বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:০৫ পূর্বাহ্ন
আলোকিত কক্সবাজার ডেক্স
নেপাল, ভুটান ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আট মহাসড়কের ৬০০ কিলোমিটার সড়ক যুক্ত হতে যাচ্ছে। কাজটি আরও একধাপ এগিয়ে গেলো। সড়কগুলোর ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি ও ডিটেইল্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নকশা প্রণয়নের জন্য ৫০ কোটি ৮১ লাখ টাকা অনুমোদন দিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।
এতে করে চার দেশীয় সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ আরও এক ধাপ এগিয়ে নতুন মাত্রা পেলো, এমনটাই মনে করছে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ। এ নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেন, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএন সিদ্দিক। তিনি বলেন, নকশা প্রণয়নের জন্য যদি ৫০ কোটি ৮১ লাখ টাকা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় অনুমোদন করে তাহলে পরিষ্কারভাবে আমরা বলতে পারি আরও একধাপ এগিয়ে গেলাম। নকশা ও ফিজিবিলি স্ট্যাডির কাজ শেষ হলেই নানা প্রকল্প হাতে নিতে পারবো। চার দেশের সঙ্গে সংযোগ সড়ক নির্মাণে অনেক উন্নয়ন সহযোগী আসতে চাচ্ছেন বলেও মত দেন তিনি।
তিনি বাংলানিউজকে আরও বলেন, আমরা পর্যায়ক্রমে সড়কগুলো ফোরলেনে নিয়ে যাবো। ইতোমধ্যেই ১ হাজার ৫০১ কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর উভয়পাশে এপ্রোচ সড়ক ফোরলেনে উন্নীত করতে যাচ্ছি। সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল, রংপুরের বুড়িমারী পর্যন্ত ২৯৫ কিলোমিটার সড়ক ফোরলেনে উন্নীতকরণ কাজ আগেই শুরু হয়ে গেছে। বাকি সড়কগুলো ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ফোরলেনে নেওয়া হবে।
কবে নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ৬০০ কিলোমিটার ফোরলেনে নিয়ে যাওয়া অনেক সময়ের ব্যাপার। তবে নকশার কাজ শেষ হলে পর্যায়ক্রমে ফোরলেন হবে।
এশিয়ান হাইওয়ে সাউথ এশিয়া সাব রিজিয়নাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) ও বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মায়ানমারের মধ্যে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক করিডরে (বিসিআইএম) এই নকশা করা হবে। দুই লেন থেকে চারলেন এমনকি স্থান ভেদে ছয় লেনেও রূপান্তর করা হবে সড়কগুলো।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে জানা যায়, টেকনিক্যাল অ্যাসিসটেন্স ফর সাব-রিজিওনাল রোড ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট প্রিপারেটরি ফ্যাসিলিটি’র আওতায় নকশা প্রণয়ন করা হবে। এই প্রকল্পে মোট ব্যয় হচ্ছে ৫০ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এতে ৩৫ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেবে বাংলাদেশ। প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ জুলাই ২০১৫ থেকে জুন ২০১৮ সাল নাগাদ। এর আওতায় ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি ও ডিটেইল্ড ডিজাইন করার জন্য পরামর্শক নিয়োগ বাবদ ৪৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয় বেঁধে দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
প্রকল্পের আওতায় ৪৪৪ জন পরামর্শক, ৭ জন ইন্ডিভিজ্যুয়াল দেশীয় পরামর্শক নিয়োগ, যানবাহন ক্রয়, প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিটির জন্য বেতন, অফিস একোমোডেশন, জ্বালানি, স্টাফ আউটসোর্সিং, কম্পিউটার ও অফিস সরঞ্জাম কেনা হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা খাতে ২ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। এছাড়া অফিস ভাড়া, যানবাহন খরচ, ইন্টারনেট বিল, বাবদ এক কোটি ৮৭ লাখ টাকা সংস্থান রাখা হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় দক্ষিণ এশীয় দেশসমূহ; বিশেষ করে নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অংশের মধ্যে অভিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা হবে। এ ধরনের উপ-আঞ্চলিক ব্যবস্থায় পরিবহন ও ট্রানশিপমেন্ট সেন্টার হিসেবে বাংলাদেশের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া এশিয়ান হাইওয়ে বাস্তবায়নে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), বিশ্বব্যাংক, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও ফ্রান্স অর্থায়ন করতে চেয়েছে। এশিয়ান হাইওয়েভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সড়ক উন্নয়নে সবচেয়ে এগিয়ে চীন, জাপান, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক ও মালয়েশিয়া। ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডও সংশ্লিষ্ট সড়কগুলো দ্রুত উন্নয়ন করছে।
যে আটটি মহাসড়ক যুক্ত হচ্ছে এশিয়ান হাইওয়ে এর মধ্যে প্রথমে রয়েছে ফরিদপুরের ভাঙ্গা-ভাটিয়াপাড়া-কালনা-লোহাগড়া-নড়াইল, যশোরের বেনাপোল হয়ে ভারত। প্রথম করিডরের দৈর্ঘ্য ১৩৫ কিলোমিটার। এই রুট ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ব্যবসা ও বাণিজ্য প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
দ্বিতীয় করিডর: রংপুর-সৈয়দপুর-বাংলাবন্ধা হয়ে ভারতে প্রবেশ। এর মোট দৈর্ঘ্য ১০৫ কিলোমিটার। ভুটান ও নেপালের সঙ্গে বাণিজ্য প্রসারে এই করিডরটি অন্যতম অবদান রাখবে। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্য সহজ করতেও রুটটি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে কাজ করবে।
তৃতীয় করিডর: এর মোট দৈর্ঘ্য মাত্র ১০ কিলোমিটার। এটি দক্ষিণের পটুয়াখালীর খেপুপাড়া-পায়রাবন্দর হয়ে ভারতে প্রবেশ করছে। এটিও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক প্রসারের পাশাপাশি ভুটান ও নেপালের সঙ্গে আঞ্চলিক যোগাযোগে অবদান রাখবে।
চতুর্থ করিডর: এই রুটের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ কিলোমিটার। সিলেটের চরখাই-শেওলা-সূত্রাকান্দি হয়ে ভারতে প্রবেশ। এই রুট আঞ্চলিক ব্যবসা প্রসার অন্যতম অবদান রাখবে।
পঞ্চম করিডর: এটি চট্টগ্রাম একসেস রোড। এর দৈর্ঘ্য মাত্র ১৪ কিলোমিটার। এই করিডরের মাধ্যমে সমুদ্র পথে বাংলাদেশের সঙ্গে এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক প্রসার বৃদ্ধি পাবে।
ষষ্ঠ করিডর: এই রুটটি হচ্ছে সাভার নবীনগর থেকে পাটুরিয়া রোড পর্যন্ত। যার মোট দৈর্ঘ্য ৫৮ কিলোমিটার। দেশের অভ্যান্তরীণ ও আঞ্চলিক বাণিজ্যিক প্রসারে অন্যান্য করিডরের রুটকে সহায়তা করাই অন্যতম উদ্দেশ্য। তবে সরাসরি এই রুটটি অন্য দেশের সঙ্গে যুক্ত নয়।
সপ্তম করিডর: এই রুটের দৈর্ঘ্য ১৭২ কিলোমিটার। এটি নাটোর বনপড়া- ঈশ্বরদী-পাকশি-কুষ্টিয়া হয়ে ঝিনাইদহে মিলিত হয়েছে। এটিও অন্যান্য রুটের সহায়ক হিসেবে আঞ্চলিক যোগাযোগে অন্যতম অবদান রাখবে।
অষ্টম করিডর: এর মোট দৈর্ঘ্য ৬০ কিলোমিটার। এটি রংপুরের পাগলাপীর–ধালীয়া-বারখাতা হয়ে ভারতে প্রবেশ করবে। এই করিডরের মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল এবং ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগ উন্নত হবে।
নানা কারণে প্রকল্পটি দ্রুত হাতে নেওয়া হচ্ছে বলে জানায় সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ। বিশ্বের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্পন্ন অঞ্চলসমূহের মধ্যে দক্ষিণ এশীয় অন্যতম। সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ মনে করছে, বিশ্ব বাণিজ্যের তুলনায় দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য তুলনামূলক কম। এ লক্ষে মুক্ত বাণিজ্যের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো অনুন্নত দেশে বিনিয়োগের প্রসার ত্বরান্বিত হওয়া প্রয়োজন।
মন্তব্য করুন