোগ উঠেছে, তৎকালীন টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশের সহযোগী হিসেবে আলোচিত সন্ত্রাসী গিয়াস বাহিনীর সদস্যরা ঘোষণা দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। পুড়িয়ে দেয়া ঘরটি মৃত স্থানীয় আবদুল মজিদের। বাড়িটিতে তার ছেলেরা থাকতেন।
আবদুল মজিদের মেয়ে রহিমা বেগম জানান, তার ভাই শাহ আলমকে হত্যার উদ্দেশ্যে দিবাগত রাত আনুমানিক আড়াই টায় ডাকাত গিয়াসের নেতৃত্বে, ১০থেকে ১৫জনের একটি চিহৃত ডাকাতের দল অস্ত্র সজ্জিত হয়ে তাদের বাড়িটা ঘেরাও করেন।
বাড়িতে পুরুষ সদস্যদের অনুপস্থিত জানতে পেরে সন্ত্রাসীরা বাড়ির চতুরপাশে আগুন ধরিয়ে দেন। এসময় বাড়িতে থাকা মহিলাদের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
রহিমার দাবি, বিভিন্ন সময় তার তিন ভাইসহ পরিবারের ৬জনের হত্যা মামলার আসামী সন্ত্রাসী গিয়াসের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী বোরহান উদ্দিন প্রকাশ আম্মুনি ডাকাত, লুতফুর রহমান, আনোয়ার হোছন ওরফে লেডাইয়া ডাকাত, মিজানুর রহমান প্রকাশ বাগাসসা, রেজাউল করিম প্রকাশ পুতুয়া, সালমান, গোরা মিয়া, বেলাল উদ্দিন, মাঈন উদ্দিনসহ আরও কয়েকজন আগুন দেয়ার ঘটনায় জড়িত।
রহিমার আরও জানান, গত কয়েকদিন আগে ভাই শাহ আলমস ১০জনকে হত্যা করার ঘোষণা দিয়েছে গিয়াস বাহিনীর সদস্যরা। তারা সবাই গিয়াস বাহিনীর সদস্যের করা মামলার বাদি। হুমকির বিষয়টি পুলিশকে অবগত করা হয়েছিল। বাড়িতে আগুণ দেয়ার ঘটনায় সোমবার দুপুরে টেকনাফে থানায় একটি এহজার দেয়া হয়েছে বলে জানান রহিমা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময় স্থানীয় মজিদের ৩ ছেলেসহ ১৩জকে হত্যা করেছে সন্ত্রাসী গিয়াস বাহিনীর সদস্যরা। এ বাহিনীতে সক্রিয় ৩০জন সদস্য রয়েছে। তাদের প্রত্যেকের নামে ১০থেকে ২০টি পর্যন্ত মামলা রয়েছে। অধিকাংশ মামলায় হত্যা,ডাকাতি, চাঁদাবাজি ইত্যাদি।চাঁদা না দেয়া ও বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী কার্যকলাপ প্রতিরোধ করার কারনে তাদের হত্যা করা হয়।
পরে এসব মামলার বাদি ও সাক্ষীদের উল্টো মিথ্যা মামলা দিয়ে ঘর ছড়া করেন সন্ত্রাসীরা।তবে গত কিছুদিন পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের আশ্বাস পেয়ে ভুক্তভোগী কয়েকটি পরিবারের সদস্যরা এলাকায় ফিরে আসেন। কিন্তুু বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি সন্ত্রাসীরা।
মোঃ আলম, জাকেরসহ একাধিক ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, গেল বছরের ২৫ ডিসেম্বর থেকে সম্প্রতি পুলিশের আশ্বাসে এলাকায় ফিরে আসায় তাদের পরিবারের সদস্য ও মামলার বাদি ও সাক্ষীদের ঘরে ঘরে গিয়ে এলাকা না ছাড়লে ১০দিনের মধ্যে ঘরবাড়িতে আগুন ও পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে।
বিষয়টি পুলিশকে জানালেও তারা কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি। যার প্রেক্ষিতে বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।
বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় এজাহার পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, হত্যা মামলার বাদি ও সাক্ষীদের হুমকি ধমকি ও বাড়িতে আগুন দেয়ার বিষয়টি তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে অভিযোগ পাওয়া গেছে, টেকনাফ পুলিশের কয়েকজন অফিসারের সাথে সন্ত্রাসী গিয়াস বাহিনীর সদস্যদের সু-সম্পর্ক রয়েছে। যার কারনে মিথ্যা মামলা দিয়ে উল্টো হয়রানি করছে পুলিশ।
জানা গেছে, গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর প্রবাসী মো. তৈয়বকে (৩৮) ঘোষণা দিয়ে প্রকাশ্যে দিবালোকে বাড়িতে ঢুকে গুলি করে হত্যা করে লাশের উপর দাঁড়িয়ে উল্লাস করে গিয়াসসহ তার বাহিনীর সদস্যরা। দাবিকৃত চাঁদা না দিয়ে গণমাধ্যমের কাছে প্রকাশ করায় তাকে হত্যা করা হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এ ঘটনায় গিয়াসকে প্রধান আসামি করে ২৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে নিহতের পরিবার।
কিন্তুু আসামীদের গ্রেফতার না করে উল্টো ডাকাত গিয়াসের ঘরপুড়ানোর মিথ্যা মামলায় নিহতের ভাই জাকেরকে জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
অথছ এ বিষয়ে তদন্ত আসলে স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা সন্ত্রাসী গিয়াসের ঘর পুড়ানো দাবি মিথ্যা দাবি করে লিখিতভাবে থানা ও আদালতকে জানিয়েছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকর্মকর্তা এসআই মিল্টন তার সাথে গিয়াস বাহিনীর কোন সম্পর্ক নাই দাবি করেন। তবে ভুক্তভোগীদের মিথ্যা মামলার দিয়ে কারাগারে পাঠানোর বিষয়ে কোন জবাব না দিয়ে প্রতিবেদককে তার সাথে বসার প্রস্তাব দেন।
ভুক্তভোগী পরিবারের বিরুদ্ধে গত কয়েকমাসে দায়ের করা একাধিক মামলা ও হয়রানির বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা যেভাবে রিপোর্ট দিয়েছে সেভাবে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এর বাইরে আমি যেতে পারিনা।
এ বিষয়ে অবগত করে জানতে চাইলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারকে হয়রানির বিষয়টি তদন্ত করে খুব দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঘটনা সত্য হলে ভুক্তভোগীদের মামলা থেকে রেহাই দেয়া হবে।
তিনি বলেন, কক্সবাজারের গিয়াস বাহিনীর মত বড় সন্ত্রাসী গ্রুপ গুলোকে ধরতে খুব শ্রিঘ্রই বড় ধরনের অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ বিষয়ে অলরেডি একটা নির্দেশনা এসেছে উপর থেকে।
গিয়াস বাহিনীর বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা যত বড় বা গ্রুপ হোক না কেন তাদেরকে আইনের আওয়াতায় আনা হবে। তাদের সহযোগী হিসেবে কোন পুলিশ সদস্যের নাম আসলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য করুন