মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫০ অপরাহ্ন
আলোকিত কক্সবাজার ডেক্স॥
সম্প্রতি দেশের স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো রাজনৈতিকভাবে দলীয় পরিচয়ে অনুষ্ঠিত করার ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সরকারের পক্ষ থেকেও বিষয়টিতে সমর্থন দেওয়া হয়েছে। তবে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিচয়ে এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এখনো দলীয় পরিচয়ে স্থানীয় নির্বাচনের সময় হয়নি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় প্রতিনিধিরা।
অনেকেই দলীয় ব্যানারে স্থানীয় নির্বাচন করার বিরোধীতা করলেও, এর পক্ষে রায় দিয়েছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব) এম সাখাওয়াত হোসেন।
তিনি বলেন, দেশে নির্দলীয়র নামে এতোদিন ধরে হঠকারিতার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। প্রধান প্রার্থীরা সবাই প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতো। আর এটা এমন ছিল না যে লুকোচুরির ব্যাপার।
সর্বশেষ ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি।
মিউনিসিপ্যাল অ্যাসোসেয়িশন অব বাংলাদেশের আয়োজনে ‘দলীয় পরিচয়ে স্থায়ী নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় রোববার (২৫ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এ মত ব্যক্ত করেন তিনি।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচন করার জন্য প্রার্থী এবং ভোটাররা প্রস্তুত কিনা, সেটা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ গত কয়েক বছরে মানুষ ভোটের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ‘বাজে’ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি বলেন, দলীয় নির্বাচনের যৌক্তিকতা থাকলেও এখন সময় নয়। আমেরিকা-ভারতের উদাহরণ দিয়ে লাভ নেই। তাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে জবাবদিহিতা রয়েছে, আমাদের নেই।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে ইউনিয়ন কাউন্সিল নির্বাচন সম্পন্ন করা কঠিন। কারণ এখানে এক বাড়িতেই একাধিক প্রার্থী থাকে। এছাড়াও বর্তমান সময়ে এ ধরনের মনোনয়নের কারণে দলগুলোর ভেতরেই বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে বলে ধারণা করা যায়।
প্রার্থীদের মনোনিত করার পর ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় এক কোটি ব্যালট পেপার তৈরিও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে জানান তিনি।
সুশাসনের জন্যে নাগরিক’র (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচনের ফল হবে ভয়াবহ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরে যেটুকু গণতন্ত্র রয়েছে, দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সেটুকুও কবর দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, টিআইবি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে রাজনৈতিক দল। এ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হলে অন্য দলের প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। নারীর ক্ষমতায়নে বাধা হয়ে দাঁড়াবে এ প্রক্রিয়া।
স্টেপস টুওয়ার্ডস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার বলেন, স্থানীয়ভাবে ভোটার এবং প্রার্থীরা এখনো মানসিকভাবে ও রাজনৈতিকভাবে দলীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত নয়। এ পর্যায়ে এ ধরনের নির্বাচনের ফলে দলের চেয়েও ব্যক্তির প্রভাব বেশি থাকবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
মিউনিসিপ্যাল অ্যাসোসেয়িশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব শামীম আল রাজিবের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদ ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক আতাউর রহমান আতা, দৌলতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশা নূর বিশ্বাস, কুষ্টিয়া পৌরসভা কাউন্সিলর লিনা নাসরিন, মাদারিপুরের কাউন্সিলর সাইদা সালমা প্রমুখ।
মন্তব্য করুন