বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন

নিজেই তরুণীকে ৬৪বার ধর্ষণের তথ্য জানালেন সাবেক শিবির ক্যাডার

নিজেই তরুণীকে ৬৪বার ধর্ষণের তথ্য জানালেন সাবেক শিবির ক্যাডার

অনলাইন বিজ্ঞাপন

ব্লেকমেইলের মাধ্যমে বার বার ধর্ষণে অতিষ্ঠ হয়ে কলেজে পড়ুয়া তরুণী যোগাযোগ বিছিন্ন রাখায় পিতাকে ফোন করে এক ঘন্টার জন্য নিজের মেয়েকে তার কাছে পাঠানোর প্রস্তাব দেন মঈন উদ্দীন হাসান ওরফে বাঁধন নামের এক কুখ্যাত ধর্ষক। এসময় পিতার কাছে মেয়েকে ৬৪ বার ধর্ষণের বর্ণনা দিয়ে তা ২১বার ভিডিওর ধারণ করা হয়েছে উল্লেখ করে তা ফিল্ম আকারে নেটে দুনিয়ায় ভাইরাল করে দেয়ার হুমকি দেন এ ধর্ষক।

এ ঘটনায় অসহায় পরিবারটি সামাজিকভাবে যে প্রতিপন্ন হবার ভয়ে তা প্রকাশ না করলেও মানুষিক ভাবে ভেঙে পড়ে। এবং স্বপরিবারে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।

এটি বাংলা সিনেমার কোন গল্প নয়, দুর্ধর্ষ ধর্ষক বাঁধনের নিজের মুখের ধর্ষণের সহজ স্বীকারোক্তি।হুমকি ও কথোপকথনের অডিও প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

ভয়ংকর ধর্ষক মঈন উদ্দীন হাসান ওরফে বাধঁন চট্রগ্রামের লোহাগাড়া বড় হাতিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড লস্কর পাড়ার মৃত ওবাইদুল হাকিমের ছেলে। লোহাগাড়ার একসময় দাপটে শিবির ক্যাড়ার হিসেবে পরিচিত ছিলেন বাঁধন। কিন্তু নারী কেলেংকারির কারনে তাকে শিবির থেকে বহিষ্কার করা হয় বলে জানাগেছে।

ভুক্তভোগী পরিবারটি কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার। নির্যাতিতা মেয়েটির অসহায় পিতা বলেন, ২০১৭সালে সালে বাঁধনের সঙ্গে মোবাইলে আমার রং নাম্বারে পরিচয় হয়। এর সূত্রধরে সে কুতুবদিয়া মালেক শাহ হুজুরের মাজারে আসলে সেখান থেকে আমার বাড়িতেও আসেন।

তিনি আরও বলেন,বাঁধন লোহাগাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান জসিম উদ্দীনের ভাগিনা ও বাচ্চু মিয়ার ভাতিজা পরিচয় দিয়ে নিজেকে অবিবাহিত দাবি করে আমার কলেজে পড়ুয়া মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। এক পর্যায়ে তার বাবা মা ও ভাই বন্ধু পরিচয়ে কয়েকজন আমার বাড়িতে মেয়ে দেখতে আসেন এবং পছন্দ করেন। ওই সময় কাতার প্রবাসি বাঁধনের মেজ ভাই ফোনে দিন তারিখ ঠিকঠাক করবেন বলে জানিয়ে চলে যায় তারা। এর পরেই এ লম্পটের থাবা শুরু।

ভুক্তভোগী মেয়েটি জানান, কাতার প্রবাসী বাঁধনের ভাই দেশে আসলে বিয়ের অপেক্ষার এক পর্যায়ে মোবাইলে বাধনের সঙ্গে সু-সম্পর্ক গড়ে উঠে। ২০১৯সালের প্রথম দিকে বাঁধন তাদের বাড়িতে আসেন। বাবা মায়ের অনুপস্থিতির সুযোগে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন।এবং তার অজান্তে মোবাইলে অশ্লীল ভিডিও ধারণ করেন। বিয়ে হয়ে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে বলে লম্পট বাঁধন কাউকে কিছু না জানাতে মেয়েটিকে অনুরোধ করেন।

নির্যাতিতা মেয়েটি জানান, বাঁধনের চরিত্র খারাপ দেখে তার ব্যাপারে খোঁজ নিতে বাঁধনের এলাকায় যান তার পিতা। কিন্তু বাঁধন জরুরী কাজে ঢাকায় গেছেন জানিয়ে আর দেখা করেননি। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন বাঁধন ২০০৭সালে বিয়ে করেছেন এবং তার দুটি ছেলে মেয়ে আছে।তাকে দেখতে আসা মা’ বাবা’ ঠিকানা অনুযায়ী বাড়িঘর,ও প্রবাসি ভাই,সব ছিল বাঁধনের সাজানো নাটক।অভিভাবক নাটকের অডিও সংরক্ষিত আছে। এত কিছু সামনে আসলেও লম্পট বাঁধনের হাত থেকে মুক্তি মিলেনি মেয়েটি।

ভুক্তভোগী মেয়েটির অভিযোগ ধর্ষণের অশ্লীল ভিডিও ফাঁস করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে দিনের পর দিন ব্লেকমেইল করে ধর্ষক বাঁধনের ডাকে সাড়া দিতে বাধ্য করেন।এবং তাকে মুক্তি দেয়ার আশ্বাসে পর্যাক্রমে প্রায় ৫ লাখ টাকা নেন বাঁধন।মুক্তির বদলে ভেঙে দেন তার চুপিসারে ঠিক হওয়া ৫টি বিয়ে।একসময় অতিষ্ঠ হয়ে তিনি মোবাইল ফোন হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার বন্ধ করে দেন।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্বয়ং মেয়েটির জন্মদাতা পিতার কাছে ফোন করে অশ্লীল ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে এক ঘন্টার জন্য তার কাছে মেয়েকে পাঠানোর প্রস্তাব দেন লম্পট বাঁধন।তাতে কাজ না হওয়ায় কথামত একাধিক ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে তরুনীর অশ্লীল ছবি পোস্ট করেন।

এরই প্রক্ষিতে নির্যাতিতা মেয়েটির পিতা ২০২০ সালের ১৯-১-২০২০ ইংরেজিতে এবং মেয়েটি নিজেই ২-২-২০২০ ইংরেজিতে পৃথক সাধারণ ডায়রী করলে চাপে পড়ে অল্পদিনের মধ্যে সৌদি আরবে পালিয়ে যান এই লম্পট।সেখানে গিয়ে আরও হিংস্র হয়ে ওঠে সে।

সৌদিতে বসে মোবাইলে ভুক্তভোগী স্বপরিবারে হত্যার পাশাপাশি মেয়েটির অশ্লীল ভিডিও এবং ছবি পাঠিয়েছেন কয়েকজন লম্পট ব্ল্যাকমেলারদের কাছে।তারাও অসহায় মেয়েটিকে ভিডিও ফাঁস করার ভয়ে দেখি কু-প্রস্তাব দেন।তাদে রাজি না হলে দাবি করছেন মোটা অংকের টাকা।এই অডিও রেকর্ডও সংরক্ষিত আছে।

এমতাবস্থায় অসহায় পরিবারটি প্রধামন্ত্রী ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সু-বিচার দাবি করে পরিবারটিতে একাধিক উপযুক্ত মেয়ে থাকায় তাদের পরিচয় প্রকাশ না করার জন্য গণমাধ্যম এবং প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান।

লম্পট বাঁধনের ইতিহাস এখানে শেষ নয়। একইভাবে আরও একাধিক মেয়ের সর্বনাশের পাশাপাশি স্বর্ণালংকার ও টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

অভিযুক্ত বাধঁন,হোয়াটসঅ্যাপে প্রতিবেদককে তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করা হলে মেয়েটির সমস্ত অশ্লীল ভিডিও দেশের সব টিভি চ্যানেলে প্রচার করা হবে বলে হুমকি দেন।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, পরিবারটিকে সর্বোচ্চ আইনি সহায়তা প্রদান করা হবে। পাশাপাশি প্রচলিত আইন অনুযায়ী এই লম্পট এর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। তিনি নিকটতম থানায় সংশ্লিষ্ট আইনে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা করতে পরিবারটিকে অনুরোধ জানান।

কুতুবদিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি দিদারুল ফেরদৌস বলেন,পরিবারটি জিডি করেছিল ঠিক, কিন্তু এতকিছু কখনো বলেনি। তিনি ভুক্তভোগী পরিবারকে সর্বোচ্চ আইনি সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
Desing & Developed BY MONTAKIM